যিনি ভোটে লড়েন, তিনি চুলও বাঁধেন। ময়ূরেশ্বরের পাথাই গ্রামে। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য
পশ্চিম কোলে তখন সবে মাত্র সূর্য ডুবেছে।
পাথাই গ্রামের শুরুতেই প্রাচীর ঘেরা সাদা রঙের বাড়িটার সামনে তখন কেমন যেন একটা নিস্তব্ধতা! দু’-এক জন ইতিউতি ঘুরে বেড়ালেও কারও প্রশ্নের মুখোমুখি না হয়ে মূল দরজা পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতেই জানা গেল— ‘দিদি তো বেরিয়েছেন।’ অত এব অপেক্ষা।
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে ‘দিদি’ এলেন। তবে এ দিদি শাসকদলের নন। তিনি বিজেপি-র প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। ময়ূরেশ্বর কেন্দ্র থেকে লড়ছেন। গাড়ি থেকে নেমে হাসিমুখে বললেন, ‘‘প্রচার না থাকলেও আজ বরং চাপটা আরও বেশি। সারা দিন খাওয়াও হয়নি।’’
কেষ্টদার খাসতালুকে ভোট-যুদ্ধে চাপ থাকবে না তা কি হয়? কিন্তু, এই চাপকে মোটেও আমল দিতে রাজি নন জেলবন্দি মদনের খাসতালুক কামারহাটির বাসিন্দা লকেট। বরং অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বললেন, ‘‘ময়ূরেশ্বরের ২৬২টি বুথেই আমরা এজেন্ট দেব। সারা দিন ধরে সেই বুথ ম্যানেজমেন্টেরই ব্যবস্থা করলাম।’’ পাশাপাশি লকেটের দাবি, ‘‘কে কাকে ভোট দেবেন, সেটা বিষয় নয়। কিন্তু এক জন সাধারণ মানুষের গায়েও যদি হাত লাগে, আমিও হাল ছাড়বো না।’’ আর ময়ূরেশ্বর জুড়ে ভূতের দাপাদাপি রুখতে আজ ভোটের দিন সকাল থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষই ‘ওঝা’র ভূমিকায় নামবেন বলেই লকেটের বিশ্বাস।
তবে ভোট-যুদ্বের ময়দানে কারও সৌজন্যতাকে কেউ যদি দুর্বলতা মনে করেন, তবে সেটা ভুল হবে বলেই সাদা বাড়ির বারান্দার তক্তপোশে বসে দাবি করলেন লকেট। কিন্তু কী করবেন? সামলাতে পারবেন অনুব্রতকে? প্রশ্ন শেষ হতেই অভিনেত্রীর সটান জবাব, ‘‘যেমন কুকুর, তেমন মুগুর তো হবেই। কেউ একা ভয় দেখাবে, তা তো হবে না।’’ এমনকী, প্রয়োজনে ‘মুগুর’ও তৈরি রয়েছে বলেই দাবি লকেটের।
শনিবার প্রচার পর্ব না থাকলেও সকাল থেকেই পাথাই গ্রামের তিনতলা সাদা বাড়ির ‘ওয়ার-রুমে’ ব্যস্ত লকেট। কখনও রুদ্ধদ্বার বৈঠক, কখনও আবার কর্মীদের থেকে ফোন পেয়েই গ্রামের রাস্তায় গাড়ি ছুটিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন ময়ূরেশ্বরের বিভিন্ন প্রান্তে। ভরসা জুগিয়ে ফের চলে এসেছেন পাথাই গ্রামের এই ওয়ার-রুমে। কথার মাঝেই জানালেন, সারা দিন এত ব্যস্ততায় তেমন খাওয়া হয়নি। তবে মাঝে দুপুরে একটু চিড়ে দই খেয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন।
এ দিন বিকেল থেকেই গ্রামের মেঠো রাস্তায় লকেটের গাড়ির মতোই ধুলো উড়িয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীও। লকেটের কথায়, ‘‘গ্রামের সাধারণ মানুষই আমার সোর্স। তাঁরাই জানাচ্ছেন কখন কোথায় কেন্দ্রীয় বাহিনী টহল দিচ্ছে।’’ তবে যুদ্ধের আগের দিন সন্ধেয় নিজের জয় সম্পর্কে কিছু না বলতে চাইলেও বিজেপি প্রার্থী বললেন, ‘‘আমার লড়াই কোনও দলের বিরুদ্ধে নয়। অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই। তাই সবার ভোটদানটা নিশ্চিত করতেই হবে।’’
কথার ফাঁকেই লকেট জানালেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসছে। হাওয়া গরম হচ্ছে। তাই রাতে ঠান্ডা মাথায় বসে ঠিক হবে ভোটের রুট ম্যাপ। কিন্তু অনুব্রত তো হুঙ্কার দিয়েছেন, চড়াম চড়াম করে ঢাক বাজবে। তার আওয়াজে কি কাজ করা যাবে? এক গাল হেসে লকেট বললে়ন, ‘‘ওঁর কথা ফাঁকা কলসির মতো বাজে। ওতে কিছু হবে না।’’
এ বার ওঠার পালা। শেষ প্রশ্ন-গরমে বাতাসা-গুড়-জল খাওয়াবেন তো? খোলা চুলকে হাতে নিয়ে খোঁপা বাঁধতে বাঁধতে স্মিত হাসি লকেটের মুখে। বললেন, ‘কী আর খাওয়াবো, তবে ধূপ ধূনো দিয়ে পুজো করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy