Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
এসেছ প্রেম এসেছ আজ....

এ ফাগুনে আগুনে মিলন

লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধুমাত্র আনন্দবাজার ওয়েবসাইটের জন্য।আজ চোদ্দোই ফেব্রুয়ারি। পয়লা ফাল্গুন। ফাল্গুনে আর ফেব্রুয়ারির আগুনে এত ভাব যে দুজনে গুটি গুটি পায়ে মন বুকে স্টেটাস দিয়েছে, আজ প্রেমের দিন। নেটের দৌলতে চট করে ঘেঁটে নেওয়ার যে সোনার সুযোগ আমাদের হয়েছে, তার থেকে জানলাম, চসার কবিতা লেখার আগে ভ্যালেন্টাইনের গোটা ব্যাপারটাই ছিল রোমান, ক্রিশ্চান, যুদ্ধ ইত্যাদির গল্প। প্রেমের ছিটেফোঁটাও সেখানে ছিল না। লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধুমাত্র আনন্দবাজার ওয়েবসাইটের জন্য।

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৭:৫৬
Share: Save:

আজ চোদ্দোই ফেব্রুয়ারি। পয়লা ফাল্গুন। ফাল্গুনে আর ফেব্রুয়ারির আগুনে এত ভাব যে দুজনে গুটি গুটি পায়ে মন বুকে স্টেটাস দিয়েছে, আজ প্রেমের দিন।

নেটের দৌলতে চট করে ঘেঁটে নেওয়ার যে সোনার সুযোগ আমাদের হয়েছে, তার থেকে জানলাম, চসার কবিতা লেখার আগে ভ্যালেন্টাইনের গোটা ব্যাপারটাই ছিল রোমান, ক্রিশ্চান, যুদ্ধ ইত্যাদির গল্প। প্রেমের ছিটেফোঁটাও সেখানে ছিল না। চসার নাকি লেখেন, ভ্যালেন্টাইন দিবসে, পাখিরা সঙ্গী খুঁজে নেয়। ব্যাস! আর পায় কে! সব কপোত-কপোতী ১৪ ফেব্রুয়ারি ধরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। ব্রিটিশ পক্ষী বিশারদেরা নাকি আপত্তি করেছিলেন যে ওই সময়টা ইংল্যান্ডের পাখিদের মেটিং সিজন নয়, চসার সম্ভবত ২রা মে নাগাদ আর একটা কী ভ্যালেন্টাইন’স ডে নিয়ে লিখেছেন। কিন্তু তত ক্ষণে তির বেরিয়ে গিয়েছে।

আমেরিকানরা তো নাকি গল্পটাকে আর একটু জমানোর জন্যে জুড়ে দিয়েছে যে কোতল হওয়ার আগের রাতে ভ্যালেন্টাইন জেলের সুপারের অন্ধ মেয়েকে ভ্যালেন্টাইন কার্ড দিয়েছিলেন, তাতে সই ছিল, তোমার ভ্যালেন্টাইন। বোকারা বা বেশি চালাকেরা নিশ্চয় ভাবছেন, হা হা, অন্ধ মেয়ে চিঠি পড়বে কী করে? সরি ভাই, ও সব সহজ ফাঁকফোকর বাজারের গল্পে থাকে না। চিঠি দেওয়ার আগে ভ্যালেন্টাইন মিরাকল করে কন্যের চোখটি সারিয়ে দিয়েছিলেন, নইলে আর সন্ত হলেন কী করে!

তা এই যে একটা নতুন প্রেমের বাজার তৈরি হয়েছে, হাজার হাজার কার্ড, ঘড়ি থেকে হিরে বিক্রি হচ্ছে, মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডাররা এসএমএস থেকে দু'পয়সা তুলছে, টেলিভিশনে এমন একটা ভাব যে ভ্যালেন্টাইন’স ডে-তে দেশে একেবারে হোলির মতো আমোদ হচ্ছে, তাতে ক্ষতিটা কী?


শুধু দু’জনে.....

প্রেমের দেখা পাবেন বলে আর বিয়েই করে উঠতে পারলেন না সুদীপ্ত ভৌমিক। ভ্যালেন্টাইন ডে নিয়ে জানতে চাওয়ায় বললেন, “আমরা পুরনো দিনের মানুষ, এই বাজারের আহ্লাদ যে একটা জীবনসঙ্গী নির্বাচনের প্রসেস, মানে কোনও গাড়ি বেশি দিন টিকবে আর কত ইএমআই পড়বে, আর তার আনুষঙ্গিক এই সব আচার-অনুষ্ঠান, এইগুলোকে আর যা-ই হোক প্রেম বলবেন না। ভাবছেন, হিংসে থেকে বলছি, তা নয়।”

সুদীপ্তবাবু সেই ‘আমাদের সময় সব ভাল ছিল আজ নেই’ মার্কা মন্তব্য জুড়লেও ব্রিটনি স্পিয়ার কিন্তু এই প্রেমের দিনে অঙ্গীকার করেছেন ‘আরও প্রেমের’! ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের জন্য তিনি নিজের সই করা একশোটা টি শার্ট বিলি করে ভালবাসা ছড়িয়ে দেবেন। প্রেম যেন বিশ্বময়। ফেসবুক থেকে ট্যুইটারের উঠোন যেমন। সেখানে ফুরফুরে বাসন্তী হাওয়া।

যাই হোক, এই রকম বিভিন্ন ভাবে খবর সংগ্রহ করে একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি, প্রেমের ধারণায় একটা আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে। আগের জেনারেশনে অনেকের কাছে প্রেম মানে ছিল মনে মনে মিল, সেই মিলটা নাকি ম্যাজিক ইত্যাদি। যার ফলে বহু ছেলেমেয়ে বিশেষ করে মেয়েরা, বাপের বাড়ি ত্যাগ করে বেরিয়ে গিয়েছিল। তার পর তারা দেখেছে, প্রেম বেশি দিন টেকে না। কলেজ ক্যামপাসে, কফি হাউসে যে ছেলেকে বন্ধু মনে হয়, পরে দেখা যায় সে যদি সব ক্ষেত্রে বর্বর না-ও হয়, বর তো হয়ই। বিয়ের পর সে নাটক করে, বৌ রান্না, সে পাড়ায় আড্ডা মেরে রাত দশটায় ফেরে। পাখি যখন খাঁচায়, তখন বাঁচাটা বাইরে সেরে আসে, মেয়েটি দাঁড়ে বসে ছোলা খায়, শ্বশুরের জ্বর মাপে। অনেক ক্ষেত্রে আবার মেয়েটিকেও চাকরি করে এই স্বামীটিকে পুষতে হয়, তার পরেও শুনতে হয় অনেক কথা, দেখতে হয়, নাটকের দলের নতুন মেয়েটিকে তার সেই মানুষটির পাশে কত উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। জীবনের ড্রিম আর মুখে মাখার কৌটো কেমন খালি পড়ে আছে তার।

এই গল্পটার দু'দিকে এগোতে পারত। এক হতে পারত যে মেয়েটি নিজের ওপরে বিশ্বাস রেখে নিজের জীবন খুঁজে নিয়ে এগোবে। সেটা হয়নি। তার নানা কারণ, বাড়িতে বাড়িতে পিছু টানা বাপ-মা, অফিসে অফিসে ব্লাউজ সন্ধানী বস, পাড়ায় পাড়ায় কেচ্ছাশিকারি বাড়িওয়ালা আর পড়শি থাকলে সেই গল্পটা টেনে চলা বড় কঠিন আর ক্লান্তিকর। কেউ জানেও না, তার পরেও কোনও ঠিকঠাক পুরুষ মিলবে কি না। (লেসবিয়ানদের বলছি, আপনাদের গল্পটা আরও কঠিন, আপনাদের ভ্যালেন্টাইনের শুভ কামনা জানাই)। বা ঠিকঠাক পুরুষ বলে কিছু হয় কি না আদৌ।

তাই মেয়েরা অন্য গল্পটায় ঢুকে পড়েছে। এমন পুরুষ হোক, যাকে নিয়ে সামাজিক সূচকের অশান্তিগুলো কম হবে। মা জ্বালাবে না, আত্মীয়স্বজন বলবে, ‘বাবা! সুরঞ্জন, টিসিএস বা কগনিজেন্ট, হবে না কেন, আমাদের রিমি কী কম? ইত্যাদি। সুখের চেয়ে স্বস্তি ভাল। মস্তি আর দোস্তি বোধ হয় সত্যিই হয় না! এই জীবনে। ভ্যালেন্টাইন তোমাদের ভাল রাখুন!

—ফাইল চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

valentine day special issue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE