Advertisement
E-Paper

গ্যাস কেনার টাকা নেই, জঙ্গলই ভরসা

বাঁশের বেড়ায় মাটির প্রলেপ দিয়ে তৈরি ঘরে চার ছেলে-মেয়েকে রেখে সেই জঙ্গলেই কাঠকুটোর খোঁজে যেতে হয় সুনো ও সুশীলা মরান্ডিকে। সাইকেলে লাকড়ি বোঝাই করে দুপুরে খানিকটা বিধ্বস্ত হয়েই ঘরে ফিরলেন তাঁরা।

পার্থ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:১১
মাটির মেঝে দেখাচ্ছেন মার্কুস লাকড়া।

মাটির মেঝে দেখাচ্ছেন মার্কুস লাকড়া।

দু’দিক ঘেরা জঙ্গল। একদিকে বয়ে গিয়েছে নদী। মাঝে আদিবাসী প্রধান ছোট্ট গ্রাম, গদাধর ফরেস্ট ভিলেজ। ঝাঁ চকচকে জাতীয় সড়ক থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে এই গ্রাম। অথচ, গ্রামের রাস্তায় পিচের লেশমাত্র নেই। শুধু বালি আর পাথর। মাঝে গজিয়ে উঠেছে ঘাস। কাছের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে মাঝেমধ্যেই হাতি হানা দেয় গ্রামে। ভেঙে দেয় ঘর। তবু বাঁশের বেড়ায় মাটির প্রলেপ দিয়ে তৈরি ঘরে চার ছেলে-মেয়েকে রেখে সেই জঙ্গলেই কাঠকুটোর খোঁজে যেতে হয় সুনো ও সুশীলা মরান্ডিকে। সাইকেলে লাকড়ি বোঝাই করে দুপুরে খানিকটা বিধ্বস্ত হয়েই ঘরে ফিরলেন তাঁরা।

প্রশ্ন: বিপদ রয়েছে জেনেও জঙ্গলে লাকড়ি আনতে যান কেন?

সুনো: লাকড়ি না এলে বাড়িতে রান্না হবে না।

প্রশ্ন: উজ্জ্বলা গ্যাস পাননি?

সুনো: না। নিজের টাকাতেই গ্যাসের সংযোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন গ্যাসের যা দাম, কেনার ক্ষমতা নেই।

প্রশ্ন: কাজ কী করেন?

সুনো: দিনমজুরি। তা-ও রোজ কাজ জোটে না।

প্রশ্ন: একশো দিনের কাজ?

সুনো: পাই না।

প্রশ্ন: সরকারি ঘর পাননি?

সুনো: অনেকবার আবেদন করেছি। কিন্তু পাইনি।

প্রশ্ন: রাতে হাতি এলে কী করেন? এই ঘর তো গুড়িয়ে দিতে পারে?

সুনো: রাতে হাতি গ্রামে এলে ভরসা কুকুরের দল। ওরাই চিৎকার করে ডাকতে থাকে। ঘুম ভেঙে যায়। ঘর থেকে বেরিয়ে গ্রামের সকলে মিলে চেঁচিয়ে হাতি তাড়াতে শুরু করি।

সুনোর বাড়ি থেকে একটু এগোতেই বৃদ্ধ মার্কুস লাকড়ার বাড়ি। ঘরের তিন দিকে অর্ধেক পাকা দেওয়াল। তার পর টিনের বেড়া। সামনের দিকে অবশ্য গোটাটাই দেওয়াল। মাথায় টিনের ছাদ। কিন্তু মেঝে মাটির। সেখানেই বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে বসে রয়েছেন মার্কুস।

প্রশ্ন: সরকারি ঘর পাননি?

মার্কুস: এটাই সরকারি ঘর।

প্রশ্ন: মেঝে পাকা করেননি?

পাশের থেকে মার্কুসের ছেলে ভিক্টরের উত্তর: যেটুকু পেয়েছে, সেটাই তো অনেক।

প্রশ্ন: কেন?

ভিক্টর: বাবা আগে একবার সরকারি ঘর পেয়েছিলেন। নানা কারণে সেটা ভেঙে যায়। তার পর আবার আবেদন করেন। একদিন নেতারা এসে বাবাকে মোটরসাইকেলে করে ব্যাঙ্কে নিয়ে গেলেন। সেখানে সই করিয়ে খালি হাতে বাবাকে ফিরিয়ে দিলেন। তার পর আগের ঘরের টিন-দরজা দিয়ে তাঁরাই এই ঘর বানিয়ে দিলেন। বারবার বলা সত্ত্বেও মেঝে পাকা করেননি।

আলোচনা শুনেই এগিয়ে এলেন জোহান টোপ্পো।

প্রশ্ন: গ্রামের রাস্তার এমন হাল কেন?

জোহান: পঁচিশ বছর ধরে রাস্তা এমনই দেখছি। অনেক বাড়িতে এখনও বিদ্যুৎ নেই। আমরা এ ভাবেই রয়েছি।

প্রশ্ন: দুয়ারে সরকারে গিয়ে সমস্যার কথা বলেননি?

জোহান: সেটা কী?

প্রশ্ন: স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড রয়েছে?

জোহান: সেটাও কি জানি না।

West Bengal Assembly Election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy