Advertisement
E-Paper

ভোট বয়কট করে প্রতিবাদ হতশ্রী চরের

আগুন লেগে দিন দশেক আগে পুড়ে গিয়েছিল ৭০টি বাড়ি। পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে ধান, চাল, কলাই, গম, আসবাব, জামা-কাপড়, বইপত্তর-সহ সব কিছুই। তাঁরা এখন আক্ষরিক অর্থেই সর্বহারা। ওই দুর্দিনে সরকারের কাছ থেকে তাঁদের বরাতে জুটেছে পরিবার পিছু ১৮ কেজি চাল, ৭ কেজি চিঁড়ে, জামা-কাপড় আর একটি করে তারপলিন।

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৬ ০২:১৮

আগুন লেগে দিন দশেক আগে পুড়ে গিয়েছিল ৭০টি বাড়ি। পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে ধান, চাল, কলাই, গম, আসবাব, জামা-কাপড়, বইপত্তর-সহ সব কিছুই। তাঁরা এখন আক্ষরিক অর্থেই সর্বহারা। ওই দুর্দিনে সরকারের কাছ থেকে তাঁদের বরাতে জুটেছে পরিবার পিছু ১৮ কেজি চাল, ৭ কেজি চিঁড়ে, জামা-কাপড় আর একটি করে তারপলিন। রঘুনাথগঞ্জের নাড়ুখাকির চরের সেলিম শেখ বলেন, ‘‘এই বঞ্চনার কারণে এ বার আমরা চরের সব দলের লোক মিলে এককাট্টা হয়ে ভোট বয়কট করেছি।’’

রঘুনাথগঞ্জ থানার মূল ভুখণ্ড থেকে নৌকায় করে কয়েক কিলোমিটার বিস্তৃত পদ্মাপাড়ি দেওয়ার পর নাগাল পাওয়া যায় বিছিন্ন দ্বীপের মতো নাড়ুখাকি চরের ভৌগোলিক অবস্থানের। সেই দ্বীপ থেকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ২৪ ঘণ্টায় ৩ বার নৌকা মেলে। বিদ্যুৎ নেই। সৌরবাতিরও ব্যবস্থা নেই। ওই বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডের বাসিন্দা দীপেন মণ্ডল বলেন, ‘‘সন্ধ্যাবাতি দেওয়ার জন্য কেরোসিনটুকু আনতে যেতে হয় ৪০ টাকা পারানি খরচ করে কয়েক ঘণ্টার জলপথ ও ধূ-ধূ মরুভূমি ভেঙে মুল ভূখণ্ডের রেশন দোকানে।’’ নাড়ুখাকির পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের সায়েরা বিবির স্বামী মকবুল হোসেন বলেন, ‘‘গত বর্ষায় পদ্মায় তলিয়ে গিয়েছে প্রাথমিক স্কুলবাড়ি। আজও সেই স্কুলবাড়ি তৈরি হয়নি। একটা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রও নেই এই বিভূঁই-এ। জ্বর-জ্বালা যা-ই হোক না কেন, ৪০ টাকার নৌকা ভাড়া আর কয়েক ঘণ্টা সময় খরচ করে যেতে হবে সেই মূল ভূখণ্ডে।’’

এই চরের মানুষের জন্য বার্ধক্যভাতা, বিধবাভাতা, বিপিএল কার্ড— কিছুই নেই। পানীয় জলও মেলে না। গরিবের তস্য গরিব হওয়া সত্ত্বেও চরের মানুষের জন্য সরকারি প্রকল্পের ঘরবাড়ি নেই। এ কথা জানিয়ে ওই চরের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য কংগ্রেসের নাজেম শেখ বলেন, ‘‘তাই সব রাজনৈতিক দলের সবাই মিলে এককাট্টা হয়ে আমার এ বার ভোট বয়কট করেছি। এ বার যদি কারও টনক নড়ে!’’

বড় শিমুল গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন ওই নাড়ুখাকি চর। ভোটার সংখ্যা ৯৯০। বৃহস্পতিবার তাঁদের ভোট নেওয়ার জন্য হাতে হ্যারিকেন আর ইভিএম মেশিন ঝুলিয়ে বুধবার দুপুরেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রিজাইডিং অফিসার সন্দীপ সাহা ও তাঁর ৪ সহকর্মী।

ইনসাস রাইফেল ঘাড়ে ঝুলিয়ে ওই চরে পৌঁছে গিয়েছিলেন আধা সেনাবাহিনীর ৭ জন জওয়ান। ৯৯০ জন ভোটারের একজনও বুথমুখো না হওয়ায় তাস খেলে, মোবাইলে সিনেমা দেখে গেম খেলে উইকএন্ডের মেজাজে সারাটা দিন কাটিয়ে বৃহস্পতিবারের বারবেলায় তাঁরা নতুন একটি দেশ দেখে বাড়িমুখো হলেন। প্রিজাইডিং অফিসার সন্দীপ সাহা কেবল বলেন, ‘‘কেউ ভোট না দিলে আমরা তো তাঁদের সাধাসাধি করে বুথে আনতে পারি না।’’ ফলে একটিও ভোট পড়েনি।

Vote Boycott assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy