অসমের রাঙাপাড়ায় নির্বাচনী প্রচার নরেন্দ্র মোদীর। রবিবার উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪। রামনগর মাঠ। প্রধান বক্তা প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী।
সে দিন মোদীর মূল বক্তব্য ছিল— বিজেপি ক্ষমতায় এলে ডি ভোটার, ডিটেনশন ক্যাম্প বলে কিছু থাকবে না। অর্জুন নমঃশূদ্রের মত কাউকে আর প্রাণ দিতে হবে না। নাগরিকত্ব পাবেন বাংলাদেশ থেকে অসমে আসা হিন্দু শরণার্থীরা। শুধু বাংলাদেশ কেন, বিশ্বের যে কোনও জায়গায় হিন্দুরা নির্যাতিত হলে তাঁদের আশ্রয়স্থল হবে ভারতবর্ষ।
২৭ মার্চ ২০১৬। কালীনগর মাঠ। প্রধান বক্তা সেই মোদী।
কিন্তু আজ তাঁর বক্তব্যে এক বারের জন্যও শোনা গেল না ডি ভোটার বা ডিটেনশন ক্যাম্প শব্দগুলি। দিনদশেক আগে ডিটেনশনে ক্যাম্পে মারা গিয়েছেন ৭৫ বছরের বুলু শব্দকর। নাগরিকত্বের বদলে আমৃত্যু জেলেই কাটাতে হল তাঁকে। তাঁর নামও এ দিন বললেন না প্রধানমন্ত্রী।
আধঘণ্টার বক্তব্যে নাগরিকত্ব শব্দটি উচ্চারণ না করেই অবশ্য তিনি বলেন, ‘‘আমি চাই এখানকার প্রতিটি মানুষ মূল ভারতীয় জীবনধারায় সংযুক্ত থাকুক। সে জন্য আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’
কয়েক দিন আগে শিলচর এসে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ উদ্বাস্তুদের জন্য অনেক কথা বলেছিলেন। সঙ্গে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। আসল প্রসঙ্গে কিছু না বললেও গগৈয়ের চ্যালেঞ্জের জবাব দেন মোদী। মুখ্যমন্ত্রীর বয়স নিয়েও কটাক্ষ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘কয়েক দিন পর ৯০-এ পা দেবেন। এখন বিশ্রাম নিন।’’ বিজেপি সরকারে এসে গগৈয়ের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের পূর্ণ ব্যবস্থা করবে বলেও তিনি বক্রোক্তি করেন। মোদীর বক্তব্য— গগৈ তাঁর সঙ্গে লড়তে চাইলেও তিনি আগ্রহী নন। কারণ ভারতীয় সংস্কৃতি বৃদ্ধদের সম্মান করে, তাঁদের কাছ থেকে আশীর্বাদ গ্রহণ করে। মোদীও তাঁর আশীর্বাদ দিয়ে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়তে চান। তিনি শোনান, তাঁর লড়াই বেকারত্ব-অশিক্ষা-অন্ধবিশ্বাস-ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে। গগৈকেও তাঁর বিরুদ্ধে লড়াইর বাসনা ছেড়ে সে সবের বিরুদ্ধে লড়তে পরামর্শ দেন মোদী।
কংগ্রেস গত কাল সাংবাদিক সম্মেলনে মোদীর উদ্দেশে ১০টি প্রশ্ন রেখেছিল। প্রশ্নমালার কথা জেনেই হোক, বা না-জেনে প্রধানমন্ত্রী জবাব দেন— ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরের কাজ অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময় শুরু হয়েছিল। তিনি তখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পশ্চিম প্রান্তের কাজের শিলান্যাস করেছিলেন। তিনিই এ বার সেই কাজ শেষ করে এর উদ্বোধন করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কাছাড় কাগজকল বন্ধের দায় কংগ্রেসের কাঁধে চাপিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, সমস্ত বন্ধ কারখানা তিনি খুলবেন।
নির্বাচনী প্রচারে এসে মোদী কী কী বলেননি, পরে এ নিয়ে জোর চর্চা হলেও সভাস্থলে তাঁর প্রতিটি কথায় উপস্থিত জনতা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। মাঠের চারদিক থেকে একই আওয়াজ ভেসে আসছিল— মো-দী, মো-দী।
প্রত্যাশিত ভাবেই ব্রডগেজ লাইনে শিলচরকে যুক্ত করার কৃতিত্ব দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। জানতে চান, কী অসুবিধা ছিল বরাকবাসীকে ব্রডগেজে ট্রেন দিতে! ২ টাকা দরের চাল নিয়ে অসমে দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, ২৭ টাকা ভর্তুকি দিয়ে তিনি সেই চাল পাঠান অসমের গরিবদের জন্য। কিন্তু ঠিকমত তা বণ্টন করা হয় না।
অসম, পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতের উন্নয়ন তাঁর সরকারের লক্ষ্য, এই দাবি করে নরেন্দ্র মোদী বরাকবাসীর কাছে বিজেপি প্রার্থীদের জেতানোর আহ্বান জানান।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী সর্বানন্দ সোনোয়াল বাঙালিদের সুরক্ষার কথা বলেন। উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব প্রদান নিয়েও তিনি আশ্বস্ত করেন। বরাক উপত্যকার স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি ঘটানোরও অঙ্গীকার করেন তিনি। অসমের দলীয় পর্যবেক্ষক মহেন্দ্র সিংহ, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায়ও ওই সভায় বক্তব্য রাখেন।
এর আগে কংগ্রেসের সমালোচনার জবাবে মোদী রাঙাপাড়ার জনসভায় মোদী জোরের সঙ্গে জানান, তিনি ধনীদের জমা রাখা কালো টাকা ফেরত আনবেনই।
এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক সি পি যোশী গুয়াহাটিতে বলেন, ‘‘কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনার আগে মনে রাখা উচিত বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী সর্বানন্দ সোনোয়াল সারদা কেলেঙ্কারিতে হিমন্তবিশ্ব শর্মার যোগ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিস্তর অভিযোগ তুলেছিলেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মোদী বয়স্কদের কতটা সম্মান করেন তা বিজেপিতে লালকৃষ্ণ আডবাণী ও মুরলীমনোহর জোশীর অবস্থা দেখেই বোঝা যায়। এমন ভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যঙ্গ করা নিম্নরুচির পরিচয়।’’
কংগ্রেস জানিয়েছে, রাহুল গাঁধী ২৯ মার্চ ডিফু, সোনাই, করিমগঞ্জ ও ৩০ মার্চ ডিগবয়, মরাণ ও তেজপুরে সভা করবেন। সনিয়া গাঁধী ৩০ মার্চ সভা করবেন আমগুড়ি ও বিশ্বনাথ চারিয়ালিতে।
অন্য দিকে আগামী কাল ও মঙ্গলবার বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ঢকুয়াখানা, নাওবৈচা, সুতিয়া, ঢেকিয়াজুলি, থাওরা ও মরাণে সভা করতে আসছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy