Advertisement
১১ মে ২০২৪
BJP

Bengal polls 2021: অমিত-সফরে মুকুল চললেন দিল্লি, ‘ভাগ মুকুল ভাগ’-এর জনক এখন বাংলা থেকে দূরে

২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর সিদ্ধার্থর মুখে ওঠা ‘ভাগ মুকুল ভাগ’ আওয়াজ পরবর্তী সময়ে রাজ্য রাজনীতিতে আলোচ্য হয়ে ওঠে।

সিদ্ধার্থনাথ এখন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী।

সিদ্ধার্থনাথ এখন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২১ ২০:০৭
Share: Save:

সেটা ২০১৪ সাল। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি-র অন্যতম মুখ তখন সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। দিলীপ ঘোষ তখনও রাজনীতিতেই যোগ দেননি। এই রাজ্যের দায়িত্বে আসেননি কৈলাস বিজয়বর্গীয়। বাংলায় বিজেপি-র তখনকার পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থ বিখ্যাত হয়ে যান একটি স্লোগানের জন্য। তখন সারদা-কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। ধর্মতলায় দলীয় সভা থেকে সিদ্ধার্থ বলেছিলেন, ‘‘ভাগ মুকুল ভাগ।’’ সেই সঙ্গে ‘ভাগ মমতা ভাগ’, ‘ভাগ মদন ভাগ’ স্লোগান দিলেও ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর সিদ্ধার্থর মুখে ওঠা ‘ভাগ মুকুল ভাগ’ আওয়াজ পরবর্তী সময়ে রাজ্য রাজনীতিতে আলোচ্য হয়ে ওঠে। কারণ, সেই স্লোগান তোলার পরে পরেই মুকুল রায়ের বিজেপি-তে যোগদানের জল্পনা তৈরি হয়। পরে সেই জল্পনা বাস্তবও হয়। আর এখন সেই মুকুলের অভিভাবকত্বে লোকসভায় ১৮ আসন জয়ের পরে নীলবাড়ি দখলের স্বপ্ন দেখছে বিজেপি তখন সেই লড়াই থেকে অনেক দূরে সিদ্ধার্থনাথ।

এখন সিদ্ধার্থনাথ উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী। কিন্তু বাংলায় থাকার সময় তাঁর পরিচয়ই হয়ে উঠেছিল ওই স্লোগান। বিজেপি-র সমাবেশে এমনটাও বলা হত— ‘‘এ বার বক্তব্য রাখবেন ভাগ মদন, ভাগ মুকুল, ভাগ মমতা বলে যিনি আমাদের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন সেই সিদ্ধার্থনাথ সিংহ।’’ ওই স্লোগান যখন তিনি তুলেছিলেন, তার আগে আগেই মুক্তি পেয়েছিল দৌড়বিদ মিলখা সিংহের বায়োপিক ‘ভাগ মিলখা ভাগ’। সম্ভবত তারই অনুকরণ করেছিলেন সিদ্ধার্থনাথ।

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে অমিত শাহর নির্দেশে অনেক আগে থেকেই বাংলার মাটি আঁকড়ে পড়ে আছেন উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও ইতিমধ্যেই মালদহে একটি সমাবেশ করেছেন। নির্বাচনের আগেও তাঁর আরও অনেক বার বাংলায় আসার কথা। কিন্তু সেই সফরসূচিতে সিদ্ধার্থনাথের নাম নেই। এক সময় বাংলার রাজনীতির সঙ্গে যিনি একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন তিনি কি একটি বারও প্রচারে আসবেন না? আনন্দবাজার ডিজিটালের প্রশ্নের জবাবে সিদ্ধার্থনাথ জানান, ‘‘সামনে উত্তরপ্রদেশে কিছু স্থানীয় নির্বাচন রয়েছে। আমি সেগুলির দায়িত্বে। তাই বাংলায় যাব না। যোগীজি যাবেন অনেক বার। কিন্তু আমার উপর এখানকার সংগঠন দেখার দায়িত্ব।’’ যে বাংলায় ‘ভাগ মুকুল ভাগ’ স্লোগান তুলেছিলেন তিনি সেখানে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর পক্ষে মানিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় বলেই কি বাংলাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন? না, এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন শুনেই ফোন কেটে দেন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রিমশাই।

২০১৯-এর লোকসভা ভোট সেমিফাইনাল আর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন ফাইনাল ম্যাচ। বিজেপি নীলবাড়ি দখলের লড়াইকে পাখির চোখ করেছে অনেক দিন আগেই। ২০১৪ সালে প্রথম নরেন্দ্র মোদী সরকার গঠনের পরেই দলের ‘লুক ইস্ট পলিসি’ ঠিক হয়। উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাকেও ‘টার্গেট’ করে বিজেপি। ইতিমধ্যেই উত্তর-পূর্বের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিজেপি সরাসরি বা জোট গড়ে ক্ষমতার অলিন্দে। সেই ‘লুক ইস্ট পলিসি’-র অন্যতম সৈনিক ছিলেন লালবাহাদুর শাস্ত্রীর নাতি সিদ্ধার্থনাথ। ২০১৪ সালে দেশে ৩৩৬ আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি। আর তাতে বাংলার অংশিদারিত্ব ছিল মাত্র ২। দার্জিলিঙে সুরেন্দ্র সিংহ অহলুআলিয়া এবং আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয় জয় পান। এর পরে মুকুলের যোগদান, দিলীপের রাজ্য সভাপতি ও খড়্গপুর সদরের বিধায়ক হওয়া অনেক কিছুই ঘটে গিয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ১৮টি আসনে জয়ও পেয়েছে বিজেপি। কিন্তু তার কোনও কিছুতেই সিদ্ধার্থনাথের ভূমিকা থাকেনি। কারণ, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের পরেই বাংলার ‘চাকরি’ চলে যায় সিদ্ধার্থনাথের।

বাংলা বিজেপি থেকেই একটা সময় ‘ভাগ সিদ্ধার্থ ভাগ’ স্লোগান উঠতে শুরু করে। প্রয়োজনে তৃণমূল থেকে নেতা ভাঙিয়ে বিজেপি-তে নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হওয়ার পরে পরেই ২০১৫ সালের জুলাইয়ে সিদ্ধার্থনাথকে সহ-পর্যবেক্ষক করে রাজ্যের পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয় মধ্যপ্রদেশের নেতা কৈলাসকে। একটু একটু করে কমতে থাকে সিদ্ধার্থনাথের গুরুত্ব। একটা সময় পর্যন্ত মুকুলকে বিজেপি-তে যাতে না নেওয়া হয় তার জন্য দলের অন্দরে লড়াই চালিয়ে হাল ছেড়ে দেন সিদ্ধার্থনাথ। পরে ফিরে যান উত্তরপ্রদেশে। ২০১৭ সালে ইলাহাবাদ পশ্চিম কেন্দ্র থেকে জিতে মন্ত্রীও হন। ছিন্ন হয়ে যায় বাংলার সঙ্গে সম্পর্ক।

তবে বাংলার রাজনীতি ভোলেনি সিদ্ধার্থনাথকে। সেটা তাঁর সেই স্লোগানের জন্যই। এই নীলবাড়ির লড়াইয়েও উঠছে সেই প্রসঙ্গ। ক’দিন আগেই তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ একটি সভায় বলেছেন, ‘‘এক দিন নড্ডারা বলেছিলেন, ‘ভাগ মুকুল ভাগ’। আজ নড্ডা সভাপতি আর মুকুল রায় সহ-সভাপতি! ‘পরিবর্তন’ বলতে এটাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE