Advertisement
E-Paper

নারদ-ভাইদের হয়ে ভোট ভিক্ষায় সুবোধরা

নারদের চাপ সামলাতে না-পেরে দিদি নিজেই ভাইদের পথে বসালে কী হবে, নারদে অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তৃণমূলপন্থী বিশিষ্ট জনেদের একাংশ। নিজেদের ‘তৃণমূলের সমর্থক সমমনস্ক কিছু মানুষ’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাঁরা সোমবার প্রেস ক্লাবে তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য ভোট ভিক্ষা করেছেন। সেই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য— যত দিন না সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শুভেন্দু অধিকারীরা ঘুষ নেওয়ার ব্যাপারে দোষী প্রমাণিত হন, তত দিন তাঁদের পাশে থাকবেন! তাঁদের জন্য ভোট চাইবেন এবং তাঁদের জেতানোর জন্য প্রচার করবেন! উদাত্ত কণ্ঠে ওঁরা বলেছেন, ‘‘ফিরহাদরা টাকা নিয়েছে কি নেয়নি সেটা তদন্ত বলবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১১
সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে ব্যতিব্যস্ত তৃণমূলপন্থী ‘বিশিষ্টজনেরা’। সোমবার প্রেস ক্লাবে। — নিজস্ব চিত্র

সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে ব্যতিব্যস্ত তৃণমূলপন্থী ‘বিশিষ্টজনেরা’। সোমবার প্রেস ক্লাবে। — নিজস্ব চিত্র

নারদের চাপ সামলাতে না-পেরে দিদি নিজেই ভাইদের পথে বসালে কী হবে, নারদে অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তৃণমূলপন্থী বিশিষ্ট জনেদের একাংশ। নিজেদের ‘তৃণমূলের সমর্থক সমমনস্ক কিছু মানুষ’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাঁরা সোমবার প্রেস ক্লাবে তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য ভোট ভিক্ষা করেছেন। সেই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য— যত দিন না সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শুভেন্দু অধিকারীরা ঘুষ নেওয়ার ব্যাপারে দোষী প্রমাণিত হন, তত দিন তাঁদের পাশে থাকবেন! তাঁদের জন্য ভোট চাইবেন এবং তাঁদের জেতানোর জন্য প্রচার করবেন! উদাত্ত কণ্ঠে ওঁরা বলেছেন, ‘‘ফিরহাদরা টাকা নিয়েছে কি নেয়নি সেটা তদন্ত বলবে। কিন্তু আহা, ফিরহাদ কী সব রাস্তা বানিয়েছে! কী কাজ করেছে! এটা দেখেই তো মানুষ ভোট দেবে।’’

এই ‘সমমনস্ক’দের মধ্যে রয়েছেন কারা? অভিরূপ সরকার, অরিন্দম শীল, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, প্রতুল মুখোপাধ্যায়, সুবোধ সরকার, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, মনোজিৎ মণ্ডল, রাজ চক্রবর্তী, তন্ময় বসুরা।

সাংবাদিক বৈঠকের প্রথম দিকে ওঁরা পালা করে বলছিলেন, তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কত ভাল কাজ করেছেন! কিন্তু সাংবাদিকেরা নারদ নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই একপ্রস্ত বাদানুবাদ শুরু হল। অরিন্দম শীল তখন মধ্যস্থ ভূমিকা নিয়ে বলেন, ‘‘ঠিক আছে, কোন প্রশ্নের উত্তর স্পেসিফিক কার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হচ্ছে সেটা উল্লেখ করে প্রশ্ন করুন।’’ পাশ থেকে মনোজিৎ মণ্ডল, নৃসিংহপ্রসাদরা ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন, ‘‘আরে না না, সমস্যা হয়ে যাবে। কেন এটা বললে? বরং সবাই মিলে আলোচনা করে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হোক।’’

অরিন্দম তখন কিঞ্চিৎ ভ্যাবাচ্যাকা। এরই মধ্যে মাইক্রোফোন টেনে নিয়েছেন অধ্যাপক মনোজিৎ মণ্ডল। বলতে শুরু করেছেন, ‘‘নারদ স্টিং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত... এতই যখন প্রশ্ন, তখন নির্বাচন কমিশন ওই নেতাদের মনোনয়ন পেশ করতে দিল কেন? কেন এফআইআর হল না?’’ সাংবাদিকরা প্রশ্ন তোলেন, মমতা তো নিজেই বলে দিয়েছেন, আগে জানলে তিনি নারদে অভিযুক্ত নেতাদের টিকিট দিতেন না! তা হলে মানুষ সেটা জেনেও ওই নেতাদের ভোটে জেতাবেন কেন? অভিরূপদের দিক থেকে উত্তর আসে, ‘‘খুনি কে সেটা না জেনেই তো আপনারা কিছু লোককে ফাঁসিতে লটকে দিচ্ছেন! ওই ভিডিও সত্যি না মিথ্যে তার ঠিক নেই। খুঁজে দেখুন ওই স্টিং-এ কত টাকা ইনভেস্ট হয়েছে, কারা করেছে, বাজারে ওই ভিডিও কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে!’’

এ বার ফের মাইক্রোফোন অরিন্দমের হাতে। প্রশ্ন ধেয়ে এল, ‘‘আপনারা নির্দিষ্ট করে বলুন, নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত নেতাদের হয়ে ভোট চাইছেন? সমর্থন করছেন?’’ উত্তর এল, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের জন্য ভোট চাইছি।’’ কিন্তু মমতার দল মানে তো তৃণমূল আর ওঁরা তো সবাই তৃণমূলেরই প্রার্থী! কিছুক্ষণ আগেই গায়ক প্রতুল মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘সিভিল সোসাইটির কাজ বিচ্যুতি দেখিয়ে দেওয়া। আমরা এই সরকারের ত্রুটিবিচ্যুতি পয়েন্ট আউট করতে পারি।’’ সেই সূত্র ধরে প্রতুলবাবুকে প্রশ্ন করা হল, নারদে অভিযুক্তদের নিয়ে মমতাকে কিছু ‘পয়েন্ট আউট’ করেননি? সঙ্গে সঙ্গে সুবোধ-অরিন্দম-মনোজিৎরা হাঁ হাঁ করে বলে উঠলেন, ‘‘প্রতুলদা আপনি কিছু বলবেন না, কিছু বলবেন না।’’

শেষ পর্যন্ত এই আমতা আমতা অবস্থার অবসান ঘটালেন চিকিৎসক এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্যত সব দোটানায় জল ঢেলে আচমকা বলে উঠলেন, ‘‘হ্যাঁ সমর্থন করি। ওরা ভাল কাজ করে। তদন্তে কেউ দোষী হলে নেত্রী ঠিক ব্যবস্থা নেবেন। তার আগে পর্যন্ত সমর্থন করি।’’ অরিন্দমও খানিকটা কিন্তু কিন্তু করে মাইক টেনে নিলেন। পাশে বসা সুবোধ নিচু গলায় সতর্ক করলেন, ‘‘এটা নিয়ে কিছু বলতে যেও না।’’ অরিন্দম কিন্তু থামলেন না। কবুল করলেন, ‘‘করি করি, আমরা সবাই সমর্থন করি। যদি পরে ওরা দোষী প্রমাণিত হন, তখন বিরোধিতা করব।’’

আর কোনও প্রশ্ন নয়। দুড়দাড় করে সবাই উঠে পড়লেন। যাওয়ার আগে বললেন, ‘‘লিখে দিন আমরা পক্ষপাতদুষ্ট। আমরা চাই মানুষের মহাজোট যেন বারবার ফিরে আসে।’’

ব্যাখ্যা দিলেন অভিরূপ

মমতা-পন্থী বিশিষ্ট জনেদের মধ্যে থেকেই শাসকের হয়ে ভোট চেয়েছেন তিনি। কিন্তু অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তিনি এখন রাজ্য বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান। সেই সঙ্গে স্টেট প্ল্যানিং বোর্ডে আছেন। তিনি কি সরাসরি কোনও দলের জন্য ভোট চাইতে পারেন? অভিরূপ অবশ্য উত্তরে বলেন, ‘‘এটা অরাজনৈতিক মঞ্চ। সরকারি পদের সঙ্গে আমার ব্যক্তি ও নাগরিক সত্তার বিরোধ নেই।’’ তিনি রাজ্য সরকারের পদে আসীন থেকে কেন্দ্রীয় সংস্থায় অধ্যাপনা করতে পারেন কি না সে ব্যাপারে অভিরূপবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘আমি আগে অর্থ কমিশনে ছিলাম। সেখান থেকে সিটিং ফি পেতাম। এখন বেতন কমিশনে আছি। প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিয়েই এই সব পদে যোগ দিয়েছি।’’

assembly election 2016 narada
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy