Advertisement
E-Paper

‘মোটা, দেখতে ভাল না’ মন্তব্য শুনে ভেঙে পড়েন! ১৮ দিন আয়না দেখেননি, কী ভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন অরিজিতা?

চেহারার গড়ন নিয়ে তির্যক মন্তব্য প্রথম দিকে এড়িয়ে যেতে পারতেন না অরিজিতা। প্রতিক্রিয়া দিয়ে ফেলতেন। প্রতিবাদ করেছেন। কান্নাকাটিও করে ফেলেছেন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৫ ১৬:০৪
বডিশেমিং আর প্রভাব ফেলতে পারে না অরিজিতার উপর।

বডিশেমিং আর প্রভাব ফেলতে পারে না অরিজিতার উপর। ছবি: সংগৃহীত।

ছিপছিপে গড়ন। নির্মেদ চেহারা। নির্দিষ্ট মাপ হতে হবে বুক, কোমর ও নিতম্বের— তবেই পর্দায় নায়িকা হয়ে ওঠা যাবে। সমাজের ঠিক করে দেওয়া সৌন্দর্যের বাইরে থাকলেই পড়তে হবে বহু বাধার মুখে। এমনকি চেহারা নিয়ে শুনতে হবে নানা তির্যক মন্তব্যও। অভিনেত্রী অরিজিতা মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁকেও একটা সময়ে নানা রকমের বাঁকা মন্তব্য শুনতে হয়েছে চেহারার গড়নের জন্য। মানসিক ভাবে ভেঙেও পড়েছিলেন। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সফর তাঁর কাছে মনে রাখার মতো। তবে এখন নিজের চেহারা নিয়ে আত্মবিশ্বাসহীনতার লেশমাত্র নেই তাঁর।

অরিজিতা জানান, একসময়ে তিনিও নির্মেদ ছিলেন। একেবারের ছিপছিপে চেহারা ছিল। কিন্তু তাঁর গড়ন বরাবরই লম্বা ও চওড়া। আনন্দবাজার ডট কমকে অরিজিতা বলেন, “আমি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই খুব লম্বা ও চওড়া। ছোটবেলায় ‘বিসর্জন’ নাটক হলে অপর্ণার চরিত্রে আমি অভিনয় করতাম না। আমি গুণবতীর চরিত্রই পেতাম। তখন শরীরে মেদ ছিল না। কিন্তু লম্বা ও চওড়া হওয়ায়, আমাকে দেখতে পরিণত লাগত।”

২০১৪ সাল পর্যন্ত ছিপছিপে চেহারার অধিকারী ছিলেন অরিজিতা। তার পর ক্রমশ ওজন বেড়েছে। যদিও অরিজিতা জানান, চেহারার গড়ন বা মোটা-রোগা নিয়ে তিনি মাথা ঘামান না। সুস্থ থাকাই তাঁর কাছে অগ্রাধিকার পায়।

চেহারার গড়নের জন্য মঞ্চেও পরিণত চরিত্রে অভিনয় করেছেন অরিজিতা। অভিনেত্রী বলেন, “আমি মঞ্চে নানা রকমের চরিত্রে অভিনয় করেছি। পরিণত চরিত্রই বেশি পেতাম। দায়িত্বও বেশি থাকত। আসলে আমি মোটা এবং সেটা যে কোনও বাধা হতে পারে, তা অনুভব করলাম এই ছোটপর্দার জগতে আসার পরে। কিন্তু মঞ্চ আমাকে কখনও এই ভাবে ভাবায়নি।”

দর্শকাসনে থেকেও মঞ্চে যে কোনও গ়ড়নের অভিনেত্রী অভিনয়ের দিকে মন দিয়েছেন। চেহারা যে কোনও বিষয়ে বাধা হতে পারে, সেই ভাবনাই আসেনি, জানান অরিজিতা। তিনি বলেন, “আমি ২৮ বছর বয়স থেকে ছোটপর্দায় অভিনয় করছি। প্রথম যে চরিত্র পাই, তার বয়স হয়তো ৪০ পেরিয়ে গিয়েছে। আমার কাছে সেই চরিত্রে অভিনয় করা চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ সেই বয়সটাকে আমি জানতামই না তখন। কিন্তু সেটাই তো অভিনেতার কাজ।” ছোটপর্দায় কাজ করতে গিয়েই বডিশেমিং-এর শিকার হয়েছেন অরিজিতা। এই জগতে আসার প্রথম দিকে সহকর্মীদের কাছ থেকে তির্যক মন্তব্য শুনেছেন।

অরিজিতা বলেন, “খাওয়া-দাওয়া নিয়ে বাঁকা মন্তব্য করা হয়েছে। মোটা মানেই অনেক খায়— এমন ধারণা তো মানুষের আছেই। ‘বেশি খায়’, ‘জমি ফেটে যাবে’, এমন নানা মন্তব্য শুনতে হয়েছে শুরুর দিকে আমাকে। আমার কিন্তু খারাপও লেগেছে। সেই প্রথম বুঝলাম, চেহারার গড়ন দিয়েও মানুষকে বিচার করা হয়। কারণ তার আগে আমি যে পরিবেশে বড় হয়েছি বা যেখানে পড়াশোনা করেছি, কোথাও এই সব দেখিনি। আমার সংস্কৃতির বাইরের বিষয় এটা।”

চেহারার গড়ন নিয়ে তির্যক মন্তব্য প্রথম দিকে এড়িয়ে যেতে পারতেন না অরিজিতা। প্রতিক্রিয়া দিয়ে ফেলতেন। প্রতিবাদ করেছেন। কান্নাকাটিও করে ফেলেছেন। অভিনেত্রী বলেন, “প্রথমে খারাপ লাগত। মুখের উপর কথা বলে দিতাম। তবে বেশি ক্ষণ ঝগড়া করতে পারি না আমি। তাই কেঁদে ফেলতাম। তখন সমাজমাধ্যমের নিরিখে তথাকথিত কিছু মানুষ সহকর্মী হয়েও আমার পাশে দাঁড়াননি। উল্টে আমাকেই তাঁরা বলেছেন, আমি নাকি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দিচ্ছি।”

ধারাবাহিকের দর্শকের থেকেও আপত্তিকর মন্তব্য পেয়েছেন অরিজিতা। খলচরিত্রের জন্য রাগ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু চরিত্রটি খল হওয়ায় দর্শক ‘হাতি’, ‘জলহস্তি’ এমন শব্দ ব্যবহার করে আক্রমণ করেছে। জানান অভিনেত্রী।

ছোট পর্দার নিরিখে সৌন্দর্যের কিছু মাপকাঠি থাকে। সেই আওতায় পড়েন না, এটা উপলব্ধি করেছিলেন অরিজিতা নিজেই। প্রথম দিকে এই উপলব্ধি বেশ কষ্ট দিয়েছিল বলেও জানান অভিনেত্রী। চেহারার ধরনের জন্য পাওয়া কাজও শেষ মুহূর্তে হাতছাড়া হয়েছিল তাঁর। বলা হয়েছিল, “মোটা এবং দেখতে ভাল নয়।” তার পরে অবসাদে চলে গিয়েছিলেন অরিজিতা। অভিনেত্রী বলেন, “অতিমারির পরে এমনিতেই সকলের কাজের অভাব। তার উপর এই ঘটনা। গভীর অবসাদে ছিলাম আমি। মনে আছে, টানা ১৮ দিন আমি বিছানা ছেড়ে উঠে আয়নাতে নিজের মুখ দেখতে পারিনি। আমি হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম।”

সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতেও বেগ পেতে হয়েছিল অরিজিতাকে। দীর্ঘ দিন সময় লেগেছিল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে। তিনি বলেন, “আমি কৃতজ্ঞ, আমার সঙ্গে আমার গুরুরা, মা-বাবা ও বন্ধুরা ছিলেন। সেই সময়ে তো মনোবিদের কাছে গিয়ে কথা বলাও খরচসাপেক্ষ মনে হত। ভাগ্যিস কিছু মানুষকে আমি পেয়েছিলাম পাশে। ওঁরাই বলেছিলেন, এটা একটা অহেতুক মন্তব্য। এই শুনে ভেঙে পড়লে তুমি হেরে যাবে। ঘুরে দাঁড়ালেই আসল যুদ্ধ জয় করতে পারবে। ক্রমশ আত্মবিশ্বাস ফিরতে শুরু করে।”

অতিমারির পরে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘এক্স= প্রেম’-এ অভিনয় করেন। সেখান থেকে আত্মবিশ্বাস বাড়তে শুরু করে তাঁর। যদিও অরিজিতা জানান, চরিত্রের জন্য ওজন কমাতে অসুবিধা নেই অরিজিতার। চরিত্রের জন্য ওজন বৃদ্ধি করা বা হ্রাস করা যে কোনও শর্তেই তিনি রাজি। তার কারণ পরিচালক নির্দিষ্ট একটি ভাবনা নিয়ে চরিত্র নির্মাণ করেন।

বর্তমানে আর চেহারা নিয়ে মন্তব্য শুনলে তা পাত্তা দেন না অরিজিতা। এড়িয়ে যেতে শিখে গিয়েছেন। কিন্তু অন্য কাউকে বডিশেমিং-এর শিকার হতে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে রুখে দাঁড়ান। অভিনেত্রীর কথায়, “আমাকে বললে, আর যায় আসে না। অন্য কাউকে বললে, প্রতিবাদ করি। নিজের চার বছর আগের পরিস্থিতি ভেবেই রুখে দাঁড়াই।”

Arijita Mukhopadhyay Arijita Mukherjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy