Advertisement
E-Paper

উপদ্রব নেই, তবু জঙ্গলমহলে থাকছে পাহারা

স্লোগান দিচ্ছিলেন সিআরপি জওয়ানেরা। বাসে, মিনিট্রাকে চড়ে বাঁকুড়ার ফুলকুসমা নিত্যবালা বালিকা বিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময়ে।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২২

স্লোগান দিচ্ছিলেন সিআরপি জওয়ানেরা। বাসে, মিনিট্রাকে চড়ে বাঁকুড়ার ফুলকুসমা নিত্যবালা বালিকা বিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময়ে। ঝাড়খণ্ডের মুসাবনি থেকে পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলে আসা সিআরপি-র কমান্ডান্ট সঞ্জীব দ্বিবেদী বললেন, ‘‘মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় যাওয়ার আগে বহু জওয়ানই এমন ‘নারা’ বা স্লোগান দেন। নিজেদের চাঙ্গা রাখতে, জোশ বাড়াতে।’’

জঙ্গলমহলে ভোটের আগের দিন, ৩ এপ্রিল দুপুরের ঘটনা। কিন্তু এই ভাবে স্লোগান দিয়ে জোশ বাড়ানোর কি আদৌ দরকার ছিল?

মাওবাদীদের টিকিটিও দেখা গেল না জঙ্গলমহলে বিধানসভা নির্বাচনে। ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে বা সংসদীয় গণতন্দ্রের বিরুদ্ধে পোস্টার সাঁটা, লিফলেট বিলি কিংবা দেওয়াল লিখন— কিছুই নেই। কোথাও নাশকতা ঘটানো তো দূরের কথা। ২০০১, ২০০৬ ও ২০১১-র পর এই প্রথম বিধানসভা ভোটে মাওবাদী প্রভাব চোখে পড়ার মতো অনুপস্থিত।

মাওবাদী প্রভাবিত রাজ্যগুলোর মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিচারে পশ্চিমবঙ্গ ‘আংশিক ভাবে প্রভাবিত’। পুলিশ-প্রশাসনের অন্দরেই প্রশ্ন, এ বার কি পশ্চিমবঙ্গ ‘কম প্রভাবিত’ মাওবাদী রাজ্য হিসেবে গণ্য হবে? যে শ্রেণিতে এখন আছে কেবল উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ।

২০১২-র ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম মেদিনীপুরের মধুপুর গ্রামে শেষ বার গুলি চালিয়েছিল মাওবাদীরা এবং ২০১১-র নভেম্বরে পুরুলিয়ার বলরামপুরে তিন জনের পর মাওবাদীদের হাতে এই রাজ্যে আর কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (আইবি)-র এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্যে মাওবাদীদের শক্তি যে তলানিতে ঠেকেছে, এ বার জঙ্গলমহলের ভোটই তার প্রমাণ।’’ তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গকে ‘কম মাওবাদী প্রভাবিত’ রাজ্য বলে দেখতে এখনই নারাজ রাজ্য পুলিশ বা কেন্দ্রীয় সামরিক বাহিনী— দু’পক্ষই।

রাজ্য পুলিশের এক এডিজি অফিসার বলছেন, ‘‘মাওবাদীরা এককাট্টা হওয়ার চেষ্টা করছে, তবে এখনও পারেনি। অদূর ভবিষ্যতেও পারবে না, তার গ্যারান্টি কোথায়?’’

মাওবাদী প্রভাবিত জেলা বলতে রাজ্য সরকার বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম ও পশ্চিম মেদিনীপুরকে গণ্য করে। ভোট উপলক্ষে নয়, এমনিতেই চারটি জেলায় মোট ৪০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ বা আইবি-র এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্যে গত চার বছর ধরে মাওবাদী দৌরাত্ম্য নেই। কিন্তু দেশের ‘প্রচণ্ড ভাবে মাওবাদী প্রভাবিত’ রাজ্যগুলোর অন্যতম, ঝাড়খণ্ড জঙ্গলমহল লাগোয়া। অগুনতি জায়গা দিয়ে ঝাড়খণ্ড থেকে বাংলায় অনায়াসে ঢুকে পড়া যায়।’’ ওই গোয়েন্দা অফিসারের বক্তব্য, কার্যকলাপ বন্ধ ঠিকই। তবে মাওবাদী স্কোয়াডের আনাগোনা জঙ্গলমহলে বন্ধ হয়নি। নিরাপত্তা বাহিনী একটু ঢিলে দিলেই পড়শি রাজ্য থেকে ওরা এখানে ঢুকে বড় কিছু ঘটাতে পারে। বিশেষ করে যেখানে ওরা নতুন ভাবে সংগঠিত হওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছে।

সিআরপি-র এই রাজ্যের এক শীর্ষ অফিসার জানাচ্ছেন, চার দিন আগেই পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ানের কুচিয়ায় সিআরপি-র ক্যাম্প থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে ঝাড়খণ্ডে মাওবাদীদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর গুলির লড়াই হয়েছে। এই রাজ্যের সিআরপি-র জওয়ানেরাই ওই লড়াই করেন। আবার ২০১৪-র সেপ্টেম্বরে জঙ্গলমহল লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের চেকাম গ্রামে মাওবাদীদের গুলিতে বীরভূমের পাড়ুইয়ের বাসিন্দা এক কোবরা জওয়ান নিহত হন।

সিআরপি-র ওই কর্তার কথায়, ‘‘এই রাজ্যেরই বাঁকুড়া জেলার ছেলে রঞ্জিত পালের স্কোয়াড পশ্চিমবঙ্গ ঘেঁষা ঝাড়়খণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক নাশকতা ঘটাচ্ছে। ওরা শুধু পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক সীমানায় ঢুকছে না, এ-ই যা। কিন্তু ঢুকতে কত ক্ষণ?’’

তা হলে মাওবাদীরা এ বার ঝাড়খণ্ড সীমানা ঘেঁষা বাংলার গ্রামগুলোতেও ভোট বয়কটের পোস্টার দিতে পারল না কেন?

এক গোয়েন্দা অফিসার বলেন, ‘‘গত বার পরোক্ষে ওরা তৃণমূলকে সমর্থন করে। পরে জানায়, সেটা ভুল হয়েছিল। তা ছাড়া, ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে পোস্টার দিলেও ওদের ডাকে খুব কম লোকই সাড়া দিত। তাই, মাওবাদীরা এখন শুধু জল মাপছে।’’

assembly election 2016 jangalmahal surbek biswas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy