Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Firhad Hakim

Bengal Polls: পদত্যাগ করলেন ফিরহাদ হাকিম, বাংলায় পুর-প্রশাসক বদলের রিপোর্ট সোমবার

রাজনৈতিক মহলের ধারণা, পুরসভায় এগ্‌জিকিউটিভ অফিসার এবং পুর নিগমে পুর-কমিশনারদেরই প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হতে পারে।

ফিরহাদ হাকিম। ফাইল চিত্র।

ফিরহাদ হাকিম। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২১ ০৬:৫৮
Share: Save:

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী পুরসভা এবং পুর নিগমে প্রশাসক বদল নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিল রাজ্য সরকার। শনিবার কমিশন নির্দেশ দিয়েছে, সরকার মেয়াদ-উত্তীর্ণ যে-সব পুরসভা ও পুর নিগমে প্রাক্তন মেয়র বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রশাসক হিসেবে বসিয়েছিল, বিধানসভার ভোট চলাকালীন তাঁরা সেই পদে কাজ করতে পারবেন না।

রাজনৈতিক মহলের ধারণা, পুরসভায় এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার এবং পুর নিগমে পুর-কমিশনারদেরই প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হতে পারে। এই বিষয়ে ‘এগ্জ়িকিউটিভ অর্ডার’-ও প্রকাশ করবে রাজ্য। যদিও প্রশাসনের অন্দরের খবর, রবিবার রাত পর্যন্ত মুখ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। আজ, সোমবার সকালে সিদ্ধান্ত নিয়ে কমিশনকে রিপোর্ট দেওয়ার কথা রাজ্য সরকারের। শনিবারেই কলকাতা পুরসভার প্রশাসক-পদে ইস্তফা দিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীতে থাকা অন্য রাজনৈতিক নেতারাও পদ ছেড়েছেন ওই দিনই। ফিরহাদ বলেন, “মুখ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা শনিবারেই পদত্যাগ করেছি। এ বার নতুন প্রশাসক নিয়োগ করে এগ্জ়িকিউটিভ অর্ডার প্রকাশ করবেন মুখ্যসচিব।”

রাজ্যের ১৩৫টি পুরসভা এবং পুর নিগমের মধ্যে ১২৫টির মেয়াদ শেষ হয় গত এপ্রিল-মে নাগাদ। সেগুলিতে এত দিন নির্বাচন না-হওয়ায় মেয়র-চেয়ারম্যান-মেয়র পারিষদদেরই প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। বিধানসভা নির্বাচনের সময় সেই রাজনৈতিক ব্যক্তিরা প্রভাব খাটাতে পারেন বলে সম্প্রতি কমিশনের কাছে অভিযোগ জানায় বিজেপি। তার পরেই রাজনৈতিক নেতাদের প্রশাসকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় কমিশন।

উত্তর ২৪ পরগনার ২৭টি পুরসভার প্রায় সব ক’টিই প্রশাসক মণ্ডলীর হাতে। কমিশন সেখানে নতুন প্রশাসক বসাতে বলেছে। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত রবিবার রাতে জানান, সোমবারেই পুরসভাগুলিতে নতুন প্রশাসক বসাতে হবে, এমন কোনও নির্দেশ তিনি পাননি। গোবরডাঙার পুর-প্রশাসক সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘মানসিক ভাবে প্রস্তুত আছি। নির্দেশ এলে দায়িত্ব হস্তান্তর করে দেব।’’ জেলার আরও কয়েকটি পুরসভার প্রশাসকেরা জানান, তাঁরাও দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ পাননি।

পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়ারের প্রশাসক শঙ্কর দোলুই ঘাটালের এবং চন্দ্রকোনার প্রশাসক অরূপ ধাড়া এ বারের তৃণমূল প্রার্থী। প্রার্থী হওয়ার জন্য তাঁরা সংশ্লিষ্ট পদে আগেই ইস্তফা দিয়েছিলেন। তবে ঘাটাল পুরসভায় প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা তৃণমূল নেতা বিভাস ঘোষ, ক্ষীরপাইয়ে দুর্গাশঙ্কর পান এবং রামজীবনপুরে নির্মল চৌধুরীকে সরে যেতে হবে। মেদিনীপুরে পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন ছিলেন দীনেন রায়। তিনি খড়্গপুরের (গ্রামীণ) বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূলের প্রার্থী। দলের নির্দেশে গত মাসেই পুরসভার ওই পদে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। ঝাড়গ্রামের পুর-প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারপার্সন প্রশান্ত রায় প্রাক্তন কাউন্সিলর ও শহর তৃণমূলের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘এখনও কোনও নির্দেশিকা পাইনি। নির্দেশিকা এলে পদ্ধতি অনুযায়ী যা পদক্ষেপ করার করা হবে।’’

পূর্ব মেদিনীপুরে তমলুকের পুর-প্রশাসক দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় বলেন, ‘‘নির্দেশিকা এসেছে। কিন্তু প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।’’ কাঁথির পুর প্রশাসক সিদ্ধার্থ মাইতি জানান, তিনি কোনও নির্দেশিকা পাননি। একই কথা জানিয়েছেন এগরার পুর-প্রশাসক।

পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া পুরসভার প্রশাসক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও কালনা পুরসভার প্রশাসক দেবপ্রসাদ বাগকে এ বার প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তাঁরা পুর-প্রশাসকের পদ ছেড়েছেন। মেমারি, গুসকরা ও দাঁইহাট পুরসভাতেও প্রশাসক আছেন।

হুগলির ১৩টি পুরসভার মধ্যে শুধু চন্দননগর পুরসভা চালাচ্ছেন পুর-কমিশনার। বাকি ১২টিতে প্রশাসক পদে আছেন তৃণমূল নেতারা। তাঁরা সরে দাঁড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। উত্তরপাড়ার পুর-প্রশাসক দিলীপ যাদব এ বার ভোটে লড়ছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি আগেই পুর-প্রশাসকের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।’’

উত্তরবঙ্গে ১৭টির মধ্যে শিলিগুড়ি ও দিনহাটা ছাড়া প্রায় সব পুরসভায় প্রশাসক-পদে রয়েছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। বেশির ভাগই তৃণমূলের নেতা। ভোটে দাঁড়ানোর পর দিনহাটা পুরসভার প্রশাসক-পদ ছেড়েছেন বিধায়ক উদয়ন গুহ। কিন্তু কোচবিহার জেলার বাকি পাঁচটি পুরসভায় প্রশাসক-পদে কোনও বদল ঘটেনি। আলিপুরদুয়ার পুরসভায় এ দিনেও প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তৃণমূল নেতা মিহির দত্ত। জলপাইগুড়ির প্রশাসক পাপিয়া পাল ও মাল পুরসভার স্বপন সাহাও তা-ই।

শিলিগুড়ি পুর নিগমের প্রশাসক অশোক ভট্টাচার্য আগেই পদত্যাগ করেছেন। কালিয়াগঞ্জের পুর-প্রশাসক শচীন সিংহরায়, ডালখোলার পুর-প্রশাসক সুভাষ গোস্বামী, ইসলামপুর পুরসভার প্রশাসক কানাইয়ালাল আগরওয়াল জানান, তাঁরা কোনও নির্দেশ পাননি। গঙ্গারামপুরে পুর-প্রশাসক পদে রয়েছেন তৃণমূলের প্রশান্ত মিত্র। বালুরঘাট পুরসভার ১১ জন সদস্য নিয়ে গঠিত প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারপার্সনের পদে রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষক হরিপদ সাহা। আছেন শাসক দলের তিন নেতাও। ইংরেজবাজার পুরসভার প্রশাসক নীহাররঞ্জন ঘোষ ও পুরাতন মালদহের পুর-প্রশাসক কার্তিক ঘোষ তৃণমূলের। নীহারবাবু চাঁচলে প্রার্থীও হয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE