Advertisement
E-Paper

বেচাল সহ্য করা হবে না, বার্তা কমিশনের

কমিশনের অধীনে কাজ করা রাজ্য পুলিশকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে হুমকি দিয়েছিলেন, তার সিডি চেয়ে পাঠাল নির্বাচন কমিশন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপরে প্রভাব ফেললে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে কমিশন। নির্বাচন সদন সূত্রে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০৪:৩৫
ব্যস্ত ফোনে। কোচবিহারের বাণেশ্বরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

ব্যস্ত ফোনে। কোচবিহারের বাণেশ্বরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

কমিশনের অধীনে কাজ করা রাজ্য পুলিশকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে হুমকি দিয়েছিলেন, তার সিডি চেয়ে পাঠাল নির্বাচন কমিশন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপরে প্রভাব ফেললে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে কমিশন। নির্বাচন সদন সূত্রে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে।

রবিবার চণ্ডীপুর এবং পাঁশকুড়ার জনসভায় পুলিশবাহিনীকে ‘ভীতু’ এবং ‘অতিসক্রিয়’ বলেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্য পুলিশ যে ‘নির্যাতন’ চালিয়েছে, তা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে কখনও দেখেননি বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষমতায় ফিরলে ‘১৫ দিনের ক্ষমতাভোগীদের দেখে নেওয়ার’ কথাও বলেছিলেন মমতা।

মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন বক্তব্য আদতে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক অধিকারকেই চ্যালেঞ্জ করার সামিল বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। সোমবার বিজেপির পক্ষ থেকে কমিশনে এ নিয়ে অভিযোগও জানানো হয়েছে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন তমলুকে এক পদযাত্রায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কালকের কথা শুনে পূর্ব মেদিনীপুরের মাটিতে এসে বুঝতে পারছি, আপনার লোক আর আপনার নেই। আপনি বলছেন, আমার লোক আমার কথা শুনছে না।’’

মুখ্যমন্ত্রীর কথা না শুনে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশমতো কাজ করার ফলে পুলিশের বিরুদ্ধে মমতা তোপ দেগেছেন বলে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে। কমিশন যাতে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়, সেই দাবিও করা হয়েছে। এর পরেই নির্বাচন সদন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সবিস্তার বক্তব্যের তর্জমা এবং ভিডিও সিডি চেয়ে পাঠানো হয়েছে। মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতর পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসকের কাছে দ্রুত তা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সরকারি ভাবে হাতে পাওয়ার পরে কী ব্যবস্থা নিতে পারে নির্বাচন কমিশন?

এই প্রশ্নে প্রশাসনিক মহলে চর্চা চলছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু আমলা জানিয়েছেন, চাইলে কমিশন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে পারে। অতীতে পর্যবেক্ষককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে একই ভাবে বিমান বসু এবং প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল কমিশন। সেই মামলা বহু দিন চলেছে। এ বারও আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য তৃণমূল প্রার্থী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা এবং বীরভূমের তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে কমিশন। ভোটের দিনে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার চেষ্টার অভিযোগে তৃণমূল প্রার্থী সোনালি গুহ ও বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে কমিশন। নির্বাচনী বিধিভঙ্গের দায়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও নোটিস পাঠিয়েছে নির্বাচন সদন।

এ বারও কমিশন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব নেবে বলেই ইঙ্গিত মিলেছে। তাই ৫ মে শেষ দফার নির্বাচনে মাত্র ২৫টি আসনের জন্য প্রায় ৩৬ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী নামাচ্ছে কমিশন। কোনও হুমকিতেই যে নির্বাচনী নিরাপত্তা নিয়ে আপোস করা হবে না, সেই বার্তা দিতে পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টি আসনে থাকবে প্রায় ২৩ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী। সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রাজ্য পুলিশকেও রাখা হচ্ছে। কোচবিহারের ৯টি আসনের জন্য থাকছে ১২ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী। নির্বাচন সদনের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে এখন প্রতি দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরাসরি কমিশনকে রিপোর্ট দিতে হচ্ছে। ডিজির উপর দায় ন্যস্ত করার পরে পুলিশের আচরণে বদল এসেছে। শেষ দফার নির্বাচনেও পুলিশ যেন তার চরিত্র বদল না করে, সেই নির্দেশ ডিজি-কে দেওয়া হয়েছে।’’

তবে শুধু ডিজি-র নির্দেশ নয়, নিচুতলার পুলিশকর্মীদের মধ্যেও নিরপেক্ষ থেকে কাজ করার তাগিদ তৈরি হয়েছে বলে কমিশন-কর্তারা মনে করছেন। ইতিমধ্যেই প্রায় ৭০ জন অফিসারকে সরিয়ে কমিশন এই বার্তাই দিতে চেয়েছে যে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বেচাল কিছু সহ্য করা হবে না। মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ-হুমকি প্রসঙ্গেও নসীম জৈদীরা একই নীতি অবলম্বন করবেন বলে কমিশন সূত্রের খবর।

assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy