Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রাজ্যে কোনও দুর্নীতি নেই, রায় দিদির

ভোটে বিরোধীদের হাতিয়ার ছিল দুর্নীতি। তাঁর পাঁচ বছরে অজস্র দুর্নীতির মধ্যে সব চেয়ে ধারালো হাতিয়ার ছিল নারদ-কাণ্ড। এমনকী, ভোটের ঠিক আগে কলকাতা শহরে উড়ালপুল বিপর্যয়ের সঙ্গেও জড়িয়েছিল সিন্ডিকেট-রাজ ও দুর্নীতির প্রশ্ন। কিন্তু তার জন্য ভোট পেতে কোনও সমস্যা হয়নি শাসক দলের।

জয়ের পরে সাংবাদিক বৈঠকে মুকুল রায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার কালীঘাটে। ছবি: সুদীপ আচার্য।

জয়ের পরে সাংবাদিক বৈঠকে মুকুল রায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার কালীঘাটে। ছবি: সুদীপ আচার্য।

সঞ্জয় সিংহ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:৪০
Share: Save:

ভোটে বিরোধীদের হাতিয়ার ছিল দুর্নীতি। তাঁর পাঁচ বছরে অজস্র দুর্নীতির মধ্যে সব চেয়ে ধারালো হাতিয়ার ছিল নারদ-কাণ্ড। এমনকী, ভোটের ঠিক আগে কলকাতা শহরে উড়ালপুল বিপর্যয়ের সঙ্গেও জড়িয়েছিল সিন্ডিকেট-রাজ ও দুর্নীতির প্রশ্ন। কিন্তু তার জন্য ভোট পেতে কোনও সমস্যা হয়নি শাসক দলের। তার পরেই বৃহস্পতিবার কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিলেন— বাংলায় কোনও দুর্নীতিই নেই!

নেত্রীর এই মন্তব্যের পরেই দলের একটা বড় অংশের ধারণা, প্রত্যাবর্তনের পরে নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেতে সারদা বা নারদ ঘুষ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের হয়তো কোনও সমস্যা হবে না।

তখন একটার পর একটা আসনের ফল বেরোচ্ছে। তার মধ্যেই চলচ্চিত্র প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা, পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, অভিনেতা দেব, রুদ্রনীল ঘোষদের এক পাশে নিয়ে, অন্য পাশে মুকুল রায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েনদের বসিয়ে মমতা ঘোষণা করলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে দুর্নীতি বলে কিছু হয়নি। আমি গর্বিত পশ্চিমবঙ্গ দূর্নীতিহীন রাজ্য বলে। অন্য রাজ্যের তুলনায় এখানে দুর্নীতি অনেক কম হয়!’’ এর পরেই তাঁর দাবি, ‘‘যাঁরা ভোটের সময়ে কুৎসা-অপপ্রচার করেছে, তারা ক্ষমা চাক! আমি ভুল করলে ক্ষমা চাইতাম। ওরা কেন চাইবে না?’’ সেই সঙ্গে তাঁর টিপ্পনী, ‘‘৩৪ বছরে বামফ্রন্ট তো দুর্নীতির ঠাকুরদা ছিল!’’ ভোটের প্রচারে কুৎসা-অপপ্রচারের ‘বাসন্তী হাওয়া বইছিল’ বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘‘রাজনীতিতে একটা লক্ষণ রেখা থাকা উচিত। একটা দলের তার বিরোধী দলের প্রতি সম্মান থাকা উচিত। কিন্তু গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যা-গুজব ছড়ানো হয়েছে। আমি নিজে লজ্জা পেয়েছি। আমার বিবেককেও দংশন করেছে!’’ সংবাদমাধ্যমের একাংশকেও এ জন্য দায়ী করেন তিনি।

সারদা-নারদ কাণ্ডে তাঁর দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কদের অনেকেই অভিযুক্ত। সারদা-কাণ্ডে দলের এক প্রাক্তন মন্ত্রী ও সাংসদ এখনও জেলে। দুর্নীতির অভিযোগকে তিনি কোনও আমল দিচ্ছেন না, এই বার্তা দিতেই জেলবন্দি বিধায়ক মদন মিত্রকে এ বার কামারহাটি থেকে ফের প্রার্থী করেছিলেন মমতা। তৃণমূলের এমন সাফল্যের বাজারেও মদন কিন্তু হেরে গিয়েছেন। পরাজয় হয়েছে সারদা কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানো মন্ত্রী বাঁকুড়ার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়েরও। আবার ভোটের সময় সারদা-নারদ কাণ্ডে অভিযুক্তদের নিয়ে বিরোধীরা যখন সরব ছিলেন, তখন উত্তর ২৪ পরগনার বাগদায় প্রচারে গিয়ে দলের প্রার্থী উপেন বিশ্বাস সম্পর্কে মমতা বলেছিলেন, ‘‘উনি কিন্তু সৎ মন্ত্রী।’’ সেই উপেনবাবু কিন্তু এ বার হেরে গিয়েছেন!

আবার সারদা বা নারদ ঘুষ কাণ্ডে অভিযুক্তদের মধ্যে দুই মন্ত্রী (ববি হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়), দুই বিধায়ক (ইকবাল আহমেদ ও শোভন চট্টোপাধ্যায়) এবং সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী এ বার জয়ীও হয়েছেন। নতুন মন্ত্রিসভায় মমতা তাঁদের স্থান দেবেন কি না, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই নানান জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতার মতে, ‘‘দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে হলে অভিযুক্তদের কাউকে মন্ত্রিসভার নেওয়া উচিত নয়।’’ কিন্তু দলনেত্রী ওই নেতার মত মানবেন বলে মনে করেন না অধিকাংশ তৃণমূল নেতাই। কারণটাও সোজা— তিনি তো মনেই করেন না রাজ্যে কোনও দুর্নীতি হয়েছে!

বিরোধীরা অবশ্য প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছেন না। নারদ-কাণ্ডের ভিডিও ফুটেজে তৃণমূলের এক ডজন সাংসদ, মন্ত্রী ও বিধায়ককে ঘুষ নিতে দেখা গিয়েছে। তার পরে ভোটে তৃণমূলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর তির্যক মন্তব্য, ‘‘দিদি হয়তো
ভাবছেন, মানুষ দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসকে বৈধতা দিয়েছে!’’ আবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মানুষের এই রায়কে যদি তৃণমূল নেত্রী সারদা-নারদ কাণ্ড ও টেট কেলেঙ্কারির পক্ষে রায় বলে মনে করেন, তা হলে ভুল করবেন। সারদা-কাণ্ডে এক অভিযুক্ত মন্ত্রী জেলে রয়েছেন এবং এ বার তিনি হেরে গিয়েছেন। অন্য এক অভিযুক্ত মন্ত্রীও হেরেছেন। ফলে, মানুষ ওই সমস্ত কেলেঙ্কারি নিয়ে যে একেবারে নির্লিপ্ত, তা ভাবার কারণ নেই!’’ আর হেরে গেলেও দুর্নীতি-কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। তাঁর কথায়, ‘‘পরাজয় মানে পশ্চাদপসরণ নয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE