তৃণমূলকে আর কোনও ভাবেই সইতে না পেরে বৃহত্তর জোট চেয়েছিল তারা। এখন সেই জোটের জন্য কিল খেয়েও সইতে হচ্ছে সিপিএমকে!
তৃণমূলের বিরুদ্ধে যত বেশি সংখ্যক গণতান্ত্রিক শক্তিকে এক জায়গায় আনতে হবে, এই ছিল সিপিএমের পরিকল্পনা। ভোটের দিন যত কাছে আসছে, সেই পরিকল্পনাই এখন ভার হয়ে চেপে বসছে আলিমুদ্দিনের মাথায়! কারণ, মহাযুদ্ধের সঙ্গীরা সকলেই আসন চায়। জোটের স্বার্থে সিপিএম নিজে কত আসন ছেড়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু তাতেই ভবি ভুলছে না! কিছু আসন ছেড়েও কিছু অন্তত বাঁচাতে মরিয়া বাম শরিকেরা। আবার কংগ্রেস রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছে শরিকদের। দু’দিক থেকে ঝাপটার মুখে পড়ে কূটনীতিকেই আঁকড়ে ধরেছে আলিমুদ্দিন। এক বার একে বোঝাচ্ছে, আর এক বার ওকে!
দিল্লি থেকে কংগ্রেসের দ্বিতীয় দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়েছে শুক্রবার। আগের দফার ৪৩-এর সঙ্গে এ দিনের ৪২ মিলে কংগ্রেসের মোট ৮৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা হল। প্রাথমিক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এখনই অন্তত ১৬টি আসন এমন আছে, যেখানে বাম ও কংগ্রেস— দু’তরফেরই প্রার্থী ঘোষিত! কথা আছে, তৃণমূলকে হারানোর স্বার্থে যে যেখানে শক্তিশালী, তাকে এগিয়ে দিয়ে কোনও একটা পক্ষ বসে যাবে। কিন্তু সেই রকম প্রত্যাহারের স্পষ্ট ঘোষণা যে হেতু এখনও নেই, ঈষৎ বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে সর্বত্রই।
বামেদের সংসার যে হেতু বড়, তাই টানাটানি সেখানেই বেশি। কংগ্রেসের এ দিনের তালিকায় যেমন ফরওয়ার্ড ব্লকের জেতা হরিশ্চন্দ্রপুর এবং আরএসপি-র জেতা মালতীপুর আসনেও প্রার্থী ঘোষণা হয়েছে। মুর্শিদাবাদে এর আগে যে সব আসনে আরএসপি-সহ বামফ্রন্ট প্রার্থী ঘোষণা করেছিল, সেখানেও প্রার্থী দিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। স্বভাবতই সঙ্কটে শরিকেরা। ফ ব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য আক্ষেপের সুরেই বলছেন, ‘‘আমরা বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে ৭টি আসন
ছেড়ে দিয়েছি আমাদের কোটা থেকে। এখন কংগ্রেস বীরভূমেও আমাদের আসনে প্রার্থী দিয়ে দিচ্ছে। এই ভাবে চললে দল ধরে রাখতে আমাদেরও কিছু আসনে পাল্টা প্রার্থী দিতে হবে বাধ্য হয়ে!’’ আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যেরও বক্তব্য, ‘‘আমাদের আর পিছনোর জায়গা নেই। এর পরে যা হবে, হবে!’’ তবে সিপিএমের সঙ্গে আরও আলোচনা করতে তাঁদের কারওরই আপত্তি নেই।
কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকায় এ দিন আব্দুল মান্নান, শঙ্কর সিংহ, অরুণাভ ঘোষের মতো বর্ষীয়ান নেতাদের নাম আছে। কিন্তু এখনও চৌরঙ্গি, শ্রীরামপুর, উত্তর হাওড়া বা নোয়াপাড়ার মতো আসনে প্রার্থী তালিকা বাকি। চৌরঙ্গিতে যেমন সোমেন মিত্রকে প্রার্থী করতে চায় দলের একাংশ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর প্রিয়পাত্র সন্তোষ পাঠকও সেখানে দৌড়ে আছেন। এই অবস্থায় কোনও নামই এ দিন ঘোষণা হয়নি। অধীর বলেছেন, ‘‘সোমেন মিত্র নিজে দাঁড়াবেন, নাকি তাঁর স্ত্রী প্রার্থী হবেন, এখনও স্পষ্ট নয়।’’ দিল্লিতে সন্তোষ এ দিনই অধীরের সঙ্গে দেখা করেছেন।
বাম শরিকদের নিয়ে সঙ্কটের পাশাপাশিই তৈরি হচ্ছে বাইরের বন্ধুদের নিয়েও টানাপড়েন। বামেরা যে কাকদ্বীপ আসন পিডিএস নেতা সমীর পূততুণ্ডের জন্য ছেড়েছিল, সেখানে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে কংগ্রেস। সমীরবাবু বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বাসভঙ্গ হলে পিডিএস অন্তত ১৫টি আসনে নিজেরাই প্রার্থী দেবে। একই ভাবে আরজেডি-র জন্য রাখা জোড়াসাঁকোয় কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে, ভাটপাড়া আসনটি আবার সিপিএমের স্থানীয় কর্মীরা লড়তে চাইছেন। এমতাবস্থায় পটনায় লালুপ্রসাদ যাদবের সঙ্গে আলোচনা করে আরজেডি-র রাজ্য সভাপতি বিন্দাপ্রসাদ রাই জানাচ্ছেন, কংগ্রেস বা সিপিএম আসন না ছাড়লে অন্তত ৮-১০টি আসনে লড়তে পারে। হিঙ্গলগঞ্জে সমস্যা মেটাতে সিপিআইয়ের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্য আজ, শনিবার সেখানে দু’দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে নিয়ে বসবেন।
কেন এমন দড়ি টানাটানি? অধীর বলছেন, ‘‘বড় জোর ২-৪% আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হবে। সেটাও কমানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’ শরিকেরা আবার দুষছে কংগ্রেসকেই। সতর্ক বিমানবাবু বলছেন, ‘‘যে পথে চলছি, আগে কোনও দিন সে পথে চলিনি। আরও আলোচনা করতে হবে।’’ সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘নারদ-কাণ্ডের বাজারে অনেকেই মনে করছেন, তাঁরা জিতবেন! তাই হয়তো এমন হচ্ছে। আমরা সব রকম চেষ্টা করছি, বামফ্রন্টকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে।’’
চেষ্টা তো করতেই হবে! জোটের পিঠে এখন চেপে বসেছে আলিমুদ্দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy