ভোটের ময়দানে লকেট এবং কিরীটীর সাজে চিরঞ্জিত
কাট ওয়ান: নারী চরিত্রটি প্রচারে গিয়ে বলছেন, ‘‘এই রাজ্যে মহিলাদের উপযুক্ত মর্যাদা দেওয়া হয় না, অথচ মুখ্যমন্ত্রী এক জন মহিলা, তাঁর শাসনে এমনটা দুর্ভাগ্যজনক।’’ পুরুষ চরিত্রটির সংলাপ একদম আলাদা, ‘‘বিরোধীদের অপপ্রচারে কান দেবেন না। কাজ দেখুন কাজ। আমাদের নেত্রী, আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে দেখুন। তার পর বিচার করুন।’’
কাট টু: ইএম বাইপাসের কাছে কালিকাপুরে বাড়ির একতলার বৈঠকখানা। দু’জন অতিথি লুচি আর আলুর ছেঁচকি আহারে ব্যস্ত। নির্বাচনী প্রচারে শাসক দলের হয়ে গলা ফাটাচ্ছিলেন যিনি, এখন তাঁর ঠোঁটে পাইপ। হাতে কফি মগ। ঝটিতি ঘরে ঢুকলেন সেই মহিলা, যিনি কিনা শাসক দলকে তুলোধোনা করছিলেন।
‘তোমাদের কি আরও লুচি দেব? তোমাকেও এখন জলখাবার দিই?’
‘এই সব লুচি আর আলু ছেঁচকি তোমার দেওরদের খাওয়াও। আমাকে একটা স্যান্ডউইচ করে দাও।’
‘এক দিনও কি বাঙালি খাবার খেতে নেই?’
‘কে তোমাকে বলেছে যে, কেবল সাহেবরাই স্যান্ডউইচ খায়!’
গৃহকর্ত্রী জবাব দিলেন না। মুখ বেঁকিয়ে চলে গেলেন।
নির্বাচনী প্রচারটা বাস্তব। আর লুচি বনাম স্যান্ডউইচ নিয়ে ছদ্ম ঝগড়াটা ছবির শ্যুটিং।
বিধানসভা ভোটের উত্তপ্ত আবহে দু’টি বিবদমান রাজনৈতিক দলের প্রার্থী যে দু’জন, তাঁরাই আবার শ্যুটিং ফ্লোরে মিঠে খুনসুটির দম্পতি হবেন আগামী ২৪ ও ২৫ মার্চ, পর পর দু’দিন। চিরঞ্জিত ও লকেট চট্টোপাধ্যায়। টলিউডের দুই তারকা। চিরঞ্জিত বারাসত বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী আর বিজেপি নেত্রী লকেট প্রার্থী হয়েছেন বীরভূম জেলার ময়ূরেশ্বর কেন্দ্র থেকে। তারই মধ্যে কৌস্তুভ রায়ের প্রযোজনায় অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ‘কিরীটী রায়’-তে চিরঞ্জিত নামভূমিকায়। আর কিরীটীর স্ত্রী কৃষ্ণার চরিত্রে লকেট। নীহাররঞ্জন গুপ্তের কাহিনি ‘সেতারের সুর’ অবলম্বনে এই গোয়েন্দা কাহিনির শ্যুটিং শুরু হয়েছে গত ৪ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু কিরীটী ও তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণার দৃশ্যায়ন হবে এই প্রথম, গরমাগরম ভোটের বাজারে।
অসুবিধে বা অস্বস্তি হবে না?
‘‘অসুবিধের কোনও জায়গাই নেই! এ রকম কিছু মাথাতেই আসছে না,’’ বলছেন চিরঞ্জিত। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কাছে রাজনীতি মানে উদার নীতি। সেখানে এ সবের জায়গা কোথায়?’’ চিরঞ্জিতেরই পরিচালনায় ‘মানুষ-অমানুষ’ ছবিতে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছিল লকেটের। তাঁরও বক্তব্য, ‘‘রাজনীতি আর পেশার ক্ষেত্র সম্পূর্ণ আলাদা। বর্ষীয়ান অভিনেতা বা আমার প্রথম ছবির পরিচালক চিরঞ্জিতদার সঙ্গে কাজ করতে অস্বস্তির কোনও কারণ নেই।’’
কিন্তু লকেট ময়ূরেশ্বরের বদলে বারাসতে বিজেপির প্রার্থী হলে কী হতো?
চিরঞ্জিতের বক্তব্য, ‘‘তাতেও অসুবিধে হতো না। রাজনীতি আর সিনেমার জগৎ দু’টো দু’রকম। তবে সে ক্ষেত্রে হয়তো বিরোধী প্রার্থী হিসেবে ভোটের প্রচারে লকেটের নামটা এক-আধ বার উল্লেখ করতে হতো এটুকুই যা।’’ লকেটও মনে করেন, ‘‘দু’জনে এক কেন্দ্রে ভোটে লড়লেও শ্যুটিং ফ্লোরে তার প্রভাব পড়ত না। কোটি কোটি টাকা খরচ করে একটা সিনেমা তৈরি করেন প্রযোজক। রাজনীতির জন্য সেটা নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।’’
ময়ূরেশ্বরে ভোট ১৭ এপ্রিল। ২৫ এপ্রিল বারাসতে ভোট। চিরঞ্জিত জানাচ্ছেন, নিজের কেন্দ্রে ভোট মেটার আগে অন্য কোনও কেন্দ্রে তিনি প্রচারে যেতে পারবেন না। আর লকেটের বক্তব্য, ‘‘ময়ূরেশ্বরে ভোট হয়ে যাওয়ার পর দল যদি চায়, তা হলে বারাসতেও যাব। তবে চিরঞ্জিতদাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করার প্রশ্ন নেই।’’
কিরীটী-কৃষ্ণার প্রথম শ্যুটিং ২৪ মার্চ সকাল ১০টায়। শ্যুটিংয়ের অবসরে ভোট নিয়ে কথা বলবেন না? চিরঞ্জিত বলছেন, ‘‘আমি নিজে তুলব না। লকেট কথা তুললে তখন বলা যাবে।’’ আর লকেটের কথায়, ‘‘প্রশ্নই নেই রাজনীতির প্রসঙ্গ তোলার।’’
পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় যে কারণে বলতে পারছেন, ‘‘লকেট প্রার্থী হচ্ছে বলে ঘোষণার পরেও আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম। কারণ আমি জানি, চিরঞ্জিত ও লকেট যতটা রাজনীতির জগতের, তার চেয়ে অনেক বেশি অভিনয় জগতের প্রতিনিধি।’’
তৃণমূল ও বিজেপির দুই তারকা প্রার্থীকে মিলিয়ে দিচ্ছে ‘সেতারের সুর’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy