Advertisement
১৯ মে ২০২৪

মমতা না সূর্য? বুথ ফেরত সমীক্ষায় আজ আভাস

মমতা কি ফের নবান্নে আসছেন? নাকি বাম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই হতে চলেছে এ রাজ্যে? ছ’দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে গত ৫ মে। মাঝে মাত্র আর দু’দিন। তার পরেই ফল প্রকাশ। কে জিতবে? হারবেই বা কোন পক্ষ? এ প্রশ্নে আপাতত জল্পনার অন্ত নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ১২:২৬
Share: Save:

মমতা কি ফের নবান্নে আসছেন? নাকি বাম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই হতে চলেছে এ রাজ্যে? ছ’দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে গত ৫ মে। মাঝে মাত্র আর দু’দিন। তার পরেই ফল প্রকাশ। কে জিতবে? হারবেই বা কোন পক্ষ? এ প্রশ্নে আপাতত জল্পনার অন্ত নেই।

কেরল, তামিলনাড়ু এবং পুদুচেরিতে আজ সোমবার নির্বাচন। সেই ভোট পর্ব মিটতেই এ দিন সন্ধ্যা থেকে সামনে আসতে শুরু করবে বিভিন্ন সংস্থার করা বুথ ফেরত সমীক্ষা। বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল সব সময় না মিললেও দুধের স্বাদ আপাতত এগজিট পোলের ঘোলে মেটানোর অপেক্ষাতেই সাধারণ মানুষ। কেমন হতে পারে ফল? কী থাকতে পারে বুথ ফেরত সমীক্ষায়? অঙ্ক কী বলছে? বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকাশ্যে আসার আগে সেই অঙ্কটা আর এক বার কষে নেওয়া যাক।

ভোটের অঙ্কের হিসেব পাটিগণিতের নিয়মে সবটা কষা যায় না। কিন্তু তাতে লঘুও হয় না পাটিগণিতের গুরুত্ব। এ রাজ্যে শেষ দুটো পূর্ণাঙ্গ (অর্থাত্ গোটা রাজ্যের) নির্বাচন হল ২০১১ সালের বিধানসভা ভোট আর ২০১৪ সালের লোকসভা ভোট। ২০১১তে তৃণমূল কংগ্রেস আর কংগ্রেসের মধ্যে জোট ছিল। সেই ভোটের ফলাফলের হিসেব থেকে দলভিত্তিক জনসমর্থনের পাটিগাণিতিক হিসেব কষা মুশকিল। কিন্তু ২০১৪ সালের ভোটে তৃণমূল, বামফ্রন্ট (দল না হলেও বহু বছর ধরে এক সঙ্গে লড়ছে), কংগ্রেস আর বিজেপি আলাদা আলাদা লড়ায় ফল বিশ্লেষণটা অনেক সরল সমীকরণে করা সম্ভব। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এটাই এ রাজ্যে ২০১৬র বিধানসভা ভোটের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ ভোট। অর্থাত্ সব থেকে কাছাকাছি ভোটের হিসেব পাওয়া যাচ্ছে ২০১৪র লোকসভা নির্বাচন থেকেই।

৩৪/৪২, কিন্তু...

২০১৪ সালে রাজ্যের ৪২টা লোকসভা আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস একাই পেয়েছিল ৩৪টা আসন (কাকতালীয় ভাবে বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনের সঙ্গে সংখ্যাটা মিলে গেছে)। মোট আসনের ৭৭ শতাংশ ছিল তৃণমূলের দখলে। কিন্তু মোট প্রাপ্ত ভোটের অঙ্কটা রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে আদৌ উল্লসিত হওয়ার মতো নয়।

দেখাই যাচ্ছে ৭৭ শতাংশ আসন পেলেও তৃণমূল ভোট পেয়েছিল ৪০ শতাংশের কম। অর্থাত্ ৬০ শতাংশের বেশি ভোট বিরোধী তিন পক্ষের মধ্যে ভাগাভাগি হওয়াটাই ছিল তৃণমূলের ‘বিপুল’ সাফল্যের চাবিকাঠি। আর এই অঙ্কই আসন্ন বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেস জোটের পক্ষে সবচেয়ে বড় সওয়াল।


তৃণমূল আর বাম-কংগ্রেসের যৌথ ভোট ছিল প্রায় সমান সমান। দুপক্ষের ঝুলিতেই প্রায় ৪০ শতাংশ। বাকি রইল বিজেপির হাতে থাকা ১৭ শতাংশ ভোট যা আসলে এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে যাচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, বিজেপির ভোট এ বার অনেকটা কমবে, এবং সেই ভোট বেশিটাই পড়বে অন্যান্য বিরোধী দলের পক্ষে।

জোট ফ্যাক্টর

বিজেপির ২০১৪ সালে পাওয়া ভোটের বড় অংশ এ বার বাম বা কংগ্রেসের পক্ষে গেলে কী হতে পারে তার হিসেবে আমরা আসব। তার আগে দেখে নেবো শুধু বামফ্রন্ট আর কংগ্রেসের ভোট মিললে লোকসভা ভোটের বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফল কেমন হত। এমনিতে ২০১৪র লোকসভা ভোটে রাজ্যের ২৯৪টা বিধানসভা আসনের মধ্যে ২১৪টাতেই এগিয়ে ছিল তৃণমূল।


এ বার দেখে নিই বামফ্রন্ট আর কংগ্রেসের ভোটটা মিললে এই ফলাফল কেমন হত।


অর্থাত্ বামফ্রন্ট আর কংগ্রেস আলাদা লড়ে যেখানে মোট ৫৬টা বিধানসভা আসনে এগিয়েছিল, সেটাই এক সঙ্গে লড়লে ৯৮টা হতে পারত। তৃণমূল আর বিজেপির এক যোগে চূড়ান্ত সাফল্যের সময়েও।

সাম্প্রতিক জনমত সমীক্ষা কী বলছে

ভোটের দিন ক্ষণ ঘোষণার আগেই জনমত সমীক্ষা করেছিল এপিবি আনন্দ এবং এসি নিয়েলসন। আরও কয়েক দফায় এই সমীক্ষা চলবে। প্রথম সমীক্ষা যে হিসেব দিচ্ছে তাতে তৃণমূল জিতলেও ১০০র বেশি আসন পাবে বিরোধী জোট।

ফ্যাক্টর হবে বিজেপির ভোট

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজেপি ২০১৪ সালে মোদী হাওয়ায় যে ভোট পেয়েছিল এ বার তা অনেকটা কমবে। এমনকী বিজেপির ভোট তিন ভাগের এক ভাগেও নেমে আসতে পারে, বলছেন অনেকে। তা হলে বিজেপির থেকে বেরিয়ে যাওয়া ভোট কোথায় যাবে? রাজ্য সিপিএম এবং প্রদেশ কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতার মতে, অ্যান্টি-পাওয়ার (ক্ষমতা বিরোধী) ভোটের একটা বড় অংশ টেনে নিয়ে গিয়েছিল মোদী ঢেউ। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে গিয়ে এই ভোটাররা সিপিএম বা কংগ্রেসের উপর আস্থা না রেখে বিকল্প হিসেবে বিজেপিকেই বেছে নিয়েছিলেন। পাশাপাশি অনেক জায়গাতেই বাম কর্মী সমর্থকদেরও একটা অংশ বিজেপির ছাতার তলায় আশ্রয় খুঁজতে শুরু করেছিলেন। অর্থাত্ বিজেপি যে অতিরিক্ত ভোট পেয়েছিল তা মূলত শাসক দল বিরোধী ভোট। কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতাদের আশা, সেই ভোটারদের অধিকাংশই এ বার বিজেপির থেকে সরে আসবেন, কিন্তু ভোটটা দেবেন তৃণমূলের বিপক্ষেই।

বিজেপির ভোট কাটলে কী হবে

এ বার বিজেপির ভোটের হিসেবটায় আসা যাক। এটাই আগামী বিধানসভা ভোটে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে যাচ্ছে। সোজা হিসেবে বোঝা যাচ্ছে, বিজেপির থেকে বেরিয়ে যাওয়া ভোট যদি প্রায় সমানে সমানে শাসক এবং প্রধান বিরোধী শিবিরে ঢোকে তবে বামফ্রন্ট-কংগ্রেস জোট হলেও তৃণমূল ভাল ভাবে জিতবে। কিন্তু না হলে? না হলে কিন্তু হিসেবটা তৃণমূলের পক্ষে স্বস্তির নয় একেবারেই।

অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, খুব বেশি হলে বিজেপি তার ২০১৪র ভোটের ৩৫ শতাংশ ধরে রাখতে পারবে। বিজেপির বাকি ৬৫ শতাংশ ভোট ভাগাভাগি হবে শাসক আর অন্যান্য বিরোধীদের মধ্যে। সিপিএম-কংগ্রেস জোটপন্থীদের কারও কারও মতে, বিজেপির এই ৬৫ শতাংশ ভোটের ৯০ শতাংশই জোটের পক্ষে যাবে।

আমরা কয়েকটা সম্ভাব্য হিসেব ধরে দেখব বিজেপির ভোট কোন দিকে কত গেলে কী হতে পারে তার ফলাফল।

সম্ভাবনা ১


সম্ভাবনা ২

উপরের দুটো (৬ এবং ৭ নং) সারণির মধ্যে একটা ‘অদ্ভুত’ ব্যাপার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দুটো ক্ষেত্রেই বাম-কংগ্রেসের মোট ভোট তৃণমূলের ভোটের থেকে বেশি। অথচ আসন সংখ্যায় এগিয়ে তৃণমূল। কেন এমন হল? এর উত্তর খোঁজার আগে ৪ নং সারণির তথ্যটাও আর এক বার মনে করাবো। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূল আর বাম-কংগ্রেস যৌথ ভোট ছিল প্রায় সমান সমান। কিন্তু বাম-কংগ্রেস ভোট মিললেও তারা এগিয়ে মাত্র ৯৮টা আসনে। যেখানে প্রায় সমান ভোট পেয়ে তৃণমূল লিড করছে ২১৪টা আসনে। মোট প্রাপ্ত ভোট আর মোট প্রাপ্ত আসনের এই বিষম সম্পর্কটাও কিন্তু লুকিয়ে আছে পাটিগণিতের হিসেবেই। হিসেবটা মিলবে কংগ্রেসের পাওয়া ভোটের মধ্যে। ২০১৪র লোকসভা ভোটে কংগ্রেস এ রাজ্যে ভোট পেয়েছিল ৯.৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৫.৬ শতাংশ ভোট উত্তরবঙ্গ এবং মুর্শিদাবাদের ৭৬টা আসনে পাওয়া। বাকি ২১৮টা আসনে ৪.১ শতাংশ ভোট পায় কংগ্রেস। অর্থাত্ কংগ্রেসের ভোট ঘনত্ব উত্তরবঙ্গের তুলনায় দক্ষিণবঙ্গে নগন্য। এই কারণেই দক্ষিণবঙ্গে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের ভোট মিললেও তৃণমূলের কিছুই প্রায় আসবে যাবে না। দরকার বিজেপির আরও ভোট কাটা।

সম্ভাবনা ৩

পাহাড়ের তিনটে আসন বাদ দিয়ে রাজ্যের বাকি ২৯১টা আসনে বিজেপির ৬৫ শতাংশ ভোট তিন ভাবে ভাগাভাগি করে কষা হয়েছে উপরের তিনটে সারণির হিসেব। যে গড়পরতা প্রবণতা এতে দেখা যাচ্ছে তা তৃণমূলের পক্ষে বেশ চিন্তার বই কি! বিজেপি যত বেশি নিজের ভোট ধরে রাখতে পারবে তত লাভ তৃণমূলের। সোজা অঙ্কের হিসেবে এটা পরিষ্কার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 MostReadStories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE