Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বেশি ভোট ভাবাচ্ছে তৃণমূলকে

মানুষের মন বোঝা বড় কঠিন, দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন ঘাটালের এক সিপিএম কর্মী। তাঁর কথায়, ‘‘বেশি ভোট পড়ায় আমরা আশাবাদী। ভোট শেষের পর এ বার অঙ্ক কষার পালা। দেখা যাক কী হয়।’’ বেশি ভোট পড়ায় কার দিকে পাল্লা ভারী, তা নিয়ে চিন্তায় শাসক শিবিরও। ঘাটাল মহকুমার তিনটি বিধানসভা ঘাটাল, চন্দ্রকোনাতে ভোটের হার ৮০ শতাংশের বেশি।

ভোট শেষের ব্যস্ততা। সোমবার রাতে মেদিনীপুর কলেজে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

ভোট শেষের ব্যস্ততা। সোমবার রাতে মেদিনীপুর কলেজে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০০
Share: Save:

মানুষের মন বোঝা বড় কঠিন, দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন ঘাটালের এক সিপিএম কর্মী। তাঁর কথায়, ‘‘বেশি ভোট পড়ায় আমরা আশাবাদী। ভোট শেষের পর এ বার অঙ্ক কষার পালা। দেখা যাক কী হয়।’’ বেশি ভোট পড়ায় কার দিকে পাল্লা ভারী, তা নিয়ে চিন্তায় শাসক শিবিরও।

ঘাটাল মহকুমার তিনটি বিধানসভা ঘাটাল, চন্দ্রকোনাতে ভোটের হার ৮০ শতাংশের বেশি। দাসপুরে ভোট শতাংশ ৭৮.১৫। চন্দ্রকোনায় শাসকদলের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগে সরব হয় বামেরা। যদিও ঘাটাল ও দাসপুরে মানুষ ভোট দিতে পারায় ফল তাঁদের পক্ষেই যাবে বলে আত্মবিশ্বাসী বাম শিবির।

গত লোকসভা ভোটে ঘাটাল কেন্দ্রে ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। বামেদের দখলে ছিল ২৯ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এ বার বাম ও কংগ্রেসের জোট যদি লোকসভার ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখতে পারে। তাহলে তাদের ভোট শতাংশ দাঁড়াবে ৩৩ শতাংশ। সে ক্ষেত্রেও তাঁদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে তৃণমূল। ২০১৪ -র লোকসভা ভোটে দাসপুরে শাসকদলের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল বামেরা।

তাহলে কোন অঙ্কে জয়ের আশা? বাম নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, বছর খানেক আগেও ঘাটালের অধিকাংশ পার্টি অফিসে তালা ঝুলছিল। দলের কোনও কর্মসূচি করা যেত না। এখন তুলনায় সংগঠনের অবস্থা ভাল। মিছিলে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান দেখা গিয়েছে। তা ছাড়া, সারদা ও নারদ কাণ্ডের পর মানুষ আর তৃণমূলকে চাইছে না। তাই জয় আসবেই।

যদিও তৃণমূলের দাবি, গত পাঁচ বছরে রাজ্য সরকারের উন্নয়ন দেখেই মানুষ ভোট দেবেন। জয় নিয়ে বিশেষ ভাবছেন না ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী শঙ্কর দোলই। ব্যবধান কতটা বাড়বে, সেটাই তাঁর মাথাব্যথার কারণ। তাঁর সাফ কথা, “আমি আগেও বলেছিলাম। এখনও বলছি। গতবার ১৬ হাজারের একটু বেশি ভোটে জিতেছিলাম। এ বার ওই লিড অন্তত তিনগুণ বাড়বে।’’ তিনি আরও বলছেন, ‘‘১৯ মে বাক্স খুললেই সিপিএম জোটের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।” দাসপুরের তৃণমূল প্রার্থী মমতা ভুঁইয়ার কটাক্ষ, ‘‘দাসপুরে সিপিএমের সংগঠনই তো নেই। তারপরেও সিপিএম জেতার আশা করলে ভালই। অন্তত এটা ভেবে ফল ঘোষণার দিন পর্যন্ত ওঁরা ভাল থাকুক।”

তবে এই তিনটি আসন নিয়ে শাসকশিবিরে অস্বস্তিও রয়েছে বিস্তর। জেলা পরিষদের তৃণমূলের এক কর্মাধ্যক্ষের কথায়, “চন্দ্রকোনা নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। ওখানে যা যা ছক করেছিলাম সবই কাজে এসেছে। তবে ঘাটাল ও দাসপুরে ‘লক্ষ্যপূরণ’ করা যায়নি।’’ তিনি বলছেন, ‘‘ওখানে ভোটের হার ভাল। ভোটটা কোনদিকে গিয়েছে, তা নিয়েই চিন্তা রয়েছে।’’

ঘাটালের সিপিএম নেতা অশোক সাঁতরা ও দাসপুরের বাম নেতা সুনীল অধিকারীর যুক্তি, “ভোটের দিনই তৃণমূল আমাদের ক্ষমতা ঠাওর করেছে।’’ তাঁরা বলছেন, ‘‘শাসকদলের অনেক কর্মী নিজের দলের প্রার্থীদেরই মেনে নিতে পারেনি। তাই আমরা যে জিতব- এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।”

কে জিতবে, কে হারবে, তা নিয়ে শাসক-বিরোধীর যুক্তি-পাল্টা যুক্তির তরজা চলতেই থাকবে। শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি কে হাসবেন, তা বলবে সময়ই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE