Advertisement
E-Paper

নিজেকে বাজি রেখে লড়াই মমতার, ঝুলিতে ২১২, ধরাশায়ী বিরোধীরা

সব হিসাব গুলিয়ে দিলেন মমতা। ভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বহু সমীকরণ, বহু পাটিগণিত, বহু যোগ-বিয়োগ শুরু হয়েছিল রাজ্যজুড়ে। সব অঙ্ককেই ভুল প্রমাণ করে ইভিএমে নিজের পক্ষে ঝড় তুলে দিলেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর বিপক্ষে যে সব পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, সে সব তো খড়কুটোর মতো ভেসে গেলই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৬ ১৭:০৭

সব হিসাব গুলিয়ে দিলেন মমতা। ভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বহু সমীকরণ, বহু পাটিগণিত, বহু যোগ-বিয়োগ শুরু হয়েছিল রাজ্যজুড়ে। সব অঙ্ককেই ভুল প্রমাণ করে ইভিএমে নিজের পক্ষে ঝড় তুলে দিলেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর বিপক্ষে যে সব পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, সে সব তো খড়কুটোর মতো ভেসে গেলই। ভেসে গেলে সেই সব বিশ্লেষণও, যেখানে তৃণমূলকে সামান্য এগিয়ে রাখা হয়েছিল।

২৯৪টি কেন্দ্রে তিনি নিজেই প্রার্থী, ঘোষণা করেছিলেন মমতা। প্রার্থীদের নামে নয়, নিজের নামে ভোট চেয়েছিলেন। গোটা নির্বাচনকে প্রায় প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে পরিণত করেছিলেন তিনি। দিদির পক্ষে নাকি বিপক্ষে? এই প্রশ্নের চার পাশে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ভোটের হাওয়াটাকে। ফল আজ সকলের সামনেই।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ২১২টি বিধানসভা আসনে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। সে বার লড়াই ছিল চতুর্মুখী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, বিরোধী ভোট তিন ভাগে ভেঙে যাওয়ার সুবাদে মাত্র ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েও রাজ্যের ৮০ শতাংশ লোকসভা আসন দখল করেছিল তৃণমূল।

সেই বিশ্লেষকরাই বলেছিলেন, এ বারের নির্বাচনে তৃণমূলের বিপদ হবে। কারণ, প্রথমত বাম-কংগ্রেস জোট বিরোধী ভোটের ভাগাভাগি অনেকটা রুখে দেবে। দ্বিতীয়ত বিজেপির ভোট আগের চেয়ে অনেকটা কমবে।

কিন্তু সব হিসেব গুলিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা যে একেবারে মেলেনি, তা নয়। বিরোধী ভোটের ভাগাভাগি কিছুটা রুখে দেওয়া গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বিরোধী ভোটব্যাঙ্কটাই যে আর আগের জায়গায় নেই, সঙ্কুচিত হতে হতে তার যে এখন হতশ্রী দশা, তা অনেকেই আঁচ করতে পারেননি।

বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বিজেপির ভোট কমার কথা ছিল। ভোট কমে ১৭ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমেছে। কিন্তু সেই ভোট তৃণমূলের বিপক্ষে অর্থাৎ জোটের বাক্সে পড়বে বলে যে ভবিষ্যদ্বাণী বিশ্লেষকদের অনেকেই করেছিলেন, তা মেলেনি। বিজেপি থেকে কেটে আসা পুরো ভোটটাই জমা হয়েছে তৃণমূলের খাতায়।

নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী তৃণমূল লোকসভায় পাওয়া ৩৯ শতাংশ থেকে বেড়ে এ বার ভোট পেয়েছে ৪৬ শতাংশের কিছু বেশি। বাম-কংগ্রেস পেয়েছে ৩৭ শতাংশের কাছাকাছি। আর বিজেপি লোকসভায় পাওয়া ১৭ শতাংশ থেকে কমে এ বার পেয়েছে ১০ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ বিজেপির ঠিক যে ৭ শতাংশ ভোট কমল, তৃণমূলের ঠিক সেই ৭ শতাংশই বাড়ল। আর বাম এবং কংগ্রেস আলাদা আলাদা লড়ে লোকসভায় মোট যে ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, তার থেকেও কমে গিয়ে তাদের সম্মিলিত ভোটের পরিমাণ এসে দাঁড়াল ৩৭ শতাংশে।

তিন পক্ষের ভোটপ্রাপ্তির হার দেখলে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, জোট গড়েও নিজেদের ভোট ধরে রাখতে পারেনি বাম-কংগ্রেস। শুধু তাই নয়, বিজেপি থেকে কেটে আসা ভোটও তারা নিজেদের দিকে টানতে পারেনি। সবটাই চেঁছেপুছে নিজেদের বাক্সে ভরে নিয়েছে তৃণমূল।

প্রশ্ন হল, তৃণমূলের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের সমীকরণটা ঠিক কী? ১৯৬৭ সালের পর প্রথম বার কোনও শাসক দল একা লড়ল এ বঙ্গে। কংগ্রেস আর বামেরা এই প্রথম হাত মিলিয়ে লড়ল। দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, উড়ালপুল বিপর্যয়— ইস্যুও কম ছিল না শাসকের বিরুদ্ধে। তা সত্ত্বেও সমস্ত পাটিগণিত ধুয়েমুছে দিয়ে তৃণমূলের এই বিপুল জয়। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, উন্নয়ন এবং বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের রূপায়ণ যতটা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে গত পাঁচ বছরে, তা বাংলার মানুষ কখনও দেখেননি। রাস্তাঘাটের উন্নতি, গ্রাম-গ্রামান্তরে পানীয় জলের ব্যবস্থা, গ্রামীণ বিদ্যুদয়নে জোর দেওয়া, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং সরকারি হসাপতালগুলির চেহারা বদল— এমন নানা বিষয় জানমানসে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তার সঙ্গে ২ টাকা কিলো দরে চাল দেওয়া, সবুজসাথী প্রকল্পে পড়ুয়াদের মধ্যে ঢালাও সাইকেল বিতরণ, স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের নিখরচায় বই দেওয়া, ক্লাবগুলিকে অনুদান— এমন নানা পদক্ষেপ জনমোহিনী হয়ে দেখা দিয়েছে ভোটের বাজারে। ভোটারদের বিরাট একটা অংশ অনুভব করেছেন, ব্যক্তিগত ভাবে তাঁরা লাভবান। দুর্নীতির ইস্যু নিয়ে হইচই হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ভোটারদের কোথাও মনে হয়নি, এই দুর্নীতিতে তাঁরা নিজেরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত। বরং মমতার সরকারের কাছ থেকে তাঁরা হাতেগরম কিছু পেয়েছেন, নিজেদেরকে উন্নয়নের অংশীদার বলে ভাবতে পেরেছেন। তাই ঢেলে ভোট দিয়েছেন তৃণমূলে। দুর্নীতি, ঘুষ, সিন্ডিকেট— কোনও ইস্যুই ধোপে টেকেনি।

নির্বাচনে প্রেসিডেন্সিয়াল সিনড্রোম চারিয়ে দেওয়াও ছিল মমতার অন্যতম মাস্টারস্ট্রোক। বলছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। মমতার এই মাস্টারস্ট্রোক অন্য মাত্রা জুড়ে দিয়েছিল নির্বাচনে। চাল, সাইকেল, কন্যাশ্রীতে উপকৃত বাংলা, দিদিকে প্রতিদান দেওয়ার তাগিদে উড়িয়েই দিয়েছে দুর্নীতির সব ইস্যুকে।

Assembly Election 2016 Mamata Creates History Thumping Majority
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy