Advertisement
E-Paper

কেন হার দাদার, মারামারি ভাইয়ে ভাইয়ে

দাদার ফাঁকা সিংহাসনকে সামনে রেখেই যুদ্ধে নেমেছিলেন ভাইয়েরা। যদিও শত চেষ্টা করেও শেষরক্ষা হয়নি। ব্যর্থতার কারণ তলিয়ে দেখতে বৈঠক ডাকলেন অন্য দাদারা। সেই আলোচনা থমকে গেল হইহল্লায়। তার পর চোখের সামনে তৃণমূল বনাম তৃণমূল হাতাহাতি দেখে যারপরনাই বিড়ম্বিত হলেন বৈঠকে উপস্থিত শীর্ষ নেতারা।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০৪:০৪

দাদার ফাঁকা সিংহাসনকে সামনে রেখেই যুদ্ধে নেমেছিলেন ভাইয়েরা। যদিও শত চেষ্টা করেও শেষরক্ষা হয়নি। ব্যর্থতার কারণ তলিয়ে দেখতে বৈঠক ডাকলেন অন্য দাদারা। সেই আলোচনা থমকে গেল হইহল্লায়। তার পর চোখের সামনে তৃণমূল বনাম তৃণমূল হাতাহাতি দেখে যারপরনাই বিড়ম্বিত হলেন বৈঠকে উপস্থিত শীর্ষ নেতারা।

এটাই এখন কামারহাটি। প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী, কামারহাটির সদ্য পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্রের খাসতালুক। যেখানে জেলবন্দি ‘দাদা’কে ইচ্ছে করে হারানো হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁর ‘ভাই’দের একটা বড় অংশ।

মদন হেরে যাওয়ার পরে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল, তাঁর ‘জেলবন্দি’ দশাটাই হয়তো এর কারণ। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে, ময়না-তদন্তে ততই বেরিয়ে পড়ছে অন্য অনেক সম্ভাবনাও। যার সার কথা— কামারহাটিতে তৃণমূলই তৃণমূলকে হারিয়ে দিল না তো!

আর তাই গোটা রাজ্যে তৃণমূলের ঝড় তুলে জয়ের পরেও মদনের বিধানসভা কেন্দ্রে ফল ঘোষণার দিন থেকেই শুরু হয়েছে গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে তরজা, কাদা ছোড়াছুড়ি, মারপিট। কখনও প্রকাশ্যে, কখনও গোপনে। অন্যত্র যখন বিরোধীদের আক্রমণ করার অভিযোগ উঠছে শাসক দলের বিরুদ্ধে, সেখানে কামারহাটিতে ‘সেমসাইড’! স্থানীয় এক মদন-অনুগামীর কথায়, ‘‘মানুষের রায় এটা হতে পারে না। এর পিছনে আমাদেরই হয়তো কারও স্বার্থ কাজ করেছিল। তাই দাদাকে হারতে হয়েছে।’’

এ দিন সকালের অশান্তিতে অবশ্য কোনও ‘হয়তো’ বা ‘কারও’ ছিল না। প্রকাশ্যেই কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান তথা মদনের নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক গোপাল সাহাকে নিশানা করেছেন মদন-অনুগামীরা। কামারহাটিতে হারের কারণ খতিয়ে দেখতে এ দিন বেলঘরিয়ার ‘অমৃত ভবন’ অনুষ্ঠান বাড়িতে শাসক দলের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে সমস্ত কাউন্সিলর ছাড়াও ছিলেন সাংসদ সৌগত রায়, জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, জেলা পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ।

সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বৈঠক শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টা পরেই বাইরের চেঁচামেচিতে থমকে যায় আলোচনা। দেখা যায়, বেলঘরিয়া টাউন তৃণমূল যুব সংগঠনের সভাপতি গৌতম সাহার নেতৃত্বে প্রায় ৩০০ কর্মী ওই অনুষ্ঠান বাড়ির বাইরে এসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন (স্থানীয়দের বক্তব্য, মদনই এই সংগছন গড়ে গৌতমকে তার মাথায় বসিয়েছিলেন)। তাঁদের অভিযোগ, মদনকে ‘হারানোর’ পিছনে গোপাল সাহারই হাত রয়েছে। গোপালকে সিপিএমের মানস মুখোপাধ্যায়ের ‘দালাল’ বলে দাবি করে স্লোগানও দিতে থাকেন তাঁরা।

নিজেদেরই দলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পোস্টার, ব্যানার নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা এই বিক্ষোভ চলে। অবিলম্বে গোপালকে চেয়ারম্যান এবং এলাকার সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিও ওঠে। এক সময় গোপালের কয়েক জন অনুগামী বিক্ষোভ থামাতে যান। তখনই গৌতমদের সঙ্গে হাতাহাতি বেধে যায় তাঁদের। শেষ পর্যন্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সৌগতবাবু কিংবা জ্যোতিপ্রিয়বাবু অবশ্য বিক্ষোভ সামাল দিতে রাস্তায় বেরোননি। তবে দলীয় সূত্রের দাবি, অশান্তি সৃষ্টি করা কর্মীদের নামধাম লিখে নিয়েছেন তাঁরা।

মদন-অনুগামী গৌতমের কথায়, ‘‘প্রার্থী তথা বিদায়ী বিধায়ক জেলে। তাই তাঁর হয়ে নির্বাচনে সব থেকে বেশি ভূমিকা পালন করার কথা এলাকার চেয়ারম্যান গোপাল সাহার। তা না করে, নামমাত্র কয়েকটি মিটিং-মিছিলে তিনি দায় সেরেছেন। গোপনে সিপিএমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই হারের দায় ওঁকেই নিতে হবে।’’ গৌতমের দাবি, মদনের দীর্ঘদিন এলাকায় না থাকার সুযোগ নিয়ে দুর্নীতিতেও প্রশ্রয় দিয়েছেন গোপাল। তাঁর কথায়, ‘‘মদনদা জেলে থাকলে ওঁর মতো অনেকেরই সুবিধে। ওঁরা কখনও চাননি দাদা ছাড়া পাক।’’

কী বলছেন গোপাল?

তাঁর বক্তব্য, ‘‘গৌতমের ওই সংগঠনের কোনও অস্তিত্ব নেই। আর মদনদার থেকে আমি বড় হব এমন ইচ্ছেও আমার নেই, কোনও দিন ছিলও না। তাই ওঁকে হারানোর প্রশ্নও নেই।’’ গোপালের দাবি, সমস্ত কাউন্সিলরই এ দিন শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, বিধায়ক হিসেবে মদন জেলবন্দি থাকলে নাগরিকদের কী কী সমস্যা হতে পারে, তা নিয়ে জোরদার প্রচার করেছিল বিরোধীরা। মানুষ সেই যুক্তিই গ্রহণ করেছে। তা ছাড়া, সারদার পর নারদ-কাণ্ডেও মদনের জড়িয়ে পড়াটা তাঁর বিপক্ষে গিয়েছে। সূত্রের খবর, এ দিন কাউন্সিলরদের একাংশ দাবি করেন, এলাকায় নাগরিক পরিষেবা নিয়ে কিছু সমস্যা, দলীয় কর্মীদের ‘দাদাগিরি’ও ভোটে প্রভাব ফেলেছে। পাশাপাশি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেলঘরিয়ার বদলে কামারহাটিতে সভা করলে তা বেশি কার্যকর হতো বলেও অনেকে জানান।

এই সমস্ত যুক্তিই উড়িয়ে দিচ্ছেন গৌতম। তাঁর দাবি, ‘‘সবাই মিলে পরিকল্পনা করেই সব হয়েছে। ২১৫টা বুথে ২০টা করে ভোট কম পড়লেই মদনদাকে হারানো সম্ভব। আর হয়েছেও তাই। দাদা মাত্র ৪২০০ মতো ভোটে হেরেছেন।’’ পাল্টা গোপাল বলছেন, ‘‘গৌতমরা যা করলেন তা থেকে মদনদার হারের আরও একটা কারণ স্পষ্ট হল। দেখা গেল, কী ভাবে এই সমস্ত ছেলেরা এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে ব্যবহার করেন।’’

ভাইদের অশান্তিতে ‘দাদার’ তাই হেরেও শান্তি নেই!

assembly election 2016 Kamarhati inter clash Madan Mitra defeat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy