Advertisement
০২ মে ২০২৪

‘অপপ্রচারই’ অর্ধেক করল ব্যবধান, দাবি শোভনের

ভোটের দিন থেকেই জানতেন, বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে তাঁর জয় নিশ্চিত। আর এ বার তো তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কোনও রাজনৈতিক দলেরও নয়। ফলে, গত বিধানসভার থেকেও ভাল ব্যবধানে জয় আশা করেছিলেন। কিন্তু জয় এলেও সেই ব্যবধান যে অর্ধেক হয়ে যাবে, সেটা মনে হয় দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাই গণনা কেন্দ্র থেকে বেরোনোর পরে বৃহস্পতিবার তিনি ব্যবধান কমার জন্য দায়ী করলেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারকে।

জয়ের হাসি। বেহালায়। — নিজস্ব চিত্র।

জয়ের হাসি। বেহালায়। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০০:৫০
Share: Save:

ভোটের দিন থেকেই জানতেন, বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে তাঁর জয় নিশ্চিত। আর এ বার তো তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কোনও রাজনৈতিক দলেরও নয়। ফলে, গত বিধানসভার থেকেও ভাল ব্যবধানে জয় আশা করেছিলেন। কিন্তু জয় এলেও সেই ব্যবধান যে অর্ধেক হয়ে যাবে, সেটা মনে হয় দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাই গণনা কেন্দ্র থেকে বেরোনোর পরে বৃহস্পতিবার তিনি ব্যবধান কমার জন্য দায়ী করলেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারকে। কোন অপপ্রচার, তা মেয়র অবশ্য নিজমুখে না বললেও খোদ তৃণমূলের একাংশের মতে, নারদ-কাণ্ডকেই বোঝাতে চেয়েছেন তিনি।

এ দিন সকাল থেকেই স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় এবং কয়েক জন সঙ্গীকে নিয়ে ডায়মন্ড হারবার রোডের ব্রতচারী স্কুলের গণনা কেন্দ্রে হাজির ছিলেন শোভনবাবু। গণনা চলাকালীন তাঁদের নিয়েই কেন্দ্রের ভিতরে একটি ছোট ঘরে কাটিয়েছেন বেশিরভাগ সময়। আর প্রায়ই হাতের দু’টি মোবাইল থেকে ফোন করেছেন এ দিক-ও দিক। মাঝখানে এক বারের জন্য বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে স্কুলের সেই ছোট ঘরেই বসে রইলেন। মাঝে মাঝে অবশ্য দলীয় এজেন্টরা এসে বুথ ভিত্তিক ফলের কথা জানিয়ে যাচ্ছিলেন মেয়রকে।

প্রথম রাউন্ড থেকেই ওই বিধানসভা কেন্দ্রের জোট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অম্বিকেশ মহাপাত্রের থেকে এগিয়ে ছিলেন শোভনবাবু। তবে ব্যবধান খুব একটা বেশি ছিল না। প্রথম দু’রাউন্ডের শেষে তা ছিল মাত্র তিন হাজারের মতো। ফলে জোট প্রার্থী হলেও রাজনীতিতে আনকোরা অম্বিকেশবাবু যে এতটা ভোট পাবেন, সেটা শোভনবাবু, তাঁর সঙ্গী বা দলীয় সমর্থকেরা— কেউই বুঝে উঠতে পারেননি। মাঝে মাঝে অবশ্য কোনও রাউন্ডে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলেন মেয়র। আবার কখনও দু’জনের ব্যবধান কমে গিয়েছিল।

কিন্তু এই টানাপড়েনের মধ্যেই মেয়র যখন প্রায় ১২ হাজার ব্যবধানে এগিয়ে, তখনই ডায়মন্ড হারবার রোডের উপরে তৃণমূল সমর্থকেরা বাজি ফাটানো শুরু করে দিয়েছেন। সঙ্গে জয়ধ্বনি আর সবুজ আবির মাখামাখি। রাস্তায় রীতিমতো কালীপটকার চেন ফেলে ফাটানো শুরু হয়। আর সেই রেশ চলতে থাকে বেলা গড়িয়ে দুপুর পর্যন্ত। পরে সস্ত্রীক শোভনবাবু সঙ্গীদের নিয়ে গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে পুলিশের প্রথম ব্যারিকেড পেরোনো মাত্র দলীয় সমর্থকেরা ছুটে আসেন তাঁর দিকে। এক সমর্থক তো রজনীগন্ধার মালাও পরিয়ে দেন।

সমর্থকদের দাবি, মেয়রের জয় নিশ্চিত তা তাঁরাও জানতেন। এমনকী, ২০১১-র বিধানসভা ভোটের থেকেও ভাল ফলের আশা করেছিলেন তাঁরা। কারণ, জোকা ১ এবং ২ গ্রাম পঞ্চায়েত ভেঙে কলকাতা পুরসভার মধ্যে ঢুকে যাওয়ার পরে সেখানে লোকজনের জন্য মেয়র বহু কাজ করেছেন বলে দাবি করেছেন সমর্থকেরা। আগের বারের ভোটে ওই অঞ্চলের সিপিএম সমর্থকদের ভোট দিতেই দেওয়া হয়নি। এ বার সেই ভোটারদের একটি অংশ ভোট দিলেও খুব বেশি ভোট কাটবে না বলেই তৃণমূল সমর্থকদের বিশ্বাস ছিল। বাস্তবেও তার প্রতিফলন ফলাফলে ধরা পড়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অম্বিকেশ মহাপাত্র ৭০ হাজারের উপরে ভোট পেয়ে মেয়রের ভোটের ব্যবধান যে প্রায় অর্ধেক করে দেবেন, তা কেউই যেন ভাবতে পারেননি। গত বিধানসভা ভোটে মেয়র জয় পেয়েছিলেন প্রায় ৪৮ হাজার ভোটে। এ বার সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৪৬৮। এটা কী প্রত্যাশা করেছিলেন ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী শোভনবাবু?

এর জন্য অবশ্য মেয়র ‘‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অপপ্রচারকেই’ দায়ী করেছেন। যদিও একই সঙ্গে তাঁর জবাব, ‘‘সাধারণ মানুষ সেই অপপ্রচারকে মিথ্যে প্রমাণিত করে মা-মাটি-মানুষকে ভোট দিয়েছেন। আর, সেই একই কারণে রাজ্য জুড়ে তাঁর দলের এমন ফল হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 Sovan Chatterjee TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE