Advertisement
E-Paper

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঢাকতেই কি বাম-চাল

এলাকার সাংসদ বলছেন, তৃণমূলের দলীয় অফিসে হামলা করেছে সিপিএম। আর বিধায়কের দাবি, এমন ঘটনার কথা জানেনই না। অথচ ওই হামলার ঘটনায় প্রথমে অভিযোগের আঙুল ছিল দলেরই আর একটি গোষ্ঠীর দিকে। এমন পরিস্থিতিতে রহস্য দানা বেঁধেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০২:১২

এলাকার সাংসদ বলছেন, তৃণমূলের দলীয় অফিসে হামলা করেছে সিপিএম। আর বিধায়কের দাবি, এমন ঘটনার কথা জানেনই না। অথচ ওই হামলার ঘটনায় প্রথমে অভিযোগের আঙুল ছিল দলেরই আর একটি গোষ্ঠীর দিকে। এমন পরিস্থিতিতে রহস্য দানা বেঁধেছে। প্রশ্ন উঠছে, দলনেত্রীর নির্দেশ মেনে গোষ্ঠীকোন্দল মেরামতির চেষ্টাতেই কি অভিযোগের আঙুল ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিরোধী দলের দিকে? গোষ্ঠীকোন্দল ঢাকতেই এমন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বামেরাও।

বিধানসভা ভোটের ফল বেরোনোর পরে রাজারহাট-নিউটাউনে তৃণমূলের বেশ কয়েকটি দলীয় অফিস দখলের অভিযোগ উঠেছিল দলেরই এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। অফিসগুলি সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের অনুগামীদের বলে পরিচিত। তখন এলাকার জয়ী বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত বলেছিলেন, তিনি এমন ঘটনার খবর পাননি। রবিবার কাকলিদেবী নিজেই দাবি করেছেন, সিপিএমের লোকেরাই অফিস দখল করেছিল। বিধায়ক অবশ্য এ দিনও বলেছেন, এমন ঘটনার কথা জানেন না।

কিন্তু হামলা যে হয়েছে, তা সাংসদের কথাতেই স্পষ্ট। অথচ বিধায়কের দাবি অনুযায়ী, এখনও এমন কোনও খবর পাননি তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে এলাকায় কোনও ঘটনার খবর তিন দিনের মধ্যেও বিধায়কের কাছে পৌঁছল না কেন। পাশাপাশি কেন হামলার ঘটনায় অভিযোগের অভিমুখ বদলে গেল, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।

ঘটনাচক্রে ভোটের ফলাফলের পরে নির্বাচিত বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সূত্রের দাবি, অন্তর্ঘাতের কারণে বিভিন্ন দলীর প্রার্থীর পরাজয় সম্পর্কে কঠোর মন্তব্যই শুধু করেননি, রীতিমত কড়া বার্তাও দিয়েছেন দলনেত্রী। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, হামলার অভিযোগ নিয়ে এমন বিভ্রান্তি কি সেই বার্তার পরে পাল্টানোর তাগিদেই?

অফিস দখলের ঘটনায় দলেরই এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনেছিলেন কাকলির অনুগামীরা। অভিযোগকারীদের মধ্যে ছিলেন ২ নম্বর জ্যাংড়া হাতিয়ারা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য দিলীপ ঘোষ। এ দিন তাঁর সঙ্গেও দেখা করেন সাংসদ। তবে গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে কাকলি বলেন, ‘‘সে সব আমার জানা নেই। তবে সিপিএমের হার্মাদরাই এটা ঘটিয়েছে।’’ কীসের ভিত্তিতে বামেদের উপর অভিযোগ তুললেন সাংসদ, তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

কাকলির এ দিনের বক্তব্যের পরে সিপিএম নেতা শুভজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা নিজেরাই আক্রান্ত। আজও এক কর্মীর বাড়িতে হামলা হয়েছে। সব দলীয় অফিস ভাঙচুর হচ্ছে। গোষ্ঠী কোন্দল ঢাকতে আমাদের উপরে দায় চাপানো হচ্ছে।’’

বস্তুত রাজারহাট থেকে নিউটাউনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সর্বজনবিদিত। ভোটের ফল ঘোষণার পর সেখানে বেশ কিছু জায়গায় হিংসার ঘটনায় বিরোধীদের পাশাপাশি আক্রান্ত হয়েছেন শাসক দলের কর্মীরাও। যে সব এলাকায় এ বার সদ্যনির্বাচিত বিধায়কের জয়ের ব্যবধান কমেছে, সেই জায়গাগুলিতেই গোলমালের অভিযোগ বেশি করে উঠেছে। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠছে শাসক দলের একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই।

বিধাননগর পুরনিগমের ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার উত্তর নারায়ণপুর, সরোজপল্লি, নরেন্দ্রনগর এলাকায় হিংসার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। অখিল ভারতীয় আদিবাসী পরিষদের এক কর্তা সুবল সর্দারের দাবি, ৩০-৩৫টি পরিবারের পুরুষ সদস্য এলাকাছাড়া। আদিবাসীদের একটি ক্লাব ভেঙে দখল নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। এ দিন ওই আদিবাসীদের সঙ্গে দেখা করে পুনবার্সনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কাকলিদেবী। এ ছাড়াও কয়েকটি ‘দখল’ হয়ে যাওয়া দলীয় অফিসও তাঁর উপস্থিতিতে খুলে দেওয়া হয়েছে।

যদিও ওই সব হিংসার ঘটনা সম্পর্কে সব্যসাচীবাবুর এখনও দাবি, এমন কোনও ঘটনার খবর তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তাঁর অনুগামীদের একটি অংশের দাবি, আদিবাসী পাড়ার ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনও যোগ নেই। ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে বিষয়টি ঘিরে। দলনেত্রীর বার্তার পরে এমন হয়ে থাক বা না থাক, অনেকের মতে রাজারহাট-নিউ টাউনে সিন্ডিকেটকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠী কোন্দলের শিকড় ও কারণ অনেক গভীরে। ফলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোখা যাবে কি না, প্রশ্ন রয়েছে সব মহলেই।

assembly election 2016 TMC CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy