Advertisement
E-Paper

অপেক্ষা শেষ! ফল প্রকাশ আজ

কোথাও ঢাক, তো কোথাও বাজি। কেউ আবিরের বস্তা কিনেছেন, কেউ বা মিষ্টি বিলির জন্য আগাম অর্ডার দিয়েছেন। দলীয় কার্যালয় গুলিতে যাতে পার্টি কর্মীরা একসঙ্গে বসে টিভিতে চোখ রাখতে পারেন সে ব্যবস্থাও পাকা! তবে শেষ প্রহরে শাসকদলের তুলনায় বেশ চুপচাপ বিরোধী শিবির। শাসকদলের পক্ষ থেকে উচ্ছ্বাসের ইঙ্গিত মিললেও বাম ও অনুচ্চারিত জোট সঙ্গী কংগ্রেস অথবা বিজেপি ফলাফলের আগে তেমন ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে বলে খবর নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৬ ০১:২৭
বাজারে কদর সব রঙেরই। বুধবার দুবরাজপুরে ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

বাজারে কদর সব রঙেরই। বুধবার দুবরাজপুরে ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

অপেক্ষা শেষ! ফল প্রকাশ আজ হলেও, সব দলেরই প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বুধবারই!

কোথাও ঢাক, তো কোথাও বাজি। কেউ আবিরের বস্তা কিনেছেন, কেউ বা মিষ্টি বিলির জন্য আগাম অর্ডার দিয়েছেন। দলীয় কার্যালয় গুলিতে যাতে পার্টি কর্মীরা একসঙ্গে বসে টিভিতে চোখ রাখতে পারেন সে ব্যবস্থাও পাকা! তবে শেষ প্রহরে শাসকদলের তুলনায় বেশ চুপচাপ বিরোধী শিবির। শাসকদলের পক্ষ থেকে উচ্ছ্বাসের ইঙ্গিত মিললেও বাম ও অনুচ্চারিত জোট সঙ্গী কংগ্রেস অথবা বিজেপি ফলাফলের আগে তেমন ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে বলে খবর নেই।

দুবরাজপুরের এক দশকর্মা ব্যবসায়ীর কাছে লাল ও সবুজ মিলিয়ে অন্তত ৭০ বস্তা সবুজ আবির মজুত। তিনি অপেক্ষায়। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণাকে ঘিরে অকাল হোলিতে দিব্যি কাটবে আবির। আবিরের কিছু নমুনা দোকানের সামনে সাজিয়ে রাখতে রাখতে ওই ব্যবসায়ীর আক্ষেপ, ‘‘মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আবির নিয়ে খোঁজ করেনি।’’ প্রায় একই বক্তব্য দুবরাজপুরের একটি নামকরা মিষ্টি ব্যবসায়ীর। বললেন, ‘‘কোনও দলই এখনও অর্ডার দেয়নি।’’

দুবরাজপুর বিধানসভা এলকায় যখন এই হাল তখন ঠিক উল্টো ছবি সিউড়ি বিধানসভা এলাকার রাজনগরে।

ওই ব্লকের প্রতিটি পঞ্চায়েত থেকে শাসকদলের কর্মীরা ২০০টি করে শব্দ বাজির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। রাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা সুকুমার সাধু বলছেন, ‘‘এই আসনে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত জেনে আমি ব্যক্তিগতভাবে ৩০০টি বাজির অর্ডার দিয়েছি।’’ তৃণমূল সূত্রের খবর এক একটি বাজির দাম ২৫টাকা। এখানেই শেষ নয়, সিউড়িতে শাসকদলের দলীয় কার্যালয় থেকে একটি অভিনব আতসবাজির অর্ডার দেওয়া হয়েছে রাজনগরের গ্রামে। যা ফাটলে মা-মাটি মানুষ লেখা উঠবে। দাম এক একটির আড়াইশো টাকা। বলা হয়েছে ঢাকও। বুধবার বিকালেই আগাম উল্লাসের ঢাকে কাঠি দিলেন সিউড়ির তৃণমূল কাউন্সিলর বিদ্যাসাগর সাউ। সিউড়িতে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় কার্যালয়ের বাইরে বেশ কয়েকটি ঢাক বাজানো হল কাউন্সিলের উদ্যোগে। বিদ্যাবাবুর কথায়, ‘‘এ দিন বোধন হল। বৃহস্পতিবার সপ্তমী।’’

দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল অবশ্য সপ্তমী অষ্টমী বলে বেঁধে দিতে রাজি নন।

তাঁর কথায়, ‘‘ঢাক বাজবে ধরমপুজোর।’’ বুধবার বিকালে বোলপুর নীচুপট্টি দলীয় কার্যালয়ে বসে ফুরফুরে মেজাজে অনুব্রত বলেন, ‘‘১১তে ১১টিই আমরা জিতব। রাজসাজে ফিরবে তৃণমূল। কাল থেকে বাজবে ধরমপুজোর ঢাক।’’ কোনও টেনশেন হচ্ছে? অনুব্রত বলেন, “নো টেনশন। কোনও টেনশন নেই। আমার জীবনে কোনও টেনশন নেই।”

সবিস্তারে দেখুন

বোলপুর লাগোয়া পারুলডাঙা আশ্রম বিদ্যালয়ে হয়েছে মহকুমার তিনটি বিধাসভা কেন্দ্রের স্ট্রং রুম। বৃহস্পতিবার বিধানসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণা হবে ওই জায়গা থেকে। আর এদিকে সকাল থেকে কার্যত সাজোসাজো রব বোলপুরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে। আট নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ অমর থেকে শুরু করে কসবা এলাকার তৃণমূল নেতা নারা ভাণ্ডারী পর্যন্ত একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাঁরা বলেন, ‘‘দাদা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ভ্যানে করে মিষ্টি বিলি হবে।” বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর ৩১ তারিখ পর্যন্ত রাজ্যে কোনও রকমের বিজয়মিছিল করা যাবে না বলে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। এ হেন পরিস্থিতিতে কোন বিজয় মিছিল, আনন্দ, উল্লাস হবে না?

অনুব্রত বলেন, “নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব, এক্তিয়ার ২২ তারিখ পর্যন্ত।” তার পর? “দলের নেত্রী যা বলবেন, সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলবেন তাই হবে।” ঘটনা হল, ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর উল্লাসের প্রস্তুতি নিয়ে সিউড়ি বিধানসভা এলাকা বা জেলাসভাপতির কন্ঠস্বের যতটা আত্মবিশ্বাস, জেলার অন্যান্য অংশে ছবিটা ততটা ঝকঝকে নয়। কারণ একটাই যতই ১১-০ আসনে জয় ছিনিয়ে নেওয়া নিয়ে জেলাসভাপতি অনুব্রত নিদান হেঁকে থাকুন, কয়েকটি বিধানসভা ছাড়া আধিকাংশ ক্ষেত্রেই জয়পরাজয় নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন কর্মীরাই। কাজেই তাঁরা ধীরে চল নীতি নিয়েছেন। দুবরাজপুরের ব্লকসভাপতি ভোলানাথ মিত্র যেমন বলছেন, ‘‘আগে তো জিতি তারপর দলের নির্দেশ অনুযায়ী ভাবব।’’

নানুরের বিদায়ী বিধায়ক গদাধর হাজরা বলেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কোনও উচ্ছ্বাস প্রকাশ না করতে বলা হয়েছে দলের কর্মীদের। মানুষের রায় মাথায় নিয়ে শান্ত থাকতে বলা হয়েছে তাঁদের। ফলাফল ইতিবাচক হলে আবির খেলা। মিষ্টি মুখ চলবে।’’ অন্যদিকে সাঁইথিয়া অবশ্য কিছুটা আবির খেলা ও মিষ্টি মুখের প্রস্তুতি সেরে রেখেছে। এমন জানিয়েছেন শহর সভাপতি পিনাকী লাল দত্ত। বুধবার শেষ বেলায় কী বলছে বিরোধী শিবির?

সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা যিনি জোটের ফল ভাল হবে বলে আশাবাদী। তিনি বলছেন, ‘‘উচ্ছ্বাস তো স্বতঃফূর্ত। তার জন্য আবার প্রস্তুতি লাগে নাকি!’’

তবে দলের তরফে সকল কর্মী-সমর্থকদের শৃঙ্খলা বাজায় রাখতে বলা হয়েছে। সঙ্গে সতর্কতাও থাকছে। একই সুর লাভপুর এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পল্টু কোঁড়াও। তিনি জানান, গণনা কর্মীদের কোনও প্ররোচনায় পা না দিয়ে বাড়ি ফিরতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে অনুচ্চারিত জোট সঙ্গী কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলছেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্ব নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত উচ্ছ্বাসের কোনও বহিঃপ্রকাশ নয়। তবে দলের কর্মীরা ভোট গণনাকেন্দ্রের বাইরে কোথায় দাঁড়াবেন সেই জন্য রামপুরহাট কলেজের কাছাকাছি শেড তৈরি করছে কংগ্রেস।’’

assembly election 2016 Vote Result
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy