Advertisement
E-Paper

‘আচরণবিধি’র জালে বিশেষ পর্যবেক্ষকেরাও

কমিশন সূত্রের খবর: গত শনিবার বিকেলে মুর্শিদাবাদে বিশেষ নজরদার দলের নেতা জে কে রাও দুই অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সরকার অনুমোদিত এক প্রতিষ্ঠানে। মিডিয়া সঙ্গে ছিল। সকলের সামনে তিনি ওখানে মুর্শিদাবাদ সিল্কের শাড়ি কেনেন। যা দেখে অনেকের কপাল কুঁচকেছে।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৩

অন্যের আচরণে নজর রাখতে তাঁদের আগমন। সেই বিশেষ পর্যবেক্ষকদের উপরেও কার্যত আচরণবিধির রাশ পরিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন।

দোকানে গিয়ে পরিবারের জন্য কেনাকাটা, কিংবা গ্রামে ভোটারদের সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথে পার্কে একটু বেড়িয়ে আসা— রাজ্যের জেলায় জেলায় টহলরত নির্বাচন কমিশনের বিশেষ নজরদার দলের সদস্যদের এ হেন কাজকর্ম নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে বিস্তর। বিরোধীরা প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। নিজের প্রতিনিধিদের এ জাতীয় বিতর্ক থেকে দূরে রাখতে তাঁদের গতিবিধিতেও এখন লাগাম দিতে চাইছে নির্বাচন সদন। তাই দিল্লি থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কমিশন যে কাজে পাঠিয়েছে, বিশেষ পর্যবেক্ষকেরা তাতেই পুরোপুরি মনোনিবেশ করুন। সংবাদমাধ্যমের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার ফরমানও এসেছে।

ক’দিন আগে কমিশনের ফুল বেঞ্চ কলকাতায় এসে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী পরিস্থিতি যাচাই করে গিয়েছিল। এর পরেই পাঁচ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন অফিসারদের (সিইও) নেতৃত্বে পাঁচটি বিশেষ টিম এ রাজ্যে পাঠানো হয়েছে, যাতে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের প্রস্তুতিপর্বে কোনও ফাঁক না রয়ে যায়। গত ২০ মার্চ থেকে দলের সদস্যেরা জেলায় জেলায় গিয়ে সরেজমিন খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। দেখছেন, আইন-শৃঙ্খলা কেমন, ভোটের তোড়জোড়ই বা কী ভাবে চলছে।

এমতাবস্থায় ওই বিশেষ নজরদারদের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন ওঠায় কমিশন ঘোরতর বিড়ম্বনায়। কী ধরনের অভিযোগ উঠেছে?

কমিশন সূত্রের খবর: গত শনিবার বিকেলে মুর্শিদাবাদে বিশেষ নজরদার দলের নেতা জে কে রাও দুই অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সরকার অনুমোদিত এক প্রতিষ্ঠানে। মিডিয়া সঙ্গে ছিল। সকলের সামনে তিনি ওখানে মুর্শিদাবাদ সিল্কের শাড়ি কেনেন। যা দেখে অনেকের কপাল কুঁচকেছে। আবার বীরভূমে বিশেষ দলের নেতা নরেন্দ্র চৌহানের ভাবগতিক অনেকের ঠিক লাগেনি। ইলামবাজারের আমখই গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে যাওয়ার পথে তিনি লাগোয়া ফসিল পার্কে ঢুঁ মেরেছেন, অথচ পাড়ুই বা নানুরের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় পা রাখার প্রয়োজন বোধ করেননি!

মূলত এই দু’টি ঘটনা ঘিরে দানা পাকিয়েছে বিতর্ক। যার সূত্র ধরে বিশেষ পর্যবেক্ষকদের জন্য দশ দফা নির্দেশিকা পাঠিয়েছে কমিশন। পরের দফায় বিশেষ নজরদার হয়ে যাঁরা আসবেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও নির্দেশিকাটি বলবৎ থাকবে বলে কমিশন সূত্রের খবর। নির্দেশিকায় কী রয়েছে?

তাতে বলা হয়েছে: বিশেষ পর্যবেক্ষকদের পেশাগত, নীতিগত ও ব্যক্তিগত আচরণে পূর্ণ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। ভোট প্রক্রিয়ার প্রস্তুতিতে ফাঁক-ফোঁকর চিহ্নিত করে স্থানীয় নির্বাচন প্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে হবে। ওঁদের সুপারিশ সম্পর্কে কোনও অবস্থায় সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলা যাবে না, সাংবাদিক সম্মেলনও করা বারণ। তাঁদের রিপোর্ট যাতে প্রকাশ্যে না আসে, সে দিকেও কড়া নজর রাখা চাই।

নিজের পাঠানো পর্যবেক্ষকের বিরুদ্ধে কমিশন ব্যবস্থা নিচ্ছে— এমনটা অবশ্য নতুন নয়। একাধিক দৃষ্টান্ত মজুত। যেমন, ১৯৯৯-এর লোকসভা নির্বাচনে আসা এক পর্যবেক্ষক বীরভূমের তৎকালীন ডিএম স্বামী সিংহের কাছে অনৈতিক সুবিধে চেয়েছিলেন। বীতশ্রদ্ধ ডিএম শেষে কমিশনে নালিশ জানান। সঙ্গে সঙ্গে কমিশন ওই পর্যবেক্ষককে দিল্লি ফেরত নিয়ে যায়। আবার ২০০৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক ভীমা শঙ্কর মিডিয়াকে বলে বসেন, বেলগাছিয়া পূর্ব কেন্দ্রটি ভারতের অন্যতম কুখ্যাত কেন্দ্র। প্রিসাইডিং অফিসারদের সেখানে এমন ভাবে ভোট করাতে হবে, যাতে প্রতি বুথেই ফের ভোট নিতে হয়। মন্তব্যটি প্রকাশিত হতেই কমিশন তাঁকে পত্রপাঠ সরিয়ে দিয়েছিল।

দিল্লি এ বারও আগাম কড়া বার্তা দিয়ে রাখছে। রাজ্যের সিইও দফতর সূত্রের খবর: ২৯৪টি বিধানসভা আসনের জন্য ১৯৩ জন সাধারণ পর্যবেক্ষক আসছেন। কমিশন ইতিমধ্যে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে, তাঁদের উপরে দিল্লি থেকে প্রতিনিয়ত নজরদারি চলবে। দায়িত্বে ফাঁকি, গাফিলতি কিংবা পক্ষপাতিত্বের জন্য কমিশনের দিকে আঙুল ওঠার বিন্দুমাত্র সুযোগ নির্বাচন সদন রাখতে চায় না।

‘‘তাই এখন বিশেষ নজরদারদের উপরেও এত নজরদারির আয়োজন।’’— মন্তব্য এক ভোটকর্তার।

Assembly Election 2016 Special Observer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy