Advertisement
০৫ মে ২০২৪

মানসিক অবসাদে ভুগেছেন আবীর চট্টোপাধ্যায়ও!

মানসিক অবসাদে ভুগেছেন তিনিও! কিন্তু তা থেকে বেরোতে হবেই। জোর করে নিজেকে সে চক্রব্যূহ থেকে বার করেছেন আবীর চট্টোপাধ্যায়মানসিক অবসাদে ভুগেছেন তিনিও! কিন্তু তা থেকে বেরোতে হবেই। জোর করে নিজেকে সে চক্রব্যূহ থেকে বার করেছেন আবীর চট্টোপাধ্যায়

আবীর চট্টোপাধ্যায়।

আবীর চট্টোপাধ্যায়।

ঈপ্সিতা বসু
শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২০ ০০:০২
Share: Save:

আড়াই মাস সময়টা খুব কম নয়। লাইট, সাউন্ড, অ্যাকশন ছেড়ে একজন সফল অভিনেতা গৃহবন্দি দশায় কাটালে মানসিক অবসাদ আসাটা কি আদৌ অস্বাভাবিক? করোনা আতঙ্কে নিজেকে প্রায় গুটিয়ে নিয়েছিলেন অভিনেতা আবীর চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু ধীরে ধীরে একটা সময়ে বুঝলেন লড়াইটা অল্প দিনের জন্য নয়। তাই আনলক পিরিয়ডে নিজেকে এক রকম ঠেলেই ঘর থেকে বার করছেন আবীর। ‘‘আতঙ্ক কাটিয়ে একদিন তো কাজে ফিরতেই হবে। নিজেকে ধাক্কা মারলাম, এখনই কাজ শুরু না করলে এ বার কুয়োর মধ্যে পড়ে যাব,’’ ফোনের ও পারে আবীরসুলভ হাসি শোনা গেল। নতুন এনডোর্সমেন্টের ব্যাপারে কথা বলতেই তাঁর বাড়ি থেকে বেরোনো। কয়েকটি ছবির শেষ মুহূর্তের কিছু কাজও বাকি রয়ে গিয়েছে। ‘‘ব্রাত্য বসুর ‘ডিকশনারি’তে একটা দৃশ্য বাদে, অন্য কোনও ছবির শুটিং বাকি নেই। আর ওই দৃশ্যটা অগস্টের আগে হবে না। ‘মায়াকুমারী’র ডাবিংয়ের কাজ বাকি। ‘সুইৎজ়ারল্যান্ড’-এর ডাবিং শেষ। ‘আগন্তুক’ রিলিজের জন্য তৈরি,’’ বললেন অভিনেতা।

তবে এই লকডাউনে কোথায় যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন আবীর। মানসিক অবসাদেরও শিকার হন। ‘‘এক দিকে নতুন কাজের খিদে নিয়ে বসে আছি, অন্য দিকে দর্শকের কাছে পৌঁছতে পারছি না। ফলে মন ভাল নেই। আবার করোনায় বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। আমপান কেড়েছে মাথা গোঁজার ছাদ। এই অবস্থায় এন্টারটেনমেন্ট অনেক পরের ভাবনা। তাই মানসিক অস্থিরতা এখনও কাটেনি। এত দিন বাড়ির নিরাপদ বলয়ের মধ্যে ছিলাম। এখন অনিশ্চয়তা নিয়েই বাইরে বেরোতে হচ্ছে,’’ বললেন তিনি।

জাজমেন্টাল না হওয়াই ভাল। পিছনে নয়, সামনে তাকালে পথ চলাটা সহজ হয়

কঠিন পরিস্থিতির মাঝেই মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন তিনি। চেষ্টা করছেন নানা ভাবে পুরনো ছন্দে ফিরতে। তাঁর কথায়, ‘‘গল্পের বই ছিল প্রথম দিকের সঙ্গী। তার পর পরিচিতদের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে আড্ডা চলত। কিন্তু একটা সময়ের পর এগুলো ভাল লাগত না। তখন চেষ্টা করেছিলাম, কাজের মাঝে হারিয়ে যাওয়া নিজের কলমটা খুঁজে পেতে। কিন্তু পাইনি। শুধু আঁচড় কেটেই সময় চলে গিয়েছে।’’

প্রত্যেকের এই অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা সমাজে কি মনোরোগ বাড়িয়ে দেবে, এ রকম একটা ভয়ও কাজ করেছে আবীরের মনে। গত ক’মাসে সমাজ, মানুষের ভাবনা যে ভাবে বদলেছে, তা দেখে বললেন ‘‘সন্দেহের বীজ তৈরি হচ্ছে মানুষের মধ্যে। চেনা-পরিচিতদের জন্যও বাড়ির দরজা বন্ধ। শারীরিক দূরত্ব মানতে গিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছি। সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখতে গিয়ে ভালবাসার মানুষকেও তো দূরে সরিয়ে দিচ্ছি।’’ তাঁর কথা থেকেই পরিষ্কার, লকডাউন তাঁর মনে কতটা ক্ষত রেখে গিয়েছে... তবে তাঁর এতটা প্রভাবিত হওয়ার পিছনে কি কোনও ব্যক্তিগত সঙ্কট মুহূর্তও ছিল? ‘‘হ্যাঁ, পার্সোনাল ক্রাইসিস অনেকটাই প্রভাবিত করেছিল আমাকে। আমার মেয়ের অসুখের সময়টা খুব কঠিন ছিল। সারা পৃথিবীর স্থবির জীবন দেখে মনে হয়েছিল, পর্দায় যেন সায়েন্স ফিকশন দেখছি। এখান থেকে বেরোনোর রাস্তা এখনও কেউ জানে না। রোজ সন্ধেবেলা আমি ছাদে হাঁটি। লকডাউনে প্লেন উড়তে দেখিনি। রাস্তায় গাড়িঘোড়া নেই। স্তব্ধতা যেন আমাকে গ্রাস করেছিল।’’

সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মানতে গিয়ে তো ভালবাসার মানুষকেও দূরে সরিয়ে দিচ্ছি

এই দীর্ঘ সময়ে এমন অনেক মানুষের সঙ্গেই কথা হয়েছে অভিনেতার, যাঁদের কাছে তিনি কৃতজ্ঞ, কিন্তু সময়ের অভাবে যোগাযোগ করা হয়নি এত দিন। ‘‘এই সময় সত্যিকারের কিছু বন্ধু পেয়েছি। অনেকে আবার নিজ উদ্যোগে আমার খোঁজখবর নিয়েছেন। মানসিক বল ফিরে পেয়েছি তাঁদের কাছ থেকেই,’’ বললেন অভিনেতা। লম্বা সময়টায় মেয়ে কতটা পেল বাবাকে? ‘‘মেয়ে আমাকে জোকার ভাবে। সারাক্ষণ নেচে-গেয়ে ওকে খুশি রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু ও যদি ভাবে, বাবা-মাকে এ ভাবে সারাক্ষণ পাবে, তা হলে পরে মুশকিল হবে,’’ সন্তানের জন্যও চিন্তান্বিত আবীর।

চিন্তা রয়েছে নিজের ছবির হলে মুক্তি পাওয়া নিয়েও। টলিউডেরও অনেক প্রযোজক ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ছবি বিক্রির চেষ্টা করছেন, যার মধ্যে আবীরের ছবিও রয়েছে। কিন্তু অভিনেতা মনে করেন, সকলে মিলে সিনেমা দেখার মধ্যে যে কমিউনিটি ফিল আছে, সেটা অনেকটা পুজোয় ভিড়ে ঠাকুর দেখার মতোই। ‘‘কিছু ছবি হলে দেখার জন্যই তৈরি, এগুলো মোবাইলে মন ভরাতে পারবে না,’’ মত আবীরের। এ সবের মধ্যে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুও তাঁকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়েছে। কিন্তু তা ঘিরে যে জলঘোলা হচ্ছে, তাতে তিনি রীতিমতো বিরক্ত। টলিউডেও স্বজনপোষণ নিয়ে বহু অভিযোগ আসছে... ‘‘যে কোনও ক্রিয়েটিভ ফিল্ডে প্রতিভাই শেষ কথা বলে। বাইরে থেকে কেউ এলে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা যেমন সহজ নয়, তেমনই স্টারের ছেলেমেয়েকেও বাড়তি চাপ নিতে হয়। আর জাজমেন্টাল না হওয়াই ভাল, তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। তাই পিছনে নয়, সামনে তাকালে পথ চলাটা সহজ হয়,’’ মত তাঁর।

কঠিন সময় মানুষকে নতুন উপলব্ধি করতে শেখায়। সনাতন জীবনবোধ যেন নতুন করে ফিরে আসে। আবীরের কথাতেও শোনা গেল তারই প্রতিধ্বনি, ‘‘জীবনকে কন্ট্রোল করা যায় না। একই সারিতে হলুদ ট্যাক্সি ও বিএমডব্লিউ দাঁড়িয়ে থাকবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ছাড়া আর সবই বাড়তি আমাদের এই জীবনে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abir Chatterjee Depression
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE