Advertisement
E-Paper

Bengal Polls: উজ্জ্বলার গ্যাস পড়ে, রান্না কাঠেই

টাশপুরের ডোমপুকুরের মঞ্জু জানাও জানালেন, ছেলে সঞ্জিত ঘরে উজ্জ্বলার গ্যাস এনে দিয়েছে। কিন্তু সেই গ্যাসে হাত দেন না তিনি।

দেবাঞ্জনা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২১ ০৬:৫০
উনুনই ভরসা দুরমুঠের সরস্বতী মণ্ডলের।

উনুনই ভরসা দুরমুঠের সরস্বতী মণ্ডলের। ছবি: কেশব মান্না

ঝকঝকে গ্যাস আভেনে একটা আঁচড় পর্যন্ত নেই। লাল টুকটুকে সিলিন্ডারও যেন নতুন বউ।

রান্নাঘরের মেঝেতে ছড়ানো শুকনো কাঠ। তা দিয়েই উনুন জ্বালানোর তোড়জোড় করছিলেন বছর পঁয়তাল্লিশের প্রভাতী জানা। ঘরে গ্যাস রয়েছে তো? ব্যবহার করেন না? জ্বালানির কাঠ ভাঙতে ভাঙতেই জবাব এল, ‘‘কী করে করব? একটা সিলিন্ডার শেষ হলে আবার প্রায় সাড়ে আটশো টাকা দিয়ে কিনতে হবে। আমরা গরিব মানুষ। অত টাকা পাব কোত্থেকে?’’

অথচ গরিব মানুষের জন্যই মোদী সরকারের ‘প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা’। এই প্রকল্পে এককালীন ১৬০০ টাকা দিয়ে বিপিএল পরিবারের গৃহিণীর নামে মিলবে গ্যাসের সংযোগ। আভেন, সিলিন্ডার, রেগুলেটর, পাইপ— সবই মিলবে ওই টাকায়। কেউ চাইলে গোড়ায় ১৬০০ টাকা নাও দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পরে সিলিন্ডারের দামের ভর্তুকির টাকা থেকে ধাপে ধাপে ওই টাকা কেটে নেওয়া হবে।

পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর এলাকার সায়া বেলদা গ্রামের প্রভাতী এককালীন ১৬০০ টাকা দিয়েই উজ্জ্বলার গ্যাস নিয়েছেন। কিন্তু সিলিন্ডারের দাম এক ধাক্কায় সাড়ে আটশো ছুঁইছুঁই হয়ে যাওয়ায় তিনি আর গ্যাস জ্বালছেন না। রোজ সকালে আশপাশ ঘুরে বরাবরের মতো কাঠকুটো জোগাড় করে আনছেন। তার আগুনেই চাপাচ্ছেন রান্না। পটাশপুরের ডোমপুকুরের মঞ্জু জানাও জানালেন, ছেলে সঞ্জিত ঘরে উজ্জ্বলার গ্যাস এনে দিয়েছে। কিন্তু সেই গ্যাসে হাত দেন না তিনি। মঞ্জুর কথায়, ‘‘ছেলের ক’টা টাকাই বা রোজগার! গ্যাস ফুরোলে আর কিনতে পারবে না। তাই গ্যাস বাঁচিয়ে কাঠেই রান্না করি।’’

ভোট-বঙ্গে এ বার অন্যতম ভূমিকা জ্বালানি গ্যাসের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে বিভিন্ন প্রচার সভায় বলছেন, ঘরে ঘরে দেওয়া হচ্ছে উজ্জ্বলার সংযোগ। কাঠ-কয়লার ধোঁয়ায় যাতে মা-বোন-মেয়েদের কষ্ট না হয় তাই এই প্রকল্প। তৃণমূলের পাল্টা স্লোগান— আটশো টাকার গ্যাসে ফুটছে দু’টাকার চাল! বস্তুত নারী দিবসে উত্তরবঙ্গ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার প্রচার শুরুই করেছেন মহার্ঘ গ্যাসের বিষয়টি সামনে রেখেই।

জ্বালানি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি যে দরিদ্র পরিবারগুলির হেঁশেলে জ্বলন্ত সমস্যা, তার প্রমাণ ছড়িয়ে বাংলার গাঁ-গঞ্জে। পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর, এগরা থেকে কাঁথি— ঘরে ঘরে এক ছবি। কাঁথি-৩ ব্লকের দুরমুঠ এলাকার দিনমজুর পরিবারের ঘরণী সরস্বতী মণ্ডল জানালেন, শেষ গ্যাস কিনেছিলেন গত ৩০ জুন। সেই সিলিন্ডার পড়েই আছে। রান্না করছেন কাঠে। কাঁথির দেশপ্রাণ এলাকার গ্যাস ডিলার সহস্রাংশু চক্রবর্তী মানছেন, ‘‘বেশির ভাগ গরিব পরিবারগুলোয় প্রথম বার নিখরচার সিলিন্ডার নেওয়ার পরে আর কেউ গ্যাস কিনছেন না।’’

ভোট প্রচারে তৃণমূল প্রার্থীদের মুখেও গ্যাসের কথা। পটাশপুরে ঘাসফুলের প্রার্থী উত্তম বারিক বলেন, ‘‘মোদীজির আচ্ছে দিন যে কী ভয়ঙ্কর তা গরিব মানুষ টের পাচ্ছেন।’’ এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অম্বুজাক্ষ মোহান্তি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ এড়িয়ে শুধু বলছেন, ‘‘উজ্জ্বলা যোজনায় দেশ জুড়ে বহু মহিলা উপকৃত হয়েছেন।’’

LPG Price Pradhan Mantri Ujjwala Yojana West Bengal Assembly Election 2021
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy