Advertisement
E-Paper

নিজেদের বিরুদ্ধেই নালিশ তৃণমূলের

স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধমক দিয়ে গিয়েছিলেন। জেলা তৃণমূলের সভাপতিও বদল করা হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব উত্তরোত্তর উত্তপ্ত হচ্ছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে নন্দনপুর এলাকায় দলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদের জেরে তৃণমূল প্রার্থী সত্যেন রায়ের অনুগামী মজিরুদ্দিন মন্ডলের গাড়ি লক্ষ করে গুলি চলেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০৩:০০
সুনসান নন্দনপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। ছবি: অমিত মোহান্ত।

সুনসান নন্দনপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। ছবি: অমিত মোহান্ত।

স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধমক দিয়ে গিয়েছিলেন। জেলা তৃণমূলের সভাপতিও বদল করা হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব উত্তরোত্তর উত্তপ্ত হচ্ছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে নন্দনপুর এলাকায় দলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদের জেরে তৃণমূল প্রার্থী সত্যেন রায়ের অনুগামী মজিরুদ্দিন মন্ডলের গাড়ি লক্ষ করে গুলি চলেছে। তারপরে ফের ভোট প্রচারে বাধা দিয়ে সত্যেনবাবুর দুই অনুগামীকে মারধরের অভিযোগ উঠলো দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। শনিবার সন্ধ্যায় নন্দনপুর এলাকায় ওই ঘটনার পর জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়ে ডায়েরির কপি তুলে দিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানাতে হল জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে। তৃণমূলেরই কিছু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দলেরই জেলা নেতৃত্বের তরফে প্রশাসন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হওয়ার মতো নজিরবিহীন ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা জুড়ে দলের মধ্যে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।

সত্যেনবাবুর অভিযোগ, ওই দিন সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ নন্দনপুরের বিকোইর গ্রামে অকুল ভুনজার এবং খাজামুদ্দিন নামে তাঁর অনুগত দুই কর্মীকে মারধর করে শাসানো হয়। সত্যেনবাবুর দাবি, ‘‘আমার হয়ে প্রচার করলে তাঁদের প্রাণহানির হুমকি দেওয়া হয়েছে।’’ এরপরে সত্যেনবাবু নিজের প্যাডে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর ৭ তৃণমূল কর্মী সমর্থকের বিরুদ্ধে ফ্লেক্স ছিঁড়ে দেওয়া, মারধর ও হুমকির অভিযোগ করে এফআইআর দায়ের করেছেন। নাম না করে সত্যেনবাবু দলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘নাম বলছি না। তবে জেলার এক নেতার মদতেই আমাকে মানুষ যাতে ভোট দিতে না পারেন সেই চক্রান্ত হচ্ছে।’’

বিপ্লববাবু অবশ্য বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ। নন্দনপুরে কী হয়েছে খোঁজও নিতে পারিনি। তবে আগেও সত্যেনকে বলেছি, স্থানীয় স্তরে দলীয় কর্মীদের মধ্যে গন্ডগোল ওকেই মেটাতে হবে।’’ সত্যেনবাবুর দুই অনুগামীকে মারধর ও হুমকির অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন এলাকার প্রবীণ তৃণমূল নেতা ইসমাইল মিয়াঁও।

রবিবার দুপুর ১২টা নাগাদ বালুরঘাটে জেলার সাংসদ অর্পিতা ঘোষ, তৃণমূলের জেলা সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী এবং সত্যেনবাবু প্রথমে জেলাশাসক তাপস চৌধুরী এবং পরে পুলিশ সুপার রসিদ মুনির খানের কাছে গিয়ে ওই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিপ্লব অনুগামী নুরুল ইসলাম ও তাঁর গোষ্ঠীর মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে তিনটি সশস্ত্র হামলার লিখিত অভিযোগ উল্লেখ করে ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।

পরে শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘নন্দনপুর অঞ্চলের পর পর ঘটনায় উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে বলেছি।’’ অর্পিতা বলেন, ‘‘দলের রং না দেখে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসনকে বলা হয়েছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার রসিদ মুনির খান বলেন, ‘‘নন্দনপুরে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই অভিযুক্তরা ধরা পড়বে।’’

এ দিন নন্দনপুর এলাকার গ্রামের রাস্তাঘাট ছিল প্রায় সুনসান। কর্মীদের কেবল একটি দু’টি দেওয়াল লিখন করতে দেখা গিয়েছে। সংঘর্ষের চোরা উত্তাপে ঢাকা পড়েছে প্রচার। পুলিশ পিকেট বসেছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুটমার্চ হয়েছে। হাঁপুনিয়ার ভিখারিপাড়া মোড়ে রয়েছে পুলিশ পাহারা। হাঁপুনিয়ার মতো লাগোয়া বিকোইর গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি পুরুষ শূন্য। মহিলাদের অভিযোগ, মিথ্যা অভিযোগে পুলিশ হানা দিচ্ছে। ভয়ে পুরুষরা বাড়ি ছেড়েছেন। খেতের কাজকর্ম প্রায় বন্ধ। নন্দনপুর অঞ্চলের তৃণমূলের উপপ্রধান তথা বিপ্লব অনুগামী অভিযুক্ত নুরুলও পলাতক। তবে নুরুলের বাবা তথা প্রবীণ তৃণমূল নেতা ইসমাইল মিয়াঁ অভিযোগ করেন, কয়েকদিন আগে হাঁপুনিয়া মোড়ে চা খাওয়ার সময় মজিরুদ্দিনের লোকজন বাইকে করে এসে পিস্তলের বাঁট ও ভোজালি দিয়ে এক শিক্ষক নেতা সহ তিন জনের উপর হামলা চালিয়ে শূন্যে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু অভিযোগ দায়ের হলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করছে না।

এই আবহে আজ, সোমবার তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় কুমারগঞ্জ এবং কুশমন্ডি কেন্দ্রে প্রচারের মাঝে বিকেলে গঙ্গারামপুরের নন্দনপুরে সভা করবেন।

assembly election 2016 candidate TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy