ফেলুদার জন্যও তাঁর ডাক পড়ে। ব্যোমকেশের জন্যও। শহুরে ঘরানার ছবি মানেই আবির চট্টোপাধ্যায়। খানিকটা তফাতে পরমব্রত, যিশু, ঋত্বিকরা রয়েছেন। আবির যে বিরাট কোনও হিট দিয়েছেন এমন নয়। স্রেফ তাঁর ক্যারিশমাতে ছবি চলে তাও নয়। ব্যোমকেশ ফ্রাঞ্চাইজির ছবি ছাড়া বড় হিটও চোখে পড়বে না। তা সত্ত্বেও তাঁকে ঘিরে পরিচালক-প্রযোজকদের হইচই।
আবির বেফাঁস মন্তব্য করার বান্দা নন। রক্ষণ সামলে বললেন, ‘‘আমি ছাড়া বাকিরাও কিন্তু সমানতালে ছবি করে যাচ্ছে।’’ ইন্ডাস্ট্রিতে হিরো নেই বলে নাকি অভিনয়ের গুণে? চাহিদার পিছনের কারণটা কী? ‘‘এটা পরিচালকরাই বলতে পারবেন। নতুন মুখ এলে তো ভালই। প্রতিযোগিতা থাকা দরকার,’’ বাঁধা গতের জবাব তাঁর। তা বলে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় আর পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের জুটিটাও ভেঙে দিলেন? ‘‘কৌশিকদা পরমকে যথেষ্ট ভালবাসেন। ‘বিসজর্ন’-এর জন্য ওঁর মনে হয়েছে আমাকে ভাল মানাবে তাই নিয়েছেন,’’ বললেন আবির।
তাঁকে নিয়ে যে চর্চাটা সবচেয়ে বেশি সেটা হল, তিনি অত্যন্ত সাবধানী এবং আঁচ বাঁচিয়ে চলা এক ব্যক্তি। এই বক্তব্য মেনে নিয়েই বললেন, ‘‘জীবনে অশান্তির শেষ নেই। তার উপর জোর করে ঝামেলা ডেকে আনার কি কোনও প্রয়োজন আছে?’’
কিন্তু পেশাগত, ব্যক্তিগত দুই জীবনই তো দারুণ চলছে বলে দাবি করেন তিনি। তা হলে অশান্তি কীসের? ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁকে নিয়ে যে প্রেমের চর্চা চলে সেটার? ‘‘অশান্তির কথাটা ঠিক সেভাবে বলিনি। সাবধানে না চললেই তো অশান্তির সম্ভাবনা।’’ এবারেও আঁচ বাঁচানো জবাব।
বলা হয়, অভিনেতাদের দ্বৈতসত্তা থাকে। পরদার বাইরেও তাঁরা সারাক্ষণ অভিনয় করে চলেন। অনেক সময় ব্যক্তিগত পরিসরেও। এটাও মেনে নিলেন। ‘‘আমি বরং বলব ডবল নয় অভিনেতাদের মাল্টিপল জীবন থাকে। বাবা-স্বামী-বন্ধু-সহকর্মী হিসেবে আলাদা-আলাদা। মিডিয়ার সামনে তো একেবারেই আলাদা (জোর হাসি)! কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব ছাড়া আর কারও সামনে অকপট হই না।’’
আবিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, যাঁর সঙ্গে তিনি কেরিয়ারের শুরুর দিকে কাজ করেছেন তেমন একজনের মতে, ‘‘অভিনেতা হিসেবে ও যত ক্ষুরধার হয়েছে, ব্যক্তি হিসেবে ততটাই বদলে গিয়েছে। এখন অনেক বেশি ক্যালকুলেটিভ। লোকজনকে দিব্যি তেলও দেয়।’’ এই মন্তব্যের খানিকটা মেনে নিলেন আবির। তবে জবাব দিলেন একেবারে নিরামিষ ঢঙে, ‘‘এটা হবেই। বয়স বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে মানুষের অভিজ্ঞতা বাড়ে। কাজ-ব্যক্তিগত জীবনে বদল আসে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধরনগুলো বদলে যায়। পারিপার্শ্বিকও বদলাচ্ছে। তার জন্য কারও আমাকে ক্যালকুলেটিভ মনে হতে পারে।’’ তবে তেল নয়, আবির বিশ্বাস করেন ঢাক পেটানোয়। তার জন্য কোনও রকম কার্পণ্য করতে তিনি রাজি নন। জানালেন, একটা বিষয় তিনি নির্লজ্জ। ‘‘আমার ভক্ত সংখ্যা সকলের চেয়ে বেশি হোক এ ব্যাপারে আমি প্রচণ্ড লোভী। ছবি রিলিজের আগে যত পারব প্রচার করব। টুইটার, ফেসবুক, সংবাদমাধ্যম কোনও কিছুতেই ফাঁক রাখতে রাজি নই।’’
ইন্ডাস্ট্রিতে একটা পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি বজায় রেখে চলার চেষ্টা করেন। গসিপ, বিতর্ক থেকে শত হস্ত দূরে। বললেন, ‘‘সব বিষয়ে মতামত দেওয়া আমার কাজ নয়।’’
আরও পড়ুন: ছবির জন্য অস্ট্রিয়ায় গিয়ে নাচ করতে চাই
যখন প্রথম টলিউডে এসেছিলেন এক সিনিয়র পরামর্শ দিয়েছিলেন, প্রেম না করলে নায়ক হওয়া যায় না। গসিপের কেন্দ্রে থাকতে হবে। আবির বলেছেন, ‘‘আমি প্রথম, যাঁর ইমেজ ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে পরিষ্কার। অনেকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকতে গেলে অ্যাফেয়ার আর গসিপের মধ্যে থাকতে হবে। মনে হয়, প্রমাণ করতে পেরেছি এসব না করেও টিকে থাকা যায়।’’
কিন্তু সত্যিই কি তাই? এই যে আবির পরপর ছবি করছেন জয়া আহ্সানের সঙ্গে। নায়িকার সঙ্গে সম্পর্কর কথা রটে যাওয়া আশ্চর্যের নয়। নায়ক অবশ্য বলছেন, ‘‘এই গসিপগুলো ক্লিশে হয়ে গিয়েছে।’’ রাইমা সেনের ব্যাপারেও কি একই কথা বলবেন? ‘‘দেখুন, আমার মনে হয় লোকে এগুলো ভাবতে ভালবাসে। তারা যখন দু’টো মানুষকে পরদায় ঘনিষ্ঠভাবে দেখে, তখন ভাবে ব্যক্তিগত জীবনেও এঁদের বোধহয় ভাল লাগবে। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনটা সম্পূর্ণ আলাদা।’’
সেই ব্যক্তিগত জীবন আড়ালে রাখতে চান আবির। যদিও বললেন, ‘‘জানি লোকে অভিনেতাদের ব্যক্তিগত জীবন জানতে চান। তাতে কিছু খারাপ দেখি না। নইলে আর স্টারডম কীসের?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy