Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নারদ-ফুটেজ জনসমাজে প্রভাব ফেলেছে, মন্তব্য হাইকোর্টের

নারদ কাণ্ডের বিতর্কিত ফুটেজ জনসমাজে প্রভাব ফেলেছে বলে মন্তব্য করল কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার নারদ স্টিং অপারেশন নিয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ওই মন্তব্য করে বলেন, ‘‘ফুটেজ খাঁটি না হলে তা সমাজব্যবস্থার পক্ষে বিপজ্জনক। আবার তা সত্য হলেও সমাজব্যবস্থার পক্ষে বিপজ্জনক। এই ফুটেজ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপর জনসাধারণের আস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সেই কারণেই এই ফুটেজের ফরেন্সিক পরীক্ষা হওয়া উচিত।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ২০:১৪
Share: Save:

নারদ কাণ্ডের বিতর্কিত ফুটেজ জনসমাজে প্রভাব ফেলেছে বলে মন্তব্য করল কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার নারদ স্টিং অপারেশন নিয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ওই মন্তব্য করে বলেন, ‘‘ফুটেজ খাঁটি না হলে তা সমাজব্যবস্থার পক্ষে বিপজ্জনক। আবার তা সত্য হলেও সমাজব্যবস্থার পক্ষে বিপজ্জনক। এই ফুটেজ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপর জনসাধারণের আস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সেই কারণেই এই ফুটেজের ফরেন্সিক পরীক্ষা হওয়া উচিত।’’

বিধানসভা ভোটের সময় নারদের স্টিং অপারেশনে উঠে এসেছে তৃণমূলের নেতা, সাংসদ ও মন্ত্রীদের টাকা নেওয়ার ছবি। সেই প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে দায়ের হওয়া তিনটি জনস্বার্থ মামলায় নারদ নিউজের কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েলকে স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজ, যে যন্ত্রে ওই ফুটেজ তোলা হয়েছে তা ২২ মার্চ আদালতে পেশ করতে নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।

কিন্তু ম্যাথু আদালতে হলফনামা দিয়ে জানান, নিরাপত্তার কারণে তাঁর নিজের আদালতে হাজির হয়ে ফুটেজ ও যন্ত্র জমা দিতে অসুবিধা রয়েছে। হলফনামায় তিনি জানান, দিল্লির কোনও সংস্থার হাতে তিনি ওই ফুটেজ ও যন্ত্র তুলে দিতে চান। তা জেনে ডিভিশন বেঞ্চ তিন সদস্যের একটি কমিটি গড়ে নির্দেশ দেয়। ওই কমিটিতে রয়েছেন জয়ন্ত কোলে নামে হাইকোর্টের একজন রেজিস্ট্রার, রাজ্য পুলিশের আইজি অনিল কুমার এবং সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার পুলিশ সুপার নগেন্দ্র প্রসাদ। ডিভিশন বেঞ্চ রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দিয়েছিল, দিল্লি গিয়ে ম্যাথুর কাছ থেকে ওই ফুটেজ ও যন্ত্র নিয়ে এসে আদালতে পেশ করতে। আইজি ও সিবিআইয়ের এসপি-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, ফুটেজ ও যন্ত্র আনতে রেজিস্ট্রারকে সাহায্য করতে।

এ দিন দুপুরে রেজিস্ট্রার সেগুলি আদালতে জমা দেন। আদালতে হাজির ছিলেন অনিল কুমার ও নগেন্দ্র প্রসাদও। প্রধান বিচারপতি মামলার আবেদনকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) জয়ন্ত মিত্র, অভিযুক্তদের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কিশোর দত্ত, জয়দীপ কর-দের উদ্দেশে বলেন, ‘‘রেজিস্ট্রারের কাছে ম্যাথু জানিয়েছেন, মোবাইল ক্যামেরায় ফুটেজ তোলা হয়েছে। তার পরে সেটি ল্যাপটপে ভরা হয়। ল্যাপটপ থেকে তোলা হয় পেন ড্রাইভে। ফুটেজের সিডি-ও নিয়ে আসা হয়েছে।’’

এজি-সহ অন্য আইনজীবীদের কাছে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চান প্রধান বিচারপতি। এজি বলেন, ‘‘সব পক্ষের শুনানি শেষ হওয়ার পরে আদালত সিদ্ধান্ত নিক। তত দিন রেজিস্ট্রারের জিম্মায় ফুটেজ, পেন ড্রাইভ, মোবাইল ক্যামেরা (আই-ফোন) থাকুক।’’ তা শুনে বিকাশরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘শুনানি শেষ হতে বছর গড়িয়ে যাবে। ফুটেজের ফরেনসিক পরীক্ষা করতে দেরি করা উচিত হবে না আদালতের। বিষয়টি জরুরি।’’

এর পরেই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘এই ফুটেজ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপর জনসাধারণে আস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ফুটেজ জনসমাজে প্রভাব ফেলেছে। শেষ পর্যন্ত এর পরীক্ষা করতেই হবে।’’ ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘ফুটেজ জাল হোক বা খাঁটি। সত্যটা সামনে আসা উচিত।’’

প্রধান বিচারপতি এর পরে বলেন, ‘‘ফুটেজ কলকাতায় বা এ রাজ্যে পরীক্ষা করা যে যাবে না, তা আমি জানি। আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার কে জানি, যিনি সৎ ও এই ফুটেজ পরীক্ষা করতে পারবেন।’’ তবে, ওই অফিসারের নাম জানাননি প্রধান বিচারপতি।

এর পরে প্রধান বিচারপতি ঘুষ কাণ্ডে অভিযুক্তদের আইনজীবীদের কাছে জানতে চান, তাঁদের কিছু বলার রয়েছে কি না। আইনজীবী জয়দীপ কর অভিযোগ করেন, ম্যাথু তাঁর প্রথম হলফনামায় বলেছেন, (ভিডিও) টেপ। এখন বলছেন মোবাইল ক্যামেরায় তোলা হয়েছে। তা শুনে ম্যাথুর আইনজীবী বলাই চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ম্যাথুকে দ্বিতীয় হলফনামা পেশ করতে আদালত নির্দেশ দিয়েছিল। সেই হলফনামায় ফুটেজ বলা হয়েছে। হলফনামার প্রতিলিপিও সব পক্ষকে দেওয়া হয়েছে।’’

তৃণমূলের সাংসদ তথা অভিযুক্তদের অন্যতম আইনজীবী কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘এই ফুটেজ ২০১৪ সালের। দু’বছর পরে কেন তা প্রকাশ করা হবে তার ফয়সালা হওয়া উচিত।’’

তা শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘ফুটেজ খাঁটি না হলে তা সমাজব্যবস্থার পক্ষে বিপজ্জনক। সত্য হলেও বিপজ্জনক। ফুটেজ সত্য, মিথ্যা যা-ই হোক, দোষীরা কি শাস্তি পাবে না? আমি যদি পরীক্ষার রিপোর্ট পেয়েও যাই, তা হলে তা তো এখনই প্রকাশ করছি না।’’ প্রধান বিচারপতি কল্যাণবাবুদের উদ্দেশে বলেন, ম্যাথুর দ্বিতীয় হলফনামা নিয়ে কোনও আপত্তি থাকলে তা ২৭ এপ্রিলের মধ্যে হলফনামা আকারে পেশ করতে।

প্রধান বিচারপতি কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন, ওই ফুটেজ, মোবাইল ফোন, পেন ড্রাউভ, সিডি আপাতত রাষ্ট্রায়ত্ত কোনও একটি ব্যাঙ্কের লকারে রাখতে। লকার খোলা বা বন্ধ করবেন কমিটির তিন সদস্যই। তবে, লকারের চাবি থাকবে রেজিস্ট্রারের কাছে। কোন ব্যাঙ্কের লকারে জিনিসগুলি রাখা হচ্ছে, তা গোপন রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

narada scam high court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE