Advertisement
০৬ মে ২০২৪

ইষ্টদেবতাকে স্মরণ করে গণনাকেন্দ্রের পথে

অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান। ভোট শেষ হওয়ার পর থেকে ফল বেরোনো পর্যন্ত দীর্ঘ সময়টা কেটেছে উদ্বেগ, উত্তেজনা আর চুলচেরা হিসেব-নিকেশ কষে। যার শেষ পর্বে এসে বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফলে অনেকের ঠোঁটের কোণে চিলতে হাসি ছড়িয়েছে।

সকলই তোমারই ইচ্ছা...। পুজোয় ব্যস্ত গোসাবার তৃণমূল প্রার্থী জয়ন্ত নস্কর। ছবি: সামসুল হুদা।

সকলই তোমারই ইচ্ছা...। পুজোয় ব্যস্ত গোসাবার তৃণমূল প্রার্থী জয়ন্ত নস্কর। ছবি: সামসুল হুদা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৬ ০২:১০
Share: Save:

অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান। ভোট শেষ হওয়ার পর থেকে ফল বেরোনো পর্যন্ত দীর্ঘ সময়টা কেটেছে উদ্বেগ, উত্তেজনা আর চুলচেরা হিসেব-নিকেশ কষে। যার শেষ পর্বে এসে বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফলে অনেকের ঠোঁটের কোণে চিলতে হাসি ছড়িয়েছে। কারও কারও আবার রুমাল ভিজেছে অধিকতর ঘামে। কিন্তু যাঁরা হেসেছেন, তাঁরাও পরক্ষণে সংযত হয়েছেন। যাঁদের কপালে ভাঁজ পড়়েছে, তাঁরা আবার কাঁধ ঝাঁকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন। কারণ, জনতা জনার্দন শেষমেশ কী রায় দেয়, তা নিয়ে অন্দরমহলের উত্তেজনাটা থেকেই গিয়েছে।

যুক্তি, পাল্টা যুক্তি, তর্ক, ঝগড়া, মন কষাকষির অবসান ঘটিয়ে আজ ভোটের ফল বেরোবে। ‘‘মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরনোর সময়েও এত টেনশন হয়নি’’— বলছেন বনগাঁর এক প্রার্থী। কিন্তু নামটা জানাতে দ্বিধা আছে। কেন? ‘‘আরে বোঝেন না, কর্মী-সমর্থকদের মনোবলটা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে না’’— স্মিত হেসে উত্তর দেন বর্ষীয়ান প্রার্থী।

ভোটের ফল জানতে গণনাকেন্দ্রে সকালের দিকেই পৌঁছবেন প্রায় সকলে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে শুভ কাজে যাওয়ার আগে নানা সংস্কার কাজ করে অনেকের ভিতরেই। আর ভোটের ফলের মতো এমন গুরুতর কারণ যেখানে হাজির, সেখানে সংস্কারের মাত্রাও তীব্রতর।

কেউ বাবা-মায়ের ছবিতে প্রণাম সেরে বেরোবেন। কেউ আবার ভোর থাকতে ছুটবেন গৃহদেবতার থানে। এত উত্তেজনার মধ্যে ভোরবেলা খাবার-দাবার তেমন মুখে রুচবে বলে মনে হচ্ছে না অনেকের। ওই যতটুকু দাঁতে না কাটলে নয়, সেটুকুই খেতে হবে, জানালেন এক প্রার্থী।

কাকদ্বীপের তৃণমূল প্রার্থী মন্টুরাম পাখিরার দেবদ্বিজে ভক্তি যথেষ্ট। জানালেন, মন্দির, মসজিদ, গির্জা— তিন জায়গাতেই যাবেন গণনাকেন্দ্রে পৌঁছনোর আগে। দলের কর্মীদের নিয়ে শেষ মুহূর্তের হিসেব কষতে হবে। তারপরে বেলার দিকে গণনাকেন্দ্রে যাবেন বলে জানালেন।

সাগরের সিপিএম প্রার্থী অসীম মণ্ডল বললেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে একটি প্রাচীন বটগাছ রয়েছে। শুভ কাজে যাওয়ার আগে আমি ওখানে গেলেই মায়ের কথা মনে পড়ে। সেখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে তারপরে রওনা দেবো গণনাকেন্দ্রের দিকে।’’

বাড়িতে নারায়ণ পুজো সেরে বেরোবেন বলে জানান সাগরের তৃণমূল প্রার্থী বঙ্কিম হাজরা। কাকদ্বীপের কংগ্রেস প্রার্থী রফিকুদ্দিন মোল্লার মনে হচ্ছে, রাতে বিশেষ ঘুম হবে না তাঁর।

হাবরার তৃণমূল প্রার্থী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ছুটতে হবে বারাসতের গণনাকেন্দ্রে। জানালেন, বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে স্বামীজি, রামকৃষ্ণ ও মা সারদার ছবিতে প্রণাম করবেন। তারপরে মা-বাবার ছবিতে প্রণাম সেরে গাড়িতে উঠবেন।

অশোকনগরের সিপিএম প্রার্থী সত্যসেবী কর জানালেন, শুভ কাজের আগে পারিবারিক রীতি মেনে বাবা-মা-ঠাকুর্দা-ঠাকুরমা-দিদির ছবির সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তাঁদের স্মরণ করবেন। মনকে শান্ত করবেন। রাতে ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা কম, বলছেন বাগদার কংগ্রেস প্রার্থী দুলাল বর।

তাঁর বিশেষ সংস্কার নেই বলেই দাবি করছেন গাইঘাটার সিপিআই প্রার্থী কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর। তবে হ্যাঁ, বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে বাবা-মাকে স্মরণ করবেন অবশ্যই।

স্নান সেরে বৃদ্ধা মাকে প্রণাম করে, কালীমন্দিরে আশীর্বাদ নিয়ে তবেই বাড়ি থেকে বেরোবেন বলে জানালেন অশোকনগরের তৃণমূল প্রার্থী ধীমান রায়। বনগাঁ উত্তরের বিজেপি প্রার্থী কেডি বিশ্বাস বললেন, ‘‘বেরোনোর আগে বাড়ির হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে প্রণাম সেরে যাব।’’ ওই কেন্দ্রেরই তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস আবার জানালেন, বাড়িতে থাকা কালীমায়ের ছবিতে প্রণাম করে, বাবা-মার আশীর্বাদ নিয়ে বেরোবেন বাড়ি থেকে।

ক্যানিঙের ট্যাংরাখালি বঙ্কিম সর্দার কলেজে গণনাকেন্দ্র হয়েছে। মহকুমার বিভিন্ন কেন্দ্রের প্রার্থীরা ও তাঁদের নির্বাচনী এজেন্টরা বুধবার রাত থেকে ক্যানিঙের বিভিন্ন হোটেল, লজে উঠেছেন। কেউ কেউ দলীয় কর্মীদের বাড়িতে রাতে থাকবেন।

ক্যানিং পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সওকত মোল্লা এজেন্টদের নিয়ে বুধবার রাতেই ক্যানিঙে এক দলীয় কর্মীর বাড়িতে চলে আসেন। প্রার্থীর কথায়, ‘‘এই প্রথম এত বড় একটা ভোটে লড়ছি। চাপ তো একটু আছেই। তাই ঠিক করেছি, ভোর ৪টেয় উঠে স্নান সেরে একটি পীরের মাজারে যাব। সেখানে প্রার্থনা করে, মসজিদে নমাজ পড়ে সাড়ে ৬টার মধ্যে এজেন্টদের নিয়ে পৌঁছবো গণনাকেন্দ্রে।

ক্যানিং পশ্চিমের কংগ্রেস প্রার্থী অর্ণব রায় আবার জানালেন, এর আগে লোকসভা ভোটে লড়ার অভিজ্ঞতার নিরিখে তাঁর তেমন চাপ নেই। তবে বাড়়ি থেকে বেরোনোর আগে কালীমন্দিরে পুজো দেবেন। বাবার ছবিতে মালাও দেবেন।

গণনাকেন্দ্রে যাওয়ার আগে পুজো-পাঠেই ভরসা রাখছেন ক্যানিং পশ্চিমের তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল মণ্ডল, গোসাবার তৃণমূল প্রার্থী জয়ন্ত নস্কর। গোসাবার আরএসপি প্রার্থী উত্তম সাহা জানালেন, ভোর ৫টায় উঠে তৈরি হবেন। বাম প্রার্থীর কথায়, ‘‘মানুষই আমার ভগবান। তবে বেরোনোর আগে দেবদেবীর নাম স্মরণ করব।’’ ইষ্টদেবতাকে স্মরণ করে বাড়ি থেকে বেরোনোর কথা জানালেন বাসন্তীর আরএসপি প্রার্থী সুভাষ নস্করও। বাসন্তীর তৃণমূল প্রার্থী গোবিন্দচন্দ্র নস্কর তাঁর গৌরদহের বাড়িতে গৌর-নিতাইয়ের মন্দিরে পুজো দিয়ে ৬টার মধ্যে ক্যানিঙে ঢুকবেন বলে জানিয়েছেন।

ইষ্টদেবতা, গুরুজনের আশীর্বাদকে পাথেয় করেই শেষ মুহূর্তে বুকে বল আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 Vote
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE