ভোটে জেতার প্রার্থনায় কোনও মন্দিরে যেতে বাদ রাখেননি তৃণমূল প্রার্থী সমীর মাহাতো। নেপালবাবু অবশ্য অতটা দৌড়ঝাঁপ করছেন না। হাতের বেদনায় তিনি কাবু।
হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন। হাত চিহ্নের প্রার্থী ইতিমধ্যেই কাতর। তবে, উৎকন্ঠায় নয়। হাতের ব্যথায়। তাঁর যুযুধানও ফলের ব্যাপারে চিন্তা করতে নারাজ। তিনি আবার সব কিছুতে ঈশ্বরের হাত দেখছেন।
কেন্দ্রের নাম বাঘমুণ্ডি। নির্বাচনের একে বারে প্রথম দফায় এখানে ভোটগ্রহণ মিটে গিয়েছে। দেখতে দেখতে মাস কাবার হয়েছে। শিয়রে এখন ফলাফল। কী করছেন দুই প্রার্থী? জোটের প্রার্থী নেপাল মাহাতোর বাড়ির দরজা সারাক্ষণ হাট খোলা। সেখান দিয়ে সটান অন্দরমহল অবধি কর্মীদের আনাগোনা লেগে থাকে। রবিবার সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই দেখা হল নেপালবাবুর স্ত্রী রীতা মাহাতোর সঙ্গে। কর্তা কেমন আছেন জানতে চাওয়ায় রীতাদেবী বলেন, ‘‘টেনশন করছে না। বলছে, যা হবার তো হয়েই গিয়েছে। তবে হাতের ব্যথাটা ভোগাচ্ছে।’’
নেপালবাবু বসেছিলেন ভিতরের ঘরে। অনেক দিন পরে শনিবার বাড়িতে ফিরেছেন। ভোট মেটার পরেই চলে গিয়েছিলেন কলকাতা। বিধায়ক হস্টেলে থেকে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পুজোও দিয়ে এসেছেন। জানালেন, হাতের ব্যথাটা অনেক দিনের। ব্যথা পুষে ভোটের সময় মনের জোরে প্রচুর দৌড় ঝাপ করেছেন। ভোট মিটতেই শরীর সুদে আসলে জানান দিতে শুরু করেছে। নেপালবাবুর আপাতত দিন কাটছে ডাক্তারের দেখিয়ে দেওয়া ব্যায়াম করে।
পুরুলিয়ার কংগ্রেস সভাপতি নেপালবাবু দলের বাঁকুড়া জেলা পর্যবেক্ষক। বিধানসভার ডেপুটি লিডারও বটে। কিন্তু ব্যথায় কাবু হয়ে জেলায় জেলায় প্রচারে যাওয়ার ডাকে এ যাত্রা বিশেষ সাড়া দিতে পারেননি। বললেন, ‘‘শুধু সবং, শ্রীরামপুর, রামপুরহাট আর কলকাতায় সোমেনদার কেন্দ্র চৌরঙ্গি ছাড়া আর কোথাও সময় দিতে পারিনি।’’
সেই ২০০১ সালে প্রথম নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন নেপালবাবু। পরাজিত করেছিলেন বামফ্রন্ট মন্ত্রীসভার সদস্য সত্যরঞ্জন মাহাতোকে। তার পরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। পাশাপাশি, ভোট মিটে যাওয়ার পর এত দিন ফলের জন্য অপেক্ষাও করে থাকতে হয়নি। পোড় খাওয়া নেতা বলেই ফেলেন, ‘‘সেই কবে ভোট মিটেছে। এতগুলো দিন কোনও বার সবুর করতে হয়নি। এই বসে থাকা কতটা যন্ত্রণার সেটা ভোটের লোকজনই বুঝছেন।’’ তবে, ফলাফল নিয়ে টেনশনের কথা মানতে তিনি নারাজ। জানান, মানুষের উপর আস্থা আছে। গণনা কেন্দ্রে যাওয়ার আগে শুধু মাকে একটা প্রণাম করে যাবেন। ব্যস।
অন্যদিকে প্রায় মাস দুয়েক ধরে ঝাড়খণ্ডের রাজারাপ্পার মন্দিরে একটি প্রদীপ জ্বলছে। ১৯ তারিখ এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরোনোর আগে তার ছুটি নেই। বাঘমুণ্ডি কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে নেত্রী তাঁর নাম ঘোষণা করার পরে ওই মন্দিরে গিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজো দিয়েছিলেন সমীর মাহাতো। সেই প্রদীপের শিখা আগলে রেখেছেন মন্দিরের পুরোহিতরা। খরচ যোগাচ্ছেন প্রার্থী। গণনার আগে মঙ্গলবার ফের এক বার পুজো দিতে যাবেন রাজারাপ্পা মন্দিরে।
প্রদীপের আলো, না তার তলায় জমে থাকা অন্ধকার— কোনটি রয়েছে কোন প্রার্থীর কপালে তা আপাতত জানার উপায় নেই। আপাতত তিথি নক্ষত্র দেখে মেপে পা ফেলছেন সমীরবাবু। ভোটের ময়দানে তিনি একেবারেই আনকোরা। এক সময় নেপালবাবুর ঘনিষ্ঠ অনুচর ছিলেন। এ বার তারই বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন। কোনও রকম ঝুঁকি নিতে তাই নারাজ ঈশ্বরে অটল বিশ্বাসী সমীরবাবু। দেওঘর থেকে শুরু করে বাঘমুণ্ডির লহরিয়া শিবমন্দির, ঝালদার বড়গ্রাম বাগান শিবমন্দির-সহ কাছে দূরে বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দিয়েছেন। রাত বারোটার পর বাড়ি থেকে বেরোতে হলেও স্নান সেরে, পুজো করে তবেই চৌকাঠ ডিঙোচ্ছেন।
তবে শুধু ধর্মকর্মেই সারা দিন যে কেটে যাচ্ছে এমনটাও নয়। সমীরবাবু জানান, এরকম অপেক্ষার সময় দিনগুলো যেন আরও বড় মনে হয়। কাটতেই চায় না। নানা কাজ নিয়ে দলের কর্মীরা আসছেন। তাঁদের নিয়েই দিনের কিছুটা সময় কাটছে তাঁর। বাকি সময়টা টিভির পর্দায় ক্রিকেট আর পুরনো বাংলা ছবি নিয়ে।
কিছু জি়জ্ঞাসা করার আগে নিজে থেকেই প্রার্থী বলেন, ‘‘এ বারে যে জিতছি সেই ব্যাপারে আমি কিন্তু নিশ্চিত। মানুষের খুবই সাড়া পেয়েছি।’’ পঞ্জিকা মতে, ১৯ তারিখ বেলা ১১টার পরে ‘যাত্রা শুভ’। সমীরবাবু ঠিক করেছেন ওই সময়ই রওনা দেবেন গণনাকেন্দ্রের দিকে। একটু থেমে প্রার্থী বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি ঈশ্বরের ইচ্ছেতেই সব হয়।’’
Assembly election 2016 Vote Result TMC
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy