Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সম্পত্তি ধামাচাপা দেননি তো মন্টু, গুঞ্জন কাকদ্বীপে

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ে নিজের বিরুদ্ধে মামলার উল্লেখ রাখেননি তিনি। এ বার সম্পত্তির সঠিক হিসেব চেপে যাচ্ছেন না তো, প্রশ্ন উঠছে কাকদ্বীপে।

মন্টুরাম পাখিরা। —নিজস্ব চিত্র।

মন্টুরাম পাখিরা। —নিজস্ব চিত্র।

শান্তশ্রী মজুমদার
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০৫
Share: Save:

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ে নিজের বিরুদ্ধে মামলার উল্লেখ রাখেননি তিনি। এ বার সম্পত্তির সঠিক হিসেব চেপে যাচ্ছেন না তো, প্রশ্ন উঠছে কাকদ্বীপে।

যাঁকে নিয়ে এ হেন জল্পনা, তিনি কাকদ্বীপের বিদায়ী মন্ত্রী তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী মন্টুরাম পাখিরা। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ নিয়ে কেন উঠছে প্রশ্ন?

কারণটা খুব সাদামাঠা। গত পাঁচ বছরে অন্য তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের সম্পত্তির বাড়বাড়ন্ত যতটা, তুলনায় মন্টুবাবু তো নেহাতই নস্যি। রাজ্যের একজন বিদায়ী মন্ত্রী হিসাবে মন্টুরাম পাখিরার ঘোষিত ব্যাঙ্ক ব্যালান্স এবং অন্যান্য সম্পত্তির যৌথ পরিমাণ গতবারের থেকে বেড়েছে মাত্র সাড়ে ৬ লক্ষ টাকার মতো। যা মহকুমার অন্য দুই তৃণমূল প্রার্থী এবং বাম ও কংগ্রেস প্রার্থীদের থেকেও কম। এই তথ্যের ভিত্তিতে তাঁকে ‘তৃণমূলের সর্বহারা’ বলে কটাক্ষ করতেও ছাড়ছেন না বিরোধীরা।

এই পরিস্থিতিতেই উঠছে প্রশ্ন, মন্টুরামবাবু সম্পত্তির হিসেব চেপে যাচ্ছেন না তো?

২০১১ সালের সম্পত্তির বিবরণে কৃষিজমি, পৈত্রিক বাড়ি এবং টাকা মিলিয়ে মন্টুবাবুর মোট সম্পত্তির পরিমাণ দেখানো হয়েছিল ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকার মতো। নিজের নামে ৩৩ ডেসিমেল জমি ছিল। যার দাম ছিল প্রায় ১ লক্ষ টাকা। আর কোনও সম্পত্তি ছিল না বলেই দাবি করেছিলেন তিনি। পাঁচ বছরে বিদায়ী মন্ত্রীর ব্যাঙ্ক ব্যালান্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লক্ষ টাকার একটু বেশি। আর পৈত্রিক বাড়ি ও জমির মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে আজকের বাজারে মন্ত্রীর সম্পত্তি ৮ লক্ষ টাকার মতো। মন্ত্রী থাকাকালীন যে বেতন পেতেন, তার কিছুটা রয়েছে বিধানসভার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।

রাজ্যের মন্ত্রী হিসাবে তাঁর এই সম্পত্তির খতিয়ান বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে ধারণা বিরোধীদের। তার অবশ্য অন্য কারণ আছে। কী সেই কারণ?

১৯৮৯ সালে কাকদ্বীপ কলেজের একটি ঝামেলায় মন্টুরামের নাম জড়িয়েছিল। আগেরবার ভোটে মনোনয়ন দেওয়ার সময়ে সেই তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পেশ করেননি মন্টুবাবু। তাই এ বার বিরোধীদের প্রশ্ন, সম্পত্তি নিয়েও এ হেন কোনও লুকোছাপা চলছে না তো?

গতবার তথ্য গোপনের সাফাই হিসাবে মন্টুবাবু বলেন, ‘‘তখন হলফনামার বিষয়টি অত ভাল করে জানা ছিল না। তা ছাড়া, এ সব রাজনৈতিক মামলা তো লেগেই থাকে। তবে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম।’’

আর এ বার সম্পত্তি নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে, তা নিয়ে কী বলছেন মন্টুবাবু?

তাঁর দাবি, বাড়তি কোনও সম্পত্তি তিনি করেননি। বামানগরে তার পৈত্রিক বাড়িতেও থাকেন না। ছাত্র রাজনীতির সময় থেকেই তিনি কাকদ্বীপ থানার পাশে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বসবাস করেন।

সাগরের প্রার্থী বঙ্কিম হাজরার বাড়ি, জমি, ৪টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, লগ্নি মিলিয়ে সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় সওয়া ৬ লক্ষ টাকা দেখানো হয়েছিল। তার সঙ্গে সাড়ে চার একর জমি, পৈত্রিক বাড়ির মূল্য ছিল ১২ লক্ষ টাকার মতো। পাঁচ বছরে জমি বাড়ির মূল্য বেড়ে ১৯ লক্ষ হয়েছে। তবে লগ্নি, টাকা আর ব্যাঙ্ক ব্যালান্স পাঁচ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ লক্ষ টাকা। ব্যাঙ্ক ব্যালান্স বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনিও তার বিধায়ক ভাতাকেই দেখিয়েছেন।

অন্য দিকে, পাথরপ্রতিমার তৃণমূল প্রার্থী সমীর জানার, ক্যাশ, লগ্নি, ব্যাঙ্ক ব্যালান্স ২০১১ সালে প্রার্থী হওয়ার আগে ছিল প্রায় সাড়ে চার লক্ষ‌ টাকা। ২ বিঘে জমি এবং বসত বাড়ি মিলিয়ে সম্পত্তি ছিল ৩ লক্ষ টাকার একটু বেশি। ২০১৬ সালে তার ব্যাঙ্ক ব্যালান্স, লগ্নি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। জমি, বাড়ির বাজার দরের বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। টাকা বেড়ে যাওয়ার যুক্তি হিসেবে তিনিও বিধায়ক ভাতার কথা বলেছেন।

মন্টুবাবুর সম্পত্তি বৃদ্ধির হার তুলনায় এত কম হওয়াতেই উঠছে প্রশ্ন। সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে সারদা বা নারদ কাণ্ড নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে, তখন শাসক দলের একজন বিধায়ক তথা মন্ত্রীর ৫ বছরে সম্পত্তি এত কম বাড়ল কী করে, তা বিশ্বাস করা সত্যিই মুশকিল!’’ তাঁর দাবি, কমিশনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 kakdwip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE