Advertisement
E-Paper

নারদভূমে আজ লড়াই স্যান্ডাল বনাম স্ক্যান্ডাল

স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি চড় খেতেও রাজি! কিন্তু চোর বললে গায়ে লাগে! যে নারদের ধাক্কায় তাঁর এমন মরিয়া দশা, সেই নারদের ভূমিতেই ভোট আজ, শনিবার। নারদে আক্রান্ত দুই মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এই দফার নির্বাচনেই প্রার্থী।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:২০

স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি চড় খেতেও রাজি! কিন্তু চোর বললে গায়ে লাগে!

যে নারদের ধাক্কায় তাঁর এমন মরিয়া দশা, সেই নারদের ভূমিতেই ভোট আজ, শনিবার। নারদে আক্রান্ত দুই মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এই দফার নির্বাচনেই প্রার্থী। কলকাতার গণ্ডি ছেড়ে আরও এগিয়ে গেলে হুগলির খানাকুলে প্রার্থী ইকবাল আহমেদ। তিনিও দিদির আর এক নারদ-ভাই! যিনি নারদ নিউজের প্রতিনিধিকে সুব্রত, ববি, শোভনদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলেন। আর নিজেও বলেছিলেন, এত কম টাকায় তাঁর আর কী হবে!

শুধু নারদ ভূমে ভোট আর নারদ-ভাইদেরই পরীক্ষা, ব্যাপারটা এমন নয়। ভাইদের অভিভাবক হিসাবে যাবতীয় অন্যায়ের প্রশ্রয়দাতা বলে যাঁকে বিরোধীরা চিহ্নিত করে এসেছেন, তাঁর নিজের ভোটও আজই! সারদা, নারদ-সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ শাসক দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর সঙ্গে ভবানীপুরে আজ সম্মুখ সমর জোট-প্রার্থী দীপা দাশমুন্সির। সিপিএমের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘পাঁচ বছরে নানা রকমের চুরি-দুর্নীতিতে গোটা তৃণমূল দলটাই জড়িয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও যারা দাগি চোর, তাদের ভোট শনিবার!’’

সরাসরি চুরির অভিযোগের শলাকার নীচে যে আজ ভোট-ময়দানে দাঁড়াতে হবে, বিলক্ষণ জানেন মমতাও। তাই কিছু দিন ধরে যত রকম ভাবে সম্ভব, চেষ্টা করেছেন ঠ্যালা সামাল দেওয়ার। শুরু করেছিলেন নারদের স্টিং ভিডিওটাই ‘ভেজাল’ বলে। তার পরে বলার চেষ্টা করেছেন, ভিডিওয় যা দেখা গিয়েছে, সেটা অনুদান! ঘুষ নয়। যদিও নারদ নিউজের সিইও ম্যাথু স্যামুয়েল কলকাতায় এসে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়ে গিয়েছেন যে, অনুদান কেউ তোয়ালে মুড়ে নেয় না! মমতা অবশ্য ওই ব্যাখ্যাতেই থেমে থাকেননি। এক বার বলেছেন, প্রার্থী ঘোষণার আগে নারদের কথা জানলে তিনি ভেবে দেখতে পারতেন! আবার পরে আর এক দিন বলে দিয়েছেন, তাঁকে যদি মানুষ চোর ভাবেন, তা হলে না হয় ভোট দেবেন না! আর সব শেষে তাঁর কাতর আর্জি, অন্যায় করে থাকলে কেউ এসে তাঁকে দু’টো চড় মারতে পারেন! মা-বোনেরা বললে বাড়ি গিয়ে তিনি বাসন মেজে দিতে পারেন! কিন্তু চোর বললে খুব গায়ে লাগে!

এ সব আলাদা আলাদা কথাকে এক সুতোয় জুড়ে বিরোধীরা বলছেন, বোঝা যাচ্ছে চুরির অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর গায়ে লাগছে! বারেবারে তিনি চেষ্টা করছেন, অন্যায়ের থেকে নিজেকে আলাদা করে দেখানোর। কিন্তু এই প্রয়াসের মধ্যেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়ে যাচ্ছে যে, এ বার বাংলার ভোটটা হচ্ছে দুর্নীতির অভিযোগকে ঘিরে। আর সারদা থেকে নারদ বা উড়ালপুল ভেঙে পড়া— কোনও অভিযোগেই মুখ্যমন্ত্রী যে হেতু কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা নেননি, তাই সবই তাঁর ‘অনুপ্রেরণা’য় হচ্ছে বলে ধরে নিতে সুবিধা হচ্ছে বিরোধীদের। দুর্নীতির অভিযোগ সারদা-কাণ্ডেও ছিল। কিন্তু তাতে চাক্ষুষ করার কিছু ছিল না। আর নারদের ঘটনায় টিভির পর্দায় নেতা-মন্ত্রীদের হাত পেতে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে! তৃণমূলের নেতারা কেউ যে কাউকে মর্যাদা দেন না, বরং অন্তরালে দিদি সম্পর্কেও ‘শালা’ বলতে পারেন, সেই সংলাপও নারদের কল্যাণে শুনে ফেলেছে জনতা! তাই চাপ ভয়ঙ্কর!

বিরোধীরা জানেন, শুধু ভাইদের বিঁধে কাজ নেই। আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করতে হবে ভাইদের মাথাকেই। তাই নারদ-কাণ্ড সামনে আসতেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘লুঠ হয়েছে হাজার কোটি, কে খেয়েছে, হাওয়াই চটি!’’ সেই স্লোগান সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দ্রুত ভাইরাল হয়েছে। আবার ভবানীপুরের প্রার্থী দীপা সেই লক্ষ্যেই বলে রেখেছেন, ‘‘এসেছিলেন স্যান্ডেলে। যাবেন স্ক্যান্ডালে!’’ সত্যিই তা-ই ঘটে কি না, নারদ-ভূমে আজ তার পরীক্ষা!

assembly election 2016 TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy