Advertisement
E-Paper

একের পর এক হামলা শাসক দলের, রেহাই নেই দুধের শিশুরও

ঈশানী পাত্র, প্রীতি বর, মণিতা মাইতি, সুমনা দিগার...ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে শাসক দলের দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। ভোটের পরে বিরোধী সমর্থকদের বাড়িতে চড়াও হওয়া তৃণমূল কর্মীরা ছাড় দিচ্ছে না এমনকী দুধের শিশুকেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০৪:৩১
মায়ের কোলে আহত প্রীতি বর। হরিদেবপুরে। (ডান দিকে) মণিতা মাইতিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসছেন মা। — নিজস্ব চিত্র

মায়ের কোলে আহত প্রীতি বর। হরিদেবপুরে। (ডান দিকে) মণিতা মাইতিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসছেন মা। — নিজস্ব চিত্র

ঈশানী পাত্র, প্রীতি বর, মণিতা মাইতি, সুমনা দিগার...

ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে শাসক দলের দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। ভোটের পরে বিরোধী সমর্থকদের বাড়িতে চড়াও হওয়া তৃণমূল কর্মীরা ছাড় দিচ্ছে না এমনকী দুধের শিশুকেও।

শনিবার, ভোটের দিন, রাতে বালিগঞ্জের পেয়ারাবাগানে হামলা চালানোর সময় ঈশানী পাত্র নামে এক শিশুকে ছুড়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। সেই রাতেই হরিদেবপুরের দড়িরচক গ্রামে প্রীতি বরের মাথা ফাটে তৃণমূল দুষ্কৃতীদের আক্রমণে। কলকাতার বিদ্যাসাগর হাসপাতালে এনে চিকিৎসা করতে হয় তার।

সেই অস্বস্তি ঢাকতে সোমবার প্রীতির বাড়িতে যান কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সামনেই প্রীতির মা বাসন্তী অভিযোগ করেন, ‘‘এখনও তৃণমূলের লোকেরা বলছে, বাড়ি ছাড়া করব।’’ আর তার পরেই জানা যায়, দড়িরচক থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে সাতগাছিয়ার রামচন্দ্রনগরে চার বছরের শিশুকন্যা মণিতা মাইতিকে খাট থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল। মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি তার দাদু অজয় মাইতি।

এ দিন আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অজয়বাবু জানান, দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে তিনি খাটে শুয়ে ছিলেন। পাশে বসে খেলছিল নাতনি মণিতা। স্থানীয় দুই তৃণমূল কর্মী দিব্যেন্দু মাইতি ও বিদ্যুৎ বেরা আচমকা ঘরে ঢুকে জিনিস ভাঙচুর শুরু করে। তা দেখে মণিতা কাঁদতে শুরু করে। তখনই তাকে খাট থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে অজয়বাবু বলেন, ‘‘এর পরে আমাকে বিছানা থেকে টেনে নামিয়ে মাটিতে ফেলে মারতে থাকে। বুট দিয়ে বুকে লাথি মারে। লাঠি দিয়ে হাঁটুতে মেরে ফাটিয়ে দেওয়া হয়।’’ পরে আত্মীয় ও কয়েক জন প্রতিবেশী এসে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

হুগলির গোঘাটে এ দিন সকালে লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছে সুমনা দিগার নামে পাঁচ বছরের আরও এক শিশু। সেখানেও অভিযুক্ত তৃণমূল। রবিবার রাতে দক্ষিণ শহরতলির কেন্দুয়ায় সিপিএম সমর্থক সুশান্ত নস্করের বাড়িতে হামলার আগে ঢিল মারা হয়েছিল। কপালজোরে তাঁর চার বছরের নাতির চোট না-লাগলেও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সে।

রাজনৈতিক সংঘর্ষ বা ভোট পরবর্তী হামলায় বিরোধী দলের কর্মীরা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। কিন্তু এ ভাবে শিশুদের উপরে হামলা চালানোর নজির নেই বললেই চলে। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘চোর-ডাকাতেরাও বড় বাধার সামনে না-পড়লে শিশুদের উপরে হামলা চালায় না। তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের মধ্যে সেটুকু বোধও নেই!’’

শাসক দলের এই সন্ত্রাস বড়সড় ক্ষত তৈরি করেছে আক্রান্ত শিশুদের মনে। আতঙ্কিত ঈশানীর মুখে একটাই কথা, ‘‘রাত হলে ওরা আবার আসবে না তো?’’ আর দশ বছরের প্রীতির প্রশ্ন, ‘‘বাবা, দাদু ভোট দিল বলে আমায় মারল? আচ্ছা ভোট দিলে মারে কেন?’’ অচেনা লোক দেখলেই আতঙ্কে মায়ের কোলে সেঁধিয়ে যাচ্ছে সাতগাছিয়ার মণিতা। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের মতে, ‘‘এই ধরনের ঘটনা মনে গেঁথে গেলে ভবিষ্যতে শিশুটির দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক হতে পারে।’’

শিশুদের উপরে এ ভাবে হামলা হচ্ছে কেন? তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি শোভনবাবুর মন্তব্য, ‘‘এমন ঘটনা কখনই কাম্য নয়। পুলিশের উচিত তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।’’ পুলিশ অবশ্য রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। জেলার এসপি সুনীল চৌধুরী জানান, তদন্ত শুরু হয়েছে।

assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy