Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
coronavirus

রাজ্যে পছন্দের কাজ মেলেনি, দিল্লি থেকে ফিরতে চান না সুবিদ

জরির পাশাপাশি ডোমজুড়ের বহু যুবক দিল্লিতে সোনার কাজের সঙ্গেও যুক্ত। তাঁদেরও দলে দলে ফিরে আসার কোনও খবর এখনও পর্যন্ত নেই বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১ ০৭:৩৬
Share: Save:

করোনার বাড়বাড়ন্তের ফলে লকডাউন চলছে দিল্লিতে। ফলে, সেখানে কাজকর্ম বন্ধ। এই পরিস্থিতিতেও বাংলায় নিজের গ্রামে ফিরতে চান না জরিশিল্পী সুবিদ আলি।

হাওড়া জেলার পাঁচলার মেজুটি গ্রামের সুবিদ দিল্লির মালব্যনগরে থাকেন। তাঁর কাছে অনেকে কাজ করেন। সেখান থেকে মোবাইল ফোনে সুবিদ বললেন, ‘‘এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। দেখা যাক না, তারপরে কী হয়!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ফিরেই বা কী করব! গত বছর লকডাউনের সময়ে বাড়ি গিয়েছিলাম। লাভ হয়নি। আমাদের একশো দিনের কাজ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা যাতে অভ্যস্ত, তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনও কাজ ওই প্রকল্পে পাইনি। কলকাতায় জরির বাজার নেই।’’ সুবিদ জানান, এই সব কারণে তাঁকে দিল্লিতে ফিরে আসতে হয়। তিনি বলছেন, আপাতত কোনও মতে সপ্তাহ খানেক কাটিয়ে দেবেন। তার পরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তাঁর আশা।

সুবিদের মতোই পাঁচলার কয়েক হাজার যুবক দিল্লিতে জরির কাজ করেন। কিছু ফিরে এসেছেন ভোট দেওয়ার জন্য। করোনা বাড়তে থাকায় তাঁরা আপাতত দিল্লিতে যাবেন না বলে জানিয়েছেন। যাঁরা দিল্লিতে আছেন তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ ফিরে না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আত্মীয়-স্বজন।

জরির পাশাপাশি ডোমজুড়ের বহু যুবক দিল্লিতে সোনার কাজের সঙ্গেও যুক্ত। তাঁদেরও দলে দলে ফিরে আসার কোনও খবর এখনও পর্যন্ত নেই বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। গত বছর দেশে করোনার প্রথম পর্যায়ের লক ডাউনের সময় বহু জরি ও সোনার কারিগর এই দুই ব্লকে ফিরে এসেছিলেন।

এ দিকে, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে প্রশাসনের গা-ছাড়া ভাব চোখে পড়েছে। গত বছর করোনা-পর্বে জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েতে কতজন পরিযায়ী শ্রমিক ফিরছেন, সেই তথ্য রাখা হত। সেই তথ্য ধরে তাঁদের করোনা পরীক্ষা এবং নিভৃতবাসের ব্যবস্থা হত। ওই তথ্য বলছে, সেই সময় জেলায় অন্তত ২৫ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসেছিলেন। এ বার জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে এই সংক্রান্ত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, এ বার কতজন পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এলেন, তার কোনও তথ্য রাখার ব্যবস্থা হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কোনও কাজ নবান্ন থেকে এখনও আমাদের করতে বলা হয়নি। তাই, কতজন ফিরেছেন বা আদৌ কেউ ফিরছেন কিনা, বলা যাবে না।’’

পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে সরকারের এই ‘উদাসীনতা’র সমালোচনা করেছেন পাঁচলার বাসিন্দা তথা সারা ভারত জরিশিল্পী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুজিবর রহমান মল্লিক। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আসলে গোড়ায় গলদ। আইন অনুযায়ী, পরিযায়ী শ্রমিকদের তত্বাবধানের জন্য প্রতিটি রাজ্যে উন্নয়ন বোর্ড করার কথা। কোনও রাজ্যে কত পরিযায়ী শ্রমিক থাকেন, তার সব তথ্য বোর্ডের হাতে থাকার কথা। সঙ্কটের সময়ে এই তথ্য কাজে ল‌াগে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, কোনও রাজ্যেই বোর্ড করা হয়নি।’’

মুজিবরের ক্ষোভ, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের রোজগারের টাকা সংশ্লিষ্ট রাজ্যেই ফিরে আসে। কিন্তু রাজ্য সরকার তাঁদের কথা ভাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus COVID19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE