Advertisement
E-Paper

সবুজ আবির উড়িয়ে মিছিল গেটে, তালা আলিমুদ্দিনে

আক্ষরিক অর্থেই তালা পড়ে গেল আলিমুদ্দিনে! বিজয় রথের যাত্রা যখন ক্রমে এগোচ্ছে সেই সময় তৃণমূলের বাইক মিছিল হাজির আলিমুদ্দিনের গেটের সামনে। উড়ল সবুজ আবির। সঙ্গে বাইকের হর্ন আর আকাশ ফাটানো চিৎকারে কান পাতা দায়। বেগতিক দেখে আলিমুদ্দিনের নিরাপত্তা কর্মীরা তালা ঝুলিয়ে দিলেন গেটে।

প্রসূন আচার্য ও স্বপন সরকার

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:২৬
আলিমুদ্দিনের সামনে তৃণমূলের মিছিল। বৃহস্পতিবার।— নিজস্ব চিত্র।

আলিমুদ্দিনের সামনে তৃণমূলের মিছিল। বৃহস্পতিবার।— নিজস্ব চিত্র।

আক্ষরিক অর্থেই তালা পড়ে গেল আলিমুদ্দিনে!

বিজয় রথের যাত্রা যখন ক্রমে এগোচ্ছে সেই সময় তৃণমূলের বাইক মিছিল হাজির আলিমুদ্দিনের গেটের সামনে। উড়ল সবুজ আবির। সঙ্গে বাইকের হর্ন আর আকাশ ফাটানো চিৎকারে কান পাতা দায়। বেগতিক দেখে আলিমুদ্দিনের নিরাপত্তা কর্মীরা তালা ঝুলিয়ে দিলেন গেটে।

দোতলায় সেক্রেটারিয়েট রুমে তখন উপস্থিত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রেরা। পরিস্থিতি এমন হল যে বুদ্ধবাবুর গাড়ির চালককেও অতি উৎসাহী তৃণমূল কর্মীরা টেনে নিয়ে গিয়ে সবুজ আবিরে ভরিয়ে দিল। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘আমি তো সরকারি কর্মী। বুদ্ধবাবুর গা়ড়ি চালাই, এটা কি অপরাধ? আমি তো কাল কোনও মন্ত্রীর গাড়িও চালাতে পারি!’’

কী হচ্ছে দেখতে দোতলার জানলায় তখন ছুটে এসেছেন মহম্মদ সেলিম। সঙ্গে রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রচার পর্বে যাঁরা জোটের জয় নিশ্চিত বলে দাবি করে এসেছেন।

এ দিন সকাল থেকেই সূর্য ওঠেনি। বৃষ্টি পড়ছিল। প্রাথমিক ফল খারাপ দেখেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সূর্যকান্ত-বুদ্ধদেববাবু বা শ্যামল চক্রবর্তীরা। বিমান বসু এক বার মাত্র আলিমুদ্দিন থেকে বেরিয়েছিলেন হো চি মিনের জন্মদিনে তাঁর মূর্তিতে মালা দিতে। ফিরলেন থমথমে মুখ নিয়ে। জোট কাজে আসেনি বুঝেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘জোট কোথায়? এ তো জট! জোট তো মিডিয়া করেছে। এটা আসন সমঝোতা।’’ রায়দিঘি আসনে কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় জিতবেন ধরেই বসে ছিল সবাই। তিনিও হেরেছেন শুনে বিমানবাবু বলেন, ‘‘এক জন কলকাতায় বসে থেকে জিতে গেল, আর এক জন ওখানে পড়ে থেকেও হারল!’’ বুদ্ধবাবু কিছু ক্ষণের জন্য বেরিয়েছিলেন ওই ঘর থেকে। স্বীকার করলেন— ২০০৯ থেকে মমতার জনপ্রিয়তায় যে একটুও ভাটা পড়েনি, সেটা ধরতে ব্যর্থ আলিমুদ্দিন থেকে জেলার পোড় খাওয়া সিপিএম নেতারাও! দুর্নীতির অভিযোগ কাজ দেয়নি, এটা বুঝে সিপিএম নেতারা কী বলবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তখনই রাখঢাক না রেখে সেলিম বলে ফেললেন, ‘‘আমরা কংগ্রেসকে ভোট দিলেও কংগ্রেসের সবাই আমাদের ভোট দিয়েছে কি না— সে প্রশ্নটা রয়েই গেল!’’ পরে সূর্যবাবু অবশ্য উত্তর এড়িয়ে বললেন, ‘‘পর্যালোচনা না-করে বলতে পারব না।’’

এরই মধ্যে মদন ঘোষ স্মিত হেসে বললেন, ‘‘আরে সিঙ্গুরে রবীনের খবর কী? একটু দেখো তো। বেচারা অনেক খাটাখাটি করেছিল।’’ পাশ থেকে এক জন বললেন, ‘‘সিটটা তো শুরু থেকেই ড্যামেজ!’’

কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান সেনাপতি সব সময়েই যিনি সম্পাদক, তিনিই। এক তলার ঘরে বসে তখন কর্মীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে— প্রমোদ দাশগুপ্ত থেকে বিমান বসু সকলেই বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের মুখ দেখলেও, সূর্য-জমানার মতো এমন বিপর্যয় কখনও হয়নি। তা হলে কি সূর্যের নেতৃত্ব প্রশ্নের মুখে? তিনি কি পরাজয়ের দায় মাথায় নিয়ে ইস্তফা দেবেন? সাংবাদিক বৈঠকে এ প্রশ্ন উঠতেই সূর্যবাবুর জবাব, ‘‘আমরা কেউ ইচ্ছা করে পদ গ্রহণ করি না। আবার তা ত্যাগও করতে পারি না। এ ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার দলই নেয়।’’

শ্যামলবাবু দোতলার অফিস ঘরে বসে কলকাতার পরাজিত সিপিএম প্রার্থীদের ফোন করছিলেন। খোঁজ নিচ্ছিলেন, বেলগাছিয়ার কনীনিকা ঠিক মতো বাড়ি ফিরেছে তো? টালিগঞ্জের মধুজাকে ফোন করে বললেন, ‘‘ভাল লড়েছিল। সব ঠিক আছে তো?’’ এক জন বললেন বেহালায় লোকসভা ভোটের তুলনায় কৌস্তুভ ব্যবধান অনেকটা কমিয়েছে। শ্যামলবাবু কৌস্তুভকে অভিনন্দন জানালেন। বাম আমলেও নিজের পরাজয় দেখেছেন শ্যামলবাবু। দেখেছেন উত্তাল ষাটের দশকও। তিনি বললেন, ‘‘ভেঙে পড়লে চলবে না।’’ এর মাঝেই ঘরে ঢুকলেন কসবার প্রার্থী শতরূপ। শ্যামলবাবু বললেন, ‘‘ভাল লড়েছিল। ওয়েল ডান। ও ঘরে বুদ্ধ, সূর্যরা আছে। বিমানদা আছে। দেখা করে আয়।’’ শতরূপ হতাশ হয়ে বেঞ্চে বসে পড়ল। বলল, ‘‘হেরে গেলাম। কী আর দেখা করব!’’ শ্যামলবাবু কিন্তু নাছোড়। ‘‘কিন্তু লড়াইটা তো করেছিস। সকাল থেকে কিছু খেয়েছিস?’’ শতরূপের জবাব এল, ‘‘না।’’ শ্যামলবাবু স্নেহের কণ্ঠে বললেন, ‘‘তা হলে খেয়ে আয় আগে। আরে আগামী দিনে লড়তে হবে তো!’’

ভোটে তৃতীয় দল হয়ে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদাও খোয়াল সিপিএম। ঘরে বসে থাকা এক কর্মী জানতে চাইলেন, ‘‘তা হলে বিরোধী দলনেতা কে হবে? আমরা তো কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেছিলাম।’’ কেউ এক জন উত্তর দিলেন, ‘‘কংগ্রেস যাকে করবে তিনিই হবেন।’’ শুরু হল আলোচনা— এই জোট কি তা হলে কংগ্রেসকেই লাভবান করল?

সূর্যবাবু কিন্তু দমছেন না। ভোট-পর্বে তিনি রোজই বলতেন, সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে। মানুষের জোট দু’শোর দিকে এগোচ্ছে। তা হলে কি তিনি মানুষের মন পড়তে ব্যর্থ হলেন? সূর্যবাবুর জবাব, ‘‘ভোট পর্বে একটা অংশের মানুষ নীরব ছিল। ভেবেছিলাম, তারা আমাদের পক্ষে। কিন্তু নীরব-ভোটাররা শেষ পর্যন্ত তৃণমূলেই ভোটটা দিলেন!’’

assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy