Advertisement
০৮ মে ২০২৪

কমিশনের দাপটে ‘ভূতেরা’ জব্দ, বুথে বুথে মানুষের রাজ কায়েম

ভোট শুরু হতেই উৎপাতের চেষ্টায় ভূত-বাহিনী। ভবানীপুর হোক বা ভাঙড়, খানাকুল হোক বা আরামবাগ— সাত সকালেই ভুতুড়ে কাণ্ডকারখানা দেখাতে তৎপর শাসক দলের ভোট ম্যানেজাররা। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ভোট ম্যানেজাররাও কম যাচ্ছেন না।

লর্ড সিন্‌হা রোডের একটি বুথে ভোটারদের লাইন। —নিজস্ব চিত্র।

লর্ড সিন্‌হা রোডের একটি বুথে ভোটারদের লাইন। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৬ ১০:৩১
Share: Save:

ভোট শুরু হতেই উৎপাতের চেষ্টায় ভূত-বাহিনী। ভবানীপুর হোক বা ভাঙড়, খানাকুল হোক বা আরামবাগ— সাত সকালেই ভুতুড়ে কাণ্ডকারখানা দেখাতে তৎপর শাসক দলের ভোট ম্যানেজাররা। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ভোট ম্যানেজাররাও কম যাচ্ছেন না। আগের দফা বা তার আগের দফার ভোটগ্রহণের মতোই সর্বত্র তৎপর পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাই সাতগাছিয়ায় আঙুল উঁচিয়ে ডেপুটি স্পিকারের শাসানি বা দলবল নিয়ে টালিগঞ্জে তৃণমূল কাউন্সিলরের বুথ দখলের চেষ্টা, সবই নিষ্ফলা সকাল থেকে।

সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা অবশ্য শুক্রবার রাত থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। বেহালা পূর্বের জোট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অম্বিকেশ মহাপাত্রের এক পোলিং এজেন্টের বাড়িতে শুক্রবার রাতেই হামলা হয়েছে। ১৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওই পোলিং এজেন্ট অসীম পাত্র সে সময় বাড়ি ছিলেন না। তাঁর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। স্ত্রী এবং মেয়েকে ধর্ষণের হুমকিও দেওয়া হয়। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান অম্বিকেশ। তাঁর অভিযোগ, বেহালা পূর্বের তৃণমূল প্রার্থী শোভন চট্টোপাধ্যায় গোটা এলাকাতেই সন্ত্রাস ছড়াতে চাইছেন।

ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার দুপুর থেকেই তল্লাশি শুরু করেছিল পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। টহলদারিও শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভবানীপুর এবং কলকাতা বন্দরের বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকেই বুথের সামনে অবৈধ জমায়েত করতে শুরু করে তৃণমূলের লোকজন। কেন্দ্রীয় বাহিনী বিন্দুমাত্র শিথিলতা দেখায়নি কোথাও। জমায়েত দেখলেই হঠিয়ে দিয়েছে। বচসায় জড়িয়ে উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা করলেই হয়েছে লাঠিচার্জ।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় থেকে দুষ্কৃতীদের কসবায় ঢোকানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে খবর পেয়েছিল প্রশাসন। সঙ্গে সঙ্গে বাসন্তী হাইওয়ের উপর বানতলা এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী তল্লাশি শুরু করে। সব রকমের গাড়ি রাস্তায় দাঁড় করিয়ে তল্লাশি শুরু হয়।

খিদিরপুর, তিলজলা, টালিগঞ্জের বেশ কিছু ভোটকেন্দ্রের সামনেও অবৈধ জমায়েতের চেষ্টা হয়েছে সকাল থেকে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। হঠিয়ে দেওয়া হয়েছে জমায়েত। টালিগঞ্জে জমায়েত হঠাতে গেলে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বাধা দেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তপন দাশগুপ্ত। বাহিনীর সঙ্গে তিনি বচসায় জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।

আরও খবর পড়তে ক্লিক করুন
সোনালি অতীত এবং সোনালি বর্তমান

কলকাতার বাইরে অবশ্য সর্বত্র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই। ভাঙড়ের বিভিন্ন বুথ থেকে বাম এজেন্টদের মেরে বার বার করে দেওয়ার অভিযোগ শোনা গিয়েছে। একই অভিযোগ এসেছে হুলির খানাকুল থেকে। আরামবাগে এক বাম এজেন্টের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাতগাছিয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে অশান্তিতে জড়িয়েছেন ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিদায়ী ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ। একটি ভোটকেন্দ্রে ঢুকে সোনালি ইভিএম-এর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান তাঁকে বাধা দেন। তা নিয়েই শুরু হয় বচসা। সোনালি আঙুল উঁচিয়ে শাসানি দিয়েও ইভিএম পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। এর পর অন্য একটি বুথের এক তৃণমূল কর্মীকে ফোন করে সোনালি সেই বুথ থেকে বামেদের এজেন্টকে মেরে বার করে দেওয়ার নির্দেশও দেন। সোনালি গুহর এই নির্দেশ প্রবল বিতর্ক ছড়িয়েছে।

যাদবপুরের একটি বুথে ভুয়ো ভোটারকে চিহ্নিত করে বুথ থেকে বার করে দিয়েছে পুলিশ। এক মহিলা ভোটারকে দেখে সন্দেহ হওয়ায় পরিচয় পত্র দেখতে চায় পুলিষ। তিনি দেখাতে পারেননি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বুথ থেকে বার করে দেওয়া হয়। যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী মণীশ গুপ্তর সঙ্গে বুথে ঢুকতে চাওয়া বহিরাগতদেরও এ দিন আটকে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE