Advertisement
১২ অক্টোবর ২০২৪
BJP

লকেট চট্টোপাধ্যায় । চুঁচুড়া

আনন্দবাজার ডিজিটাল
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২১ ১১:৫১
Share: Save:

জলে-স্থলে-রেলে: নীলবাড়ির লড়াইয়ে প্রচারে এত রং আর কোনও প্রার্থী দেখাননি। নৌকাবিহার থেকে গরুর গাড়িতে রোড শো— সব করেছেন। স্কুটি, সাইকেল মিছিল কিচ্ছু বাদ দেননি। শেষে লোকাল ট্রেনেও উঠে পড়েছেন। হাতে প্লাস্টিকের পদ্ম-পাখা।

দক্ষিণেশ্বর টু ষণ্ডেশ্বর: এখন নরেন্দ্রপুরের বাসিন্দা। কিন্তু মা ভবতারিণীর দেশ দক্ষিণেশ্বরের কন্যা। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসের বংশধরও বটে। তবে এখন তিনি বাবা ষণ্ডেশ্বরের শরণে। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হওয়ার পরেও গঙ্গাপাড়ের ওই মন্দিরে গিয়েছেন। আর নীলবাড়ির লড়াইয়ে ষণ্ডেশ্বরের চুঁচুড়াই তাঁর আসন। বাবার মাথায় জল ঢেলেই শুরু করেছেন প্রচার।

ভোটে আটকে ভ্যাকসিন: জন্ম ১৯৭৪ সালে। অর্থাৎ ৪৫ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু করোনার ভ্যাকসিন এখনও নিয়ে উঠতে পারেননি। প্রচারে এত ব্যস্ত, যে সময়ই পাচ্ছেন না। মুখের মাস্কও হাতেই ঝুলছে বেশির ভাগ সময়। ভোট মিটে গেলে প্রথমেই ভ্যাকসিনটা নিয়ে নেবেন বলে ঠিক করেছেন।

সুরভিত অ্যান্টিসেপ্টিক: প্রসাধনের প্রয়োজন মিটিয়ে ফেলতে পারলেও ইদানীং বোরোলিনে ভরসা বেড়েছে। কারণ, প্রচারে হাঁটতে হাঁটতে পায়ে ফোস্কা। রাতে একটু বোরোলিন না লাগালেই নয়। জীবনের নানা ওঠা-পড়া যেন পায়ে না লাগে।

ওজনদার: রাজনীতিতে আসার পর থেকেই ওজন বেড়ে চলেছে। রাজনৈতিক ওজনের সঙ্গে দেহের ওজনও। ২০০০ সালে যে সব পোশাক কিনেছিলেন, সেগুলো ২০১৫ অবধিও ফিট করে যেত। কিন্তু এখন আর সেসব ভাবাই যায় না। তবে লকেট বলেন, খেয়ে নয়, না খেয়েই ছ’বছরে ১০-১২ কেজি বৃদ্ধি। এখন তো জীবনটাও অন্যরকম। নাওয়া-খাওয়ার ঠিক নেই। যেমন ঠিক নেই সাজগোজের। অভিনয় জীবনের ১৫ বছর খুব সেজেছেন। তবে সেটা নাকি খুব পছন্দের ছিল না। ২০১৫ থেকে ব্যাগে লিপস্টিকটাও থাকে না। লালফিতে, চিরুনি বা আয়নাও নয়। মাঝেমধ্যে গাড়ির আয়নায় মুখটা দেখে নেন শুধু।

যোগে বিয়োগ: আগে নিয়মিত যোগাভ্যাস করতেন। সে সব এখন ডকে উঠেছে। রাজনীতির নিয়ম মানতে গিয়ে অন্য কোনও নিয়মই আর মানা হয় না। যা পান খেয়ে ফেলেন। তবে এ বার একটু নিয়ম মেনে চলছেন। ব্যান্ডেলে বাড়িভাড়া নিয়েছেন। প্রচারের ফাঁকে সেখানে চলে আসেন খাওয়াদাওয়া সারতে।

খালি ধনেখালি: প্রচুর শাড়ি কেনেন। সেটা শখ। আলমারিতে ভর্তি শাড়ি। নিজেও জানেন না সংখ্যাটা ঠিক কত। উপহারও যা পান, বেশির ভাগটাই শাড়ি। তবে উপহারদাতাদের আগে থেকে বলে দেন, দিলে সুতির শাড়িই দিতে হবে। হুগলির সাংসদের কাছে এখন হুগলির ধনেখালিই সবচেয়ে প্রিয়। একটা সময় খুব ঢাকাই পরতেন। সিল্কও। এখন আর ও সব ম্যানেজ করতে পারেন না। তাই সব ছেড়ে এখন ওনলি সুতি। খালি ধনেখালি।

আঁচল কোমরেই সুন্দর: কোমরে আঁচল বেঁধে ঝগড়া করায় তাঁর জুড়ি নেই। লকেট অবশ্য দাবি করেন, তিনি মোটেও ঝগড়ুটে নন। ছোটবেলায় নাচ শেখার সময় থেকেই কোমরে আঁচল বাঁধার অভ্যাস। হঠাৎ রাজনৈতিক সফরে যেতে মোটরবাইকে বসতেও ‘কমফর্টেব্‌ল’ লাগে।

গলাই বাজি: সেই শুরু থেকেই গলার শির ফুলিয়ে চিৎকারে ওস্তাদ লকেট। রাজনীতিতে এসে থেকেই পদ্মের ‘প্রতিবাদী মুখ’ হওয়ার লড়াই সহজ করে দিয়েছিল ওই গুণটা। মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী থাকার সময় থেকে নির্বাচনী লড়াইয়ে, মঞ্চে কিংবা পুলিশের সামনে চিলচিৎকার লকেটের কণ্ঠের লকেট।

রং আছে ঢং নেই: বিজেপি-তে সবাই বলেন, লকেট মানেই সব কিছু রঙিন। রং আছে। তবে নায়িকা সুলভ ‘ঢং’ নেই। রঙিন থাকতে যে পছন্দ করেন, সেটা লকেটও স্বীকার করেন। লাল, হলুদ, গোলাপি, রানি প্রিয় রং হলেও সেরা ‘অরেঞ্জ’। স্বাভাবিক। এখন তো ফলের রং-ই মনের রং।

মৎস্যমুখী: মাছ খুব প্রিয়। ছোট মাছ আরও প্রিয়। মাছ রান্না করতেও ভালবাসেন। ডাল, শুক্তো, আলু-পোস্ত সব রান্নাই পছন্দ ‘গিন্নি’ লকেটের। আর ‘মা’ লকেটের ভরসা ইউটিউব। তৃতীয় বর্ষে পড়া ছেলের বায়না মেটাতে পোলাও, বিরিয়ানি, চিলি চিকেন সবই রাঁধতে হয়। তখন ইউটিউব চালিয়ে চেষ্টা করেন। ছেলে বলে ‘পাসমার্ক’ পান। মা মনে করেন, ও সবে এখনও সাবলীল নন।

নামে কী আসে-যায়: নাম নিয়ে অনেক রসিকতা শুনতে হয়। অনেক সময় সেই রসিকতা শালীনতার মাত্রাও ছাড়িয়ে যায়। তবে দাদুর রাখা নাম নিয়ে গর্বের অন্ত নেই লকেটের। বলেন, ‘‘কে কী বলল আমার তাতে কিস্যু যায়-আসে না। দলে কিন্তু সবাই লকেট’দি, লকেট ম্যাডাম, লকেট’জি বলেই ডাকেন।’’

আধা সন্ন্যাসিনী: রাজনীতিতে আসতে অনেক কিছু ত্যাগ করেছেন। মনে করেন, রাজনীতি ত্যাগের জায়গা। তবে আক্ষেপ নেই। কারণ, খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দলের বৈঠকে বড় সার্টিফিকেট দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘হিরোইন থেকে রাজনীতিক হওয়া লকেট’জি সকলের প্রেরণা। অনেক ত্যাগের মধ্যে দিয়ে নিজেকে গড়ে তুলেছেন।’’ নিজে তেমন পুজোআচ্চা করেন না। সকালে ঠাকুরকে প্রণাম করে বেরিয়ে পড়েন। তবে বাড়িতে লক্ষ্মী আর সরস্বতী পুজো হয়। ওয়ালেটে রাখেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ, মা সারদা এবং দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণীর ছবি।

মেপে আর চেপে: বক্তৃতায় ক্লান্তি নেই। কিন্তু এমনিতে ‘কথা কম, কাজ বেশি’-তে বিশ্বাসী। দলের অন্দরের সব খবরও নাকি রাখেন না। কারও বিরুদ্ধে মুখ খোলাও ধাতে নেই। দুমদাম কথা বলেন না। যা বলেন, মেপে এবং চেপে। এখনও পর্যন্ত কোনও ধরনের দলীয় বিতর্কে জড়াতে দেখা যায়নি। লকেটের নীতি— ‘‘বেশি কৌতূহল ভাল নয়। শুধু নিজের কাজটুকু মন দিয়ে করে যেতে হবে।’’

নায়িকা সংবাদ: এই নামে তাঁর একটা ছবি আছে। তবে সে সব এখন অতীত। ২০১৫ থেকে পুরোটাই রাজনীতি। পরে খান দু’য়েক ছবিতে অভিনয় করলেও তত দিনে গেরুয়া আলোয় ঝাপসা হয়ে গিয়েছে রুপোলি ঝলক।

তথ্য: পিনাকপাণি ঘোষ, রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE