আতঙ্ক এখনও পিছু ছাড়ছে না। প্রায় দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে। মাঝে একটা ভোটে দল ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু লোকসভা ভোটের হিসেবে এখনও কুলটিতে নিশ্চিন্ত হতে দিচ্ছে না শাসক দলকে।
২০০৬ থেকে এই কেন্দ্রের বিধায়ক তৃণমূলের উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘ দিন কুলটির পুরপ্রধানও ছিলেন। প্রচার ও দলের কর্মিসভায় গিয়ে এ বার তিনি সাফ বার্তা দিচ্ছেন, কোনও রকম গোষ্ঠীকোন্দল বরদাস্ত করা হবে না। যা শুনে দলের কর্মীদের একাংশই একান্তে বলছেন, লোকসভা ভোটে হারের পিছনে যে কারণ ছিল বলে দলীয় নেতৃত্ব সন্দেহ করেছিলেন, সে কারণই না এ বার তাঁর মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ায়, সেই ভয়ই পাচ্ছেন প্রার্থী।
কুলটি বিধানসভা কেন্দ্রে এখনও পর্যন্ত ১৫ বার ভোট হয়েছে। কংগ্রেস ছ’বার, বামেরা পাঁচ বার ও তৃণমূল দু’বার জিতেছে। অন্যরা জিতেছে দু’বার। ১৯৫২ সালে প্রথম ভোটে জেতে কংগ্রেস। ১৯৭৭ সালে প্রথম বার জেতে বামেরা। ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী মধু বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ী হন। তার পর থেকে গত বিধানসভা ভোট পর্যন্ত ফরওয়ার্ড ব্লক এখানে টানা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে আসা নেতা উজ্জ্বলবাবু ২০০৬ সালে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে জয়ী হন। সেই থেকে আসনটি তৃণমূলের দখলেই রয়েছে।
বিধানসভা আসন দখলে থাকলেও কুলটিতে তৃণমূলের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোট। সে বার এই এলাকা থেকে বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলের দোলা সেনের থেকে প্রায় চল্লিশ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিলেন। জেলা তৃণমূলের একটি অংশের দাবি, দলীয় নেতৃত্ব মনে করেছিলেন, অন্তর্ঘাতের কারণেই এমন বিপর্যয়। ২০১৫ পুরভোটে উজ্জ্বলবাবুকে প্রার্থী করেনি দল। তবে এই এলাকায় দলের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকেই। এই ভোটে অবশ্য তৃণমূল ঘুরে দাঁড়ায়। এই এলাকায় আসানসোল পুরনিগমের ২৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টি এখন তাদের দখলে। এর পরেই এ বার ফের দলের টিকিট পেয়েছেন উজ্জ্বলবাবু।
আবার জেতার ব্যাপারে অবশ্য তিনি আত্মবিশ্বাসী বলে দাবি করেন তৃণমূল প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘‘গত দশ বছরে কুলটির উন্নয়ন ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি মানুষের আস্থাই এখানে আমাদের জেতাবে।’’ দলের নেতাদের অবশ্য চিন্তা যাচ্ছে না। এক ব্লক তৃণমূল নেতার দাবি, লোকসভা ভোটে এখানে যে কোন্দলের কারণে তৃণমূল প্রার্থী পিছিয়ে পড়েছিলেন, তা থামাতে পারেননি উজ্জ্বলবাবু। সে জন্য তাঁকে পুরভোটে প্রার্থিতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু বাম-কংগ্রেস জোটের পরিস্থিতিতে তাঁকে প্রার্থী না করার ঝুঁকি দল নিতে পারেনি। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দাবি, অস্তিত্ব প্রমাণে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন উজ্জ্বলবাবু। তবে লড়াই যে সহজ হবে না, তা মনে করছেন তৃণমূল কর্মীরাই। দলের কৃষক সংগঠনের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘নিয়ামতপুর, বরাকর, এমনকী বিধায়কের নিজের এলাকা চিনাকুড়ি, শীতলপুরেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে। তা সামাল দেওয়াই এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।’’ যদিও দলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের বক্তব্য, ‘‘এ সব কোনও ব্যাপার নয়।’’
তৃণমূলের এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই হাতিয়ার করতে চাইছে বিরোধীরা। কয়েক দশক পরে এ বারই এই কেন্দ্রে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দেয়নি। আসন সমঝোতায় কুলটি কেন্দ্র এ বার কংগ্রেসকে ছেড়েছে বামেরা। সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, ‘‘বাম ও কংগ্রেসের ভোটের সঙ্গে এ বার যোগ হবে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর ভোট। তাই ফল এ বার আমাদের অনুকূলেই যাবে।’’ যদিও কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের একটি অংশ লড়াই এত সহজ বলে মনে করছেন না। তাঁদের আশঙ্কা, অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোটের স্বার্থে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব এই আসন ছাড়লেও তাদের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকেরা বিষয়টি সহজ ভাবে নেবেন না। কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ আচার্য বলেন, ‘‘প্রত্যেকের কাছেই সমর্থন চেয়ে আবেদন করছি।’’
লোকসভা ভোটের সাফল্য পুরভোটে ধরে রাখা না গেলেও এ বার আবার কুলটিতে তাদের ভোটবাক্স ভরে উঠবে বলে আশায় রয়েছে বিজেপি। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপি প্রার্থী অজয় পোদ্দার সাংসদ বাবুলের ঘনিষ্ঠ। বাবুল-সহ দলের বেশ কয়েক জন হেভিওয়েট নেতাকে এখানে প্রচারে আনার উদ্যোগ চলছে। লক্ষ্য একটাই, রাজ্যের সীমানা শহর দখল। কাঁটা শুধু পুরভোটের ফল। ২৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র দু’টিতে জিতেছিল তারা। প্রার্থী অজয়বাবু অবশ্য দাবি করেন, ‘‘পুরভোটে সন্ত্রাস হয়েছিল। এ বার তা হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy