Advertisement
E-Paper

কুস্তিগির ‘মেয়ের’ বিয়েতে তত্ত্ব সাজিয়ে আনলেন ‘বাবা’ আমির খান

যে গলিতে অন্যান্য দিন রিকশাও ঢোকে না, সেখানেই কয়েকশো এসইউভি আর গোটা কয়েক সর্বভারতীয় নিউজ চ্যানেলের ওবি ভ্যানের ভিড়!

সায়ন আচার্য

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৫২
গীতার সঙ্গে আমির খান।

গীতার সঙ্গে আমির খান।

যে গলিতে অন্যান্য দিন রিকশাও ঢোকে না, সেখানেই কয়েকশো এসইউভি আর গোটা কয়েক সর্বভারতীয় নিউজ চ্যানেলের ওবি ভ্যানের ভিড়!

হরিয়ানার চরকি দাদরি।

আশপাশের বাড়িগুলোর ছাদে আর দাঁড়ানোর জায়গা নেই। গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন শুধু একটিবার ‘তাঁকে’ দেখার জন্য। আমির খান! ছোট্ট বাড়িটার সামনে জড়ো হওয়া উৎসাহী জনতাকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন পুলিশের বড়কর্তা থেকে স্থানীয় অফিসার। বারবার অনুরোধ করছেন, মূল ফটক থেকে সরে দাঁড়ানোর। কিন্তু জনতা শুনলে তো!

রবিবার দুপুরে হরিয়ানার বলালি গ্রামের ওই ছোট্ট বাড়িটার সামনে দাঁড়ালে বোঝা মুশকিল, এটা আদৌ কমনওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী কুস্তিগির গীতা ফোগতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক-স্তরের কুস্তিগির পবনের বিয়ের অনুষ্ঠান, নাকি আমিরের কোনও সিনেমার সেট! দিল্লির মহিলা সাংবাদিক হোন কিংবা স্থানীয় স্কুল পড়ুয়া, সবাই যে আমির-কে নিয়েই ব্যস্ত। দুপুর দুটো নাগাদ সাদা কুর্তা-পায়জামা আর লাল পাগড়ি পরে আমির যখন ফোগত বাড়িতে এলেন, চতুর্দিকে চিৎকার, ‘‘উই লাভ ইউ আমির!’’

যা দেখে এক পুলিশ কর্মী রসিকতা করে বলেই ফেললেন,‘‘এত দিন ডিউটিতে আছি, কিন্তু এ রকম কোনও বিয়েবাড়ি আগে দেখিনি।’’

বর-কনে।ছবি: সায়ন আচার্য

সত্যিই তো। একে তিনি ‘কুস্তির দ্রোণাচার্য’ মহাবীর সিংহ ফোগতের মেয়ে, তার ওপর নিজে দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসের সোনাজয়ী, সেই তাঁর বিয়েতেই কিনা মুখ্য আকর্ষণ আমির! প্রশ্নটা শুনে গীতার মুখে হাসি। বললেন, ‘‘আমিরজি তো আমার বাপুজিই। ওঁর মতো মানুষ না থাকলে তো অনেক কিছুই করা হতো না।’’ আসলে, গত কয়েক মাসে যে ফোগত পরিবারের ঘরের লোক-ই হয়ে গিয়েছেন আমির। বছরের গোড়ায় যখন মহাবীর ও তাঁর মেয়ে গীতা-ববিতার কুস্তি জীবন নিয়ে ‘দঙ্গল’ ছবিটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন, তখনও আমির জানতেন না, এই ভাবে গীতা-ববিতার ‘বাপু’ হয়ে উঠবেন। এবং, সেই ‘বড় মেয়ের’ বিয়েতে এসে আমির নিজেও যেন কিছুটা নস্ট্যালজিক। ‘‘গীতার মতো বড় মেয়ের জন্যই তো দঙ্গল করা। ওর বিয়েতে এটাই আমার উপহার,’’ মৃদু হেসে বলছিলেন আমির। শুধু আমির একা নন। দুপুরের ঘরোয়া অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ‘দঙ্গল’-এর দুই অভিনেত্রী সাক্ষী তনওয়ার, সানিয়া মলহোত্র এবং পরিচালক নীতিশ তিওয়ারিও।

স্ত্রী কিরণ ও ছেলে আজাদের আসার কথা থাকলেও তাদের দেখা যায়নি। তবে, এখানে আসার আগে গীতার বিয়ের লেহেঙ্গাও নিয়ে এসেছিলেন আমির, যদিও গীতা শেষ অবধি সেটা পরেননি। ‘‘আসলে, নিয়ম অনুযায়ী লেহেঙ্গাটা দেয় মামা। সুতরাং, মামার দেওয়া লেহেঙ্গাটাই পড়বে গীতা,’’ মুচকি হেসে আনন্দবাজার-কে বলছিলেন আমির। আর তাঁর দেওয়া লেহেঙ্গাটা? ‘‘ওটা তো মেয়েকে বাবার গিফট,’’ বলেই হাসলেন। তবে শুধু লেহেঙ্গা নয়, কুস্তিগির ‘মেয়ে’ ও ‘জামাই’য়ের জন্য নিজের হাতে ‘শগুন’ (বিয়ের তত্ত্ব) সাজিয়ে এনেছিলেন আমির। প্রশ্ন করতে উত্তরও দিলেন এক মুহূর্তে, ‘‘আরে ভাই, শ্বশুর বলে কথা!’’

আমির যখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন, পাশে দাঁড়িয়ে গীতার বাস্তবের ‘বাপু’ মহাবীরের ঠোঁটের কোনেও সামান্য হাসি। ‘‘আমিরজি গীতাকে মেয়ের মতোই ভালবাসেন। ওঁর মতো মানুষ আমাদের এত সম্মান দেন, ভাবা যায় না,’’ মাথায় গোলাপি পাগড়ি বাঁধতে বাঁধতে বলছিলেন মহাবীর।

অবশ্য শুধু আমির নন। সন্ধ্যায় চরকি দাদরির এক রিসর্টে জমকালো অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সাক্ষী মালিক, সুশীল কুমারের মতো অলিম্পিয়ানরাও। অতিথিদের ভিড়ে ভিওয়ানি রোডে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল যান চলাচল। একে দেশ জুড়ে অর্থ সঙ্কট, তার মধ্যে এত জাঁক-জমকের বিয়ে। প্রশ্ন উঠলেও ফোগত পরিবার অবশ্য এ ক্ষেত্রে পাশে পেয়েছে আমিরকে। তিনি নিজে সাহায্য করেছেন মহাবীরকে। ‘‘আমার সব টাকাই তো ব্যাঙ্কে থাকে। আর সব কিছুই তো পেমেন্ট করি চেকে। তাহলে আর আমাদের সমস্যা কোথায়?’’ ববিতার সঙ্গে গল্প করার ফাঁকে বলছিলেন আমির। কথা বলতেই বলতেই এগিয়ে গেলেন গীতার দিকে। কাছে টেনে নিলেন। মুচকি হেসে বললেন, ‘‘জিতে রহো মেরি বেটি। কোই কুছ করেগা তো মুঝে বতানা!’’

এই না হলে সুপারস্টার বাপু!

Aamir khan Geeta Phogat Dangal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy