সিঙ্গুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রচার তৃণমূল প্রার্থী বেচারাম মান্নার। —নিজস্ব চিত্র।
ছিল ৭৮ কেজি। হয়েছে ৭৩। শুধু হেঁটেই সিঙ্গুরের তৃণমূল প্রার্থী বেচারাম মান্না এক মাসে ওজন কমিয়েছেন পাঁচ কেজি। ভোট বড় বালাই।
সিঙ্গুরের ‘ভূমিপুত্র’ জমি আন্দোলনের নেতা বেচারামের লড়াই সিঙ্গুর আন্দোলনের আর এক ‘সেনানী’ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে। ঘটনাচক্রে, সিঙ্গুর তথা রাজ্য রাজনীতিতে ‘মাস্টারমশাই’ বলে পরিচিত নব্বই ছুঁইছুঁই রবীন্দ্রনাথবাবু এ বারের ভোটে ঘাসফুল শিবিরের বদলে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী। একদা রাজনৈতিক শিক্ষক ‘মাস্টারমশাই’কে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে নারাজ বেচারাম। বলছেন, ‘‘রোজ হেঁটেই প্রচার করছি। ২৪-৩০ কিলোমিটার হাঁটছি প্রতিদিন। বাড়ি-ওলিগলি, কিছুই বাদ দিচ্ছি না। ধামসা-মাদল নিয়ে যাচ্ছি। সেই আওয়াজে লোকজন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন। তা ছাড়া, সারা বছর মানুষের সঙ্গে থাকার কারণে আমার বাড়তি আত্মবিশ্বাস রয়েছে।’’
সিঙ্গুরে বেচারামের সঙ্গে মাস্টারমশাইয়ের ‘দ্বন্দ্ব’ সুবিদিত। মাস্টারমশাইয়ের ঘনিষ্ঠদের দাবি, সেই দ্বন্দ্বের জেরেই ৯০ বছরের দোরগোড়ায় এসে দল ছাড়তে হয়েছে মাস্টারমশাইকে। যদিও তা মানতে নারাজ বেচারামবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব ১ শতাংশ হলে সংবাদমাধ্যম সেটা ১০০ শতাংশ করেছে।’’ প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে কিছু বলতে নারাজ তৃণমূল প্রার্থী। শুধু বলছেন, ‘‘মাস্টারমশাইয়ের বাড়িতে ২৭টা ভোট আছে। মেরেকেটে উনি ৫-৬টা পাবেন।’’ রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য সিঙ্গুরের ভোটার নন। তাঁর ভোট হরিপাল বিধানসভা কেন্দ্রে, যেখানে তৃণমূলের টিকিটে ভোটে লড়ছেন বেচারামের স্ত্রী করবী মান্না।
পক্ষান্তরে, মাস্টারমশাইয়ের দাবি, ‘‘সিঙ্গুরে আমার লড়াই পরিবর্তন আনার জন্য, কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। চারবার যে দলের বিধায়ক হয়েছিলাম, সেই দলের মাত্রাছাড়া দুর্নীতি আর অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়ছি। মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন ওই দলটা এখন আত্মহননের পথে এগোচ্ছে।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘কোথাও কোথাও আমাকে ‘বুড়ো ভাম’ বলে আক্রমণ করছে ওরা। এতে ভীষণ যন্ত্রণা পাচ্ছি। বয়স অভিশাপ নয়। বয়স আশীর্বাদ।’’ বিজেপির অভিযোগ, মাস্টারমশাইয়ের বয়সকে সর্বত্র প্রচারে আনছে তৃণমূল। এতে প্রবল আপত্তি রয়েছে রবীন্দ্রনাথবাবুর। পাল্টা বলছেন, ‘‘আমি রোজ ৬০ জনের বেশি মানুষের সঙ্গে দেখা করছি। সকাল থেকে পথসভা করছি। গাড়িতে চেপে অনেক জায়গা ঘুরছি, মিছিল করছে। শয্যাযায়ী হয়ে পড়লে বয়সকে অভিশাপ মনে হয়। আমার ক্ষেত্রে বয়স আশীর্বাদ।’’ যদিও বেচারামের দাবি, ‘‘কোথাও ওঁর বয়সকে প্রচারের মাধ্যম করছি না। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি চাই উনি সুস্থ ও কর্মঠ থাকুন।’’
বেচারাম ও মাস্টারমশাই— কেউই একে অপরের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও মন্তব্য করছেন না। বেচারাম বলছেন, ‘‘ধন্যি মেয়ে চলচ্চিত্রে একটা সংলাপ আছে। উত্তমকুমার বলছেন, ‘একটা বিষাক্ত বল পেনাল্টি বক্সে পাঠিয়েছি। এ বার ঠেলা সামলা। আর কিছু বলব না।’’ আর মাস্টারমশাই বলছেন, ‘‘তৃণমূলে থাকাকালীন সিঙ্গুরে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের দুর্নীতির প্রতিবাদ করে গিয়েছি। দলনেত্রী সেই অংশের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন বলেই দল ছেড়েছি।’’
সিঙ্গুরে জয় সম্পর্কে ‘একশো শতাংশ নিশ্চিত’ বেচারাম ও মাস্টারমশাই। বেচারাম বলছেন, ‘‘আমি হাঁটা শুরু করছি সকাল সাড়ে ৭টায়। শেষ করছি সাড়ে ১০টায়। তার পরে এক ঘণ্টা খাওয়া ও বিশ্রামের পরে ফের হাঁটা শুরু করছি ১১টা নাগাদ, শেষ করছি ১টায়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত সিঙ্গুর ও হরিপালে মিছিল ও পথসভা করছি।’’ সঙ্গে জুড়ছেন, ‘‘হরিপালের বিধায়ক ছিলাম ঠিকই, তবে সিঙ্গুরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল রোজ। কারণ, জানতাম, কোনও না কোনও দিন আমাকে সিঙ্গুরে ফিরতে হবেই।’’ আর মাস্টারমশাই বলছেন, ‘‘আমার প্রচারে ঢল নেমেছে সব বয়সের মানুষের।’’ রবীন্দ্রনাথবাবুকে প্রার্থী করায় সিঙ্গুরে বিজেপির অন্দরে কার্যত গৃহদাহ শুরু হয়। এখন সেই পর্ব মনে রাখতে নারাজ মাস্টারমশাই। বলছেন, ‘‘ও সব অতীত। নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে সব মিটে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy