Advertisement
E-Paper

নজরে থাকছে সেই ফুটিসাঁকো

আগে সতর্ক করেছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী। এ বার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করতে এসে ‘শ্যাডো জোন’-এ নজরদারি বাড়ানোর কথা বলে গেলেন বিশেষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নরেন্দ্র চৌহানও। যা থেকে ফের পরিষ্কার হল, ফুটিসাঁকোর মতো এলাকাগুলি ভোটের সময়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে কতটা মাথাব্যথার কারণ হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০৩:১৪
সার্কিট হাউসে চলছে বৈঠক। নিজস্ব চিত্র।

সার্কিট হাউসে চলছে বৈঠক। নিজস্ব চিত্র।

আগে সতর্ক করেছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী। এ বার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করতে এসে ‘শ্যাডো জোন’-এ নজরদারি বাড়ানোর কথা বলে গেলেন বিশেষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নরেন্দ্র চৌহানও। যা থেকে ফের পরিষ্কার হল, ফুটিসাঁকোর মতো এলাকাগুলি ভোটের সময়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে কতটা মাথাব্যথার কারণ হয়েছে।

শনিবার গভীর রাতে বর্ধমানের সার্কিট হাউসে পৌঁছন নরেন্দ্র চৌহান। রবিবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ তাঁর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের দল সর্বদল বৈঠকে যোগ দেয়। ছিলেন বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন, নতুন পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা, আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সিদ্ধিনাথ গুপ্ত। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা সেই বৈঠকে বিরোধী দলের নেতারা এক যোগে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক দলের কাছে গত লোকসভা ভোটের ‘অভিজ্ঞতা’র কথা তুলে ধরেন। তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারেনি সে বার। তার ফলে পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্যে শাসক দল ভোট লুঠ করেছিল, ভয় দেখিয়ে ভোটারদের বুথ পর্যন্ত যেতে দেয়নি দুষ্কৃতীরা। একই সঙ্গে তাঁদের অভিযোগ, ২০১৩ সালে বর্ধমান পুরভোট ও পঞ্চায়েতে ভোটেও একই রকম সন্ত্রাস হয়েছিল।

সর্বদল বৈঠকে ওঠা নানা অভিযোগ নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনের বিশেষ দল। সেখানে নরেন্দ্র চৌহান সীমানা এলাকা ও ‘শ্যাডো জোন’ নিয়ে বিশদ জানতে চান। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, গোটা জেলায় ৯৩টি জায়গায় নাকাবন্দি চলছে। এ ছাড়া টহলদারি ও তল্লাশিও চলছে। বিশেষ পর্যবেক্ষক এ দিনও ফুটিসাঁকোর কথা তোলেন প্রশাসনিক বৈঠকে।

বীরভূম, বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদ জেলার সংযগোস্থলে ফুটিসাঁকো একটি চার রাস্তার মোড়। যার পূর্ব দিকে কেতুগ্রাম ও কাটোয়া, পশ্চিমে নানুর ও কীর্ণাহার। বাদশাহী রোড ধরে ওই মোড়ের উত্তরে গেলে মুর্শিদাবাদের পাঁচথুপি ও দক্ষিণে মঙ্গলকোট হয়ে বর্ধমান। ভৌগলিক কারণে এই এলাকা দিয়ে দুষ্কৃতীরা অনায়াসে অল্প সময়ের মধ্যে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গা ঢাকা দিতে পারে। সে জন্য ফুটিসাঁকো ও সেখান থেকে ছ’কিলোমিটার দূরের মারুট মোড় দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে রয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। ভোট ঘোষণার পরে ফুটিসাঁকো মোড়ে ছ’টি সিসি ক্যামেরাও বসিয়েছে জেলা প্রশাসন। মারুট মোড়েও প্রয়োজনে ক্যামেরা বসানো হবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। এ দিন বিশেষ পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠকের পরে বিকেলে পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা ফুটিসাঁকো ঘুরে দেখেন।

বৈঠকে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা কত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এখনও কত জন গ্রেফতার হয়নি, সে ব্যাপারে বর্ধমান জেলা প্রশাসনের রিপোর্ট চান হিমাচল প্রদেশের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক নরেন্দ্র চৌহান। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, প্রায় এগারোশো এমন অভিযুক্তকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। এর পরেই তিনি জানতে চান ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে পারে এবং দাগি দুষ্কৃতকারী এমন কত জনকে ১০৭ ও ১১০ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে? জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, ভোট ঘোষণার পর থেকে ১০৭ ধারা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৬০০ জনকে এবং ১২ জনের ক্ষেত্রে ১১০ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। যা শুনে বৈঠকেই নরেন্দ্র চৌহান অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর। এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর নির্দেশ দেন তিনি।

এ দিনের বৈঠকে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দার রেজ্জাক মণ্ডল, জেলা কমিটির সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়, কংগ্রেসের কাশীনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, বিজেপির দেবীপ্রসাদ মল্লিক, তৃণমূলের উজ্জ্বল প্রামাণিক ও উত্তম সেনগুপ্ত হাজির ছিলেন। সিপিএম অভিযোগ করে, আসানসোল শিল্পাঞ্চলে কয়লা মাফিয়াদের সঙ্গে শাসক দলের নেতাদের যোগাযোগ রয়েছে। মাফিয়াদের টাকা বিধানসভা ভোটে কাজে লাগানো হচ্ছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক কুলটির পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ করেন। যদিও আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন, ‘‘এমন অভিযোগ সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই।’’ এ ছাড়াও সিপিএম নেতৃত্ব এ দিন কমিশনের কাছে দাবি করেন, বর্ধমান লাগোয়া ঝাড়খণ্ড সীমানা ‘সিল’ করা প্রয়োজন। না হলে ভোটের সময়ে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা ঢুকে গোলমাল পাকাতে পারে।

তৃণমূল নেতারা অবশ্য বিরোধীদের সব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বৈঠক শেষে নরেন্দ্র চৌহান বলেন, “জেলা প্রশাসনের কাজে আমরা সন্তুষ্ট। সর্বদল বৈঠকে যে সব অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”

special observer election commission Assembly Election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy