Advertisement
E-Paper

আগের দিনে ভূতের নেত্য

ভোটের আগের দিনই কোথাও বাড়ি থেকে না বেরোনোর হুমকি, মারধর কোথাও ভোটারদের মাংস-ভাত খাইয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠল গ্রামীণ বর্ধমানে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২০

ভোটের আগের দিনই কোথাও বাড়ি থেকে না বেরোনোর হুমকি, মারধর কোথাও ভোটারদের মাংস-ভাত খাইয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠল গ্রামীণ বর্ধমানে।

জোট, বিজেপির অভিযোগ, রাত থেকেই নেমে পড়েছে ভূতেরা। মেরে-ধরে ভোট বাগাতে চাইছে। তাতেও না হলে ভোটের পরে ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে’ দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এমনকী, মোটরবাইক বাহিনী নিয়ে এসে হুমকি, মারধরও করা হয়েছে নানা জায়গায়।

বুধবার বিকেলে কেতুগ্রাম ১ ব্লকের কাঁচড়া গ্রামের ১৩৬ ও ১৩৭ নম্বর বুথে সিপিএম এজেন্টদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন দলীয় প্রার্থী সৈয়দ আবুল কাদের। তাঁর অভিযোগ, বুধবার সকাল থেকেই হুমকি চলছিল। বিকেলে দুই এজেন্টকে মারধর করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেও হামলা চালায় তৃণমূলের সমর্থকেরা। ঘুরপথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে সেখানেও তাদের আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে সিপিএম নেতারা পুলিশের কাছে ওই দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার আর্জি জানান। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা সুলতান শেখের নামে কেতুগ্রাম থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন তাঁরা। কেতুগ্রামের খাঁজি-রায়খাঁ এলাকাতেও দুপুরে ৬-৭ জনের একটি দল মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি বাড়ি হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। পরে কেতুগ্রামের সিপিএম প্রার্থীর অভিযোগ পেয়ে আধা সেনা মোটরবাইক বাহিনীকে ধাওয়া করে ফুঁটিসাঁকো মোড় থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করে। মেমারির রসুলপুরের একটি বুথে সন্ন্যাসী রায় নামে সিপিএমের এজেন্টকে মারধর করা হয়েছে থানায় অভিযোগ হয়েছে।

কালনা বিধানসভা এলাকার পুর ও গ্রামীণ এলাকা মিলিয়ে ১৯টি জায়গার একটি তালিকা তৈরি করেছে সিপিএম। তালিকাটি নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়েও দিয়েছেন বাম নেতারা। সেখানে বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার শ্রীরামপুর, আলাগড়,, সাতগাছিয়া হাসপুকুর, মালপাড়া, বন্দেবাজ, বারাসাতের নাম রয়েছে। সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, বুধবার কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের খাগরাকুর, বেগুনিয়া এলাকাতেও তৃণমূল নেতা কর্মীরা ভোটার এবং এজেন্টদের হুমকি দিতে শুরু করেছে। নেতাদের অভিযোগ, মন্তেশ্বর বিধানসভা এলাকার কুলে লস্করপুর, কুলে,রুইগরিয়া, বারারি এলাকায় ইতিমধ্যে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করছে তৃণমূল। মেমারি ২ জোনাল কমিটির সম্পাদক অশেষ কোনার বলেন, ‘‘ভোট লুঠের ছক শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। তবে এ বার সাধারণ মানুষ সজাগ।’’ সিপিএমের দাবি, সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার পরেই এলাকায় প্রায় সব জায়গায় সিপিএম প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার ছিঁড়ে দেওয়া হয়। তাহেরপুর, বৈরামপুর, কোলে-সহ বেশ কিছু জায়গায় সিপিএম কর্মীদের মারধর ও হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

ভোটের আগে শাসক দলের রক্তচক্ষু দেখানোর অভিযোগ রয়েছে পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রেও।এই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ সাহার দাবি, এলাকার পিলা, মাজিদা, মেড়তলা, নিমদহ এলাকার বেশ কিছু জায়গায় তৃণমূল আশ্রিত সমাজবিরোধীরা ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছে। তবে এ ব্যাপারে দলের সতর্ক নজর রয়েছে এবং বিষয়টি প্রশাসনের নজরেও আনা হয়েছে বলে তাঁর দাবি। পূর্বস্থলী দক্ষিন কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘শাসকদলের নেতারা কালনা ১ ব্লকের সুলতানপুর, বেগপুর, কাঁকুড়িয়ার মতো এলাকায় বুথে না যাওয়া র হুমকি দিতে শুরু করেছে।‘‘ তবে মানুষ ষড়যন্ত্র রুখে ভোট দিতে আসবেন বলেও তাঁর দাবি।

এর আগের পর্যায়ের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পরে মুড়ি, ঘুগনি বা মুড়ি-চপ খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। এ বার আগের দিনই কালনার বেশ কিছু কিছু জায়গায় ভোটারদের খিচুড়ি খাওয়ানো এবং নসরতপুরের একটি বুথে তৃণমূলের তরফে কুইন্টাল খানেক মাংস এনে এলাকার ভোটারদের খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে। কালনা শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে শাসকদল কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেছে বলেও অভিযোগ।


কালনা শহরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

তবে এতেও জোটের বাঁধন আলগা হবে না, প্রতিরোধ হবে জোর হাতেই— এমনটাই দাবি সিপিএম নেতাদের। দলের মেমারি ১ জোনাল সম্পাদক অভিজিৎ কোঙারের দাবি, ভোটের আগের দিন লাগাতার হুমকি চলছে। তবুও প্রতিরোধ হবে। তিনি জানান, বুথগুলিতে সিপিএমের এজেন্ট কে হবেন, তা গোপন রাখা হয়েছে। বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে এজেন্টরা সকাল থেকেই স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। গণ্ডগোল হলে অ্যাপে তা জানাবেন এজেন্টরা।

যদিও শাসক দলের তরফে জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে প্রতিটি বিধানসভাতেই প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। তাই তৃণমূলকে বুথ দখল করতে হবে না। মানুষ দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করবেন।’’ মন্তেশ্বরের ব্লক সভাপতি তথা দলীয় প্রার্থী সজল পাঁজারও দাবি, ‘‘বিরোধীরা হেরে যাওয়ার ভয়ে সন্ত্রাসের গল্প ফাঁদছে।’’ মেমারি টাউন তৃণমূলের সহ-সভাপতি সুপ্রিয় সামন্তেরও দাবি, মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। কালীতলা এলাকায় ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের দু’শো মিটারের মধ্যে থাকা সিপিএমের পার্টি অফিস সিল করে দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে জানানো হয়েছে।

CPM Agent Threaten TMC assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy