Advertisement
E-Paper

এখানে সন্ত্রাস চলবে না, বুঝে গিয়েছে ওরা

নানুরে না হয় এক কাজল শেখ আছে। কিন্তু, পাড়ুইয়ের মাখড়া গ্রামে কে আছেন যে, সেখানকার বুথেও এজেন্ট নেই শাসকদলের? তা-ও আবার এমন বুথ, যা অনুব্রত মণ্ডলের খাসতালুক বোলপুর কেন্দ্রের মধ্যে!

অত্রি মিত্র ও মহেন্দ্র জেনা

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:৪৭

নানুরে না হয় এক কাজল শেখ আছে। কিন্তু, পাড়ুইয়ের মাখড়া গ্রামে কে আছেন যে, সেখানকার বুথেও এজেন্ট নেই শাসকদলের? তা-ও আবার এমন বুথ, যা অনুব্রত মণ্ডলের খাসতালুক বোলপুর কেন্দ্রের মধ্যে!

মাখড়া গ্রামের একটু আগে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জটলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ অফিসার মুচকি হাসলেন। নিচু স্বরে বললেন, ‘‘বিশ্বাস না হলে বুথের ভিতরে গিয়ে নিজে চোখে দেখেই আসুন না!’’ ভুল বলেননি তিনি। মাখড়ায় ঢোকার মুখে খালপাড় থেকে গ্রামের ভিতরে যত দূর চোখ যায়— কোথাও জোড়াফুলের চিহ্নমাত্র নেই। যা আছে, হয় পদ্মফুল, না হলে বাম-কংগ্রেস জোটের আরএসপি প্রার্থীর প্রতীক কোদাল-বেলচা। কেষ্টর তালুকে যা একেবারেই বেমানান।

খালের মুখেই বিরাট বড় শহিদ বেদী— নিহত বিজেপি সমর্থক শেখ তৌসিফের স্মৃতিতে তৈরি। খাল পেরোতেই গাছের ছাওয়ায় মাচা বেঁধে বসে জনা তিরিশ গ্রামবাসী। ‘মিডিয়া’ শুনেই বৃদ্ধ শেখ আসগর আলি এগিয়ে এসে বললেন, ‘‘শনিবার রাতেও তৃণমূল নেতা নজাই শেখ দলবল নিয়ে হুমকি দিয়ে গিয়েছে। আসমত
আলির তৃণমূলের এজেন্ট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, সকাল থেকে কারও দেখা নেই। ওরা বুঝে গিয়েছে, এখানে সন্ত্রাস চলবে না!’’

অথচ ছবিটা এমন ছিল না গত পঞ্চায়েত বা লোকসভা ভোটে। বিরোধীদের অভিযোগ, গ্রামবাসীর বদলে ইভিএমের সামনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছিল তৃণমূলের এজেন্ট। ছবি বদলে যায় লোকসভা ভোটের পর। মোদী হাওয়ায় ভর করে পাড়ুই ও ইলামবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রভাব বাড়াতে থাকে বিজেপি। বাম কর্মী-সমর্থকদের অনেকেও চলে আসেন গেরুয়া ছাতার তলায়। যাঁদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। অভিযোগ, ২০১৪ সালের ২৭ অক্টোবর মাখড়া দখল করতে এসেছিল তৃণমূলের দলবল। কিন্তু, গ্রামবাসীর প্রতিরোধে ফিরতে হয় তৃণমূলের বাহিনীকে। তার পর
থেকেই তৃণমূলের ‘অধরা’ই থেকে গিয়েছে মাখড়া।

গাছতলা থেকে আর একটু এগোলেই তৌসিফের বাড়ি। তাঁর বাবা শেখ সওকত আলি ও দাদা সাবির আলি বলেন, ‘‘লোকসভা আর পঞ্চায়েতে আমরা ভোট দিতে পারিনি। তাতেও ওদের শান্তি হয়নি। অক্টোবরে এসেছিল গ্রাম দখল করতে। ছেলেটাকে মেরে ফেলল। ওর রক্ত বৃথা যায়নি। গ্রামবাসীরা তার পর থেকে কসম খেয়েছে, জল্লাদদের আর ঢুকতে দেবে না!’’

শুধু মাখড়া নয়, ওই ঘটনার পর থেকে একে-একে তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে পাড়ুই থানার ছাতারবন্দি, বেলপাতা, চৌমণ্ডলপুর, মঙ্গলডিহি, হাঁসড়া, গোরাপাড়া, ব্রাহ্মণডিহির মতো গ্রামগুলি। ওই সব গ্রামের বুথে এ দিন তৃণমূল পোলিং এজেন্ট দিতে পারলেও ‘চড়াম-চড়াম’ ঢাকের বাদ্যির আওয়াজ হল না। বরং, বিজেপি-সিপিএমের কর্মীরা দিনভর আগলে রাখলেন অধিকাংশ বুথ।

বিরোধী দলের নেতাদের দাবি, পাড়ুই নিয়ে চিন্তা থাকায় দিনের আলো ফোটার আগেই তৃণমূল বেছে নেয় ইলামবাজারের ডুমরুট, বারুইপুরের মতো এলাকাগুলি। অভিযোগ, ভোরবেলা ডুমরুট গজেন্দ্রগামিনী প্রাথমিক স্কুলে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্টরা আসার সময়েই তৃণমূলের
দলবল বাঁশ, মাস্কেট, থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল
নিয়ে তাঁদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জখম হন বিজেপি এবং সিপিএমের পোলিং এজেন্ট-সহ ১১ জন।

কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতায় ওখানেও চিত্রটা পাল্টে গেল বেলা বাড়তে-বাড়তে। বুথে কর্তব্যরত এক জওয়ানের ফোন পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে ওখানে চলে এল কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘কুইক রেসপন্স টিম’। গ্রেফতার পাঁচ তৃণমূল সমর্থক। বেলা দশটায় বিরোধী দলের জখম সমর্থকেরা বুথে ফিরলেন, ভোটও দিলেন। বুকে বল পেয়ে ভোটের লাইন দাঁড়ালেন গ্রামবাসীরাও। যা দেখে বিরোধীদের দাবি, ‘‘বোলপুর এ বার ফিফটি-ফিফটি!’’

শুনে তৃণমূলের প্রার্থী মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলছেন, ‘‘ফিফটি ঠিকই। লিখে নিন, আমি জিতব পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি ভোটে।’’

assembly election 2016 terror
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy