পর্দায় তাঁর ‘ডামরী’ রূপ দর্শকমনে ভয় জাগাতে পারে। ভুল পথে দেবতার আরাধনা জীবনে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে— সে সম্পর্কে বার্তা দেবে। বাস্তবে পার্নো মিত্র কি ভীষণ ইতিবাচক!
টলিউডে গুঞ্জন, বাংলা বিনোদন দুনিয়া নাকি ইদানীং প্রবল নেতিবাচক শক্তির শিকার! সে সব দূর করতে ‘ভোগ’ সিরিজ়ের ‘দেবী ডামরী’র কাছে কোনও উপায় আছে? আনন্দবাজার ডট কম প্রশ্ন রেখেছিল। অত্যন্ত ইতিবাচক উত্তর মিলল তাঁর থেকে, “শুধু বাংলা বিনোদন দুনিয়ায় কেন! নেতিবাচকতা কোথায় নেই বলুন তো? সেগুলোকে প্রচারের আলোয় না নিয়ে এসে ইতিবাচক ঘটনা বেশি করে ছড়িয়ে দিন। আপনা থেকেই নেতিবাচকতা সরে যাবে।”
সাহসী পোশাক, চোস্ত ইংরেজি, যুগের থেকে এগিয়ে থাকা মেয়ে— পর্দায় পার্নো এমনই। ব্যতিক্রমী তিনটি ছবি ‘অপুর পাঁচালী’, ‘বনবিবি’, ‘ধর্মযুদ্ধ’। এই তিনটিতে তিনি মাটির কাছাকাছি। সেই পার্নো ‘পিশাচিনী’! “পিশাচিনী বললে কেমন যেন নেতিবাচক মনে হয়! দেবীরূপের পাশাপাশি মানবী রূপেও থাকছি”, এই বার্তা দিয়ে কথা শুরু তাঁর। হইচই ওয়েব প্ল্যাটফর্মের জন্য পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের আগামী সিরিজ়ের তিনিই অন্যতম আকর্ষণ।

‘ভোগ’ সিরিজ়ে পার্নো-অনির্বাণ। ছবি: সংগৃহীত।
এই প্রথম তো আরও অনেক কিছুই। এই প্রথম ‘সবুজ’ পার্নো পোস্টার জুড়ে! সত্তর বা আশির দশকের ইংরেজি কমিক্স বইতে যেমন বিশেষ কিছু চরিত্রকে দেখা যেত। প্রসঙ্গ তুলতেই অভিনেত্রী জানালেন, পুরোটাই পরিচালকের ভাবনা। এখানে তাঁর কোনও কৃতিত্ব নেই। তিনি শুধুই চরিত্র হয়ে উঠতে চেষ্টা করেছেন।
অভীক সরকারের লেখা ‘ভোগ’ গল্পটি এর আগে বড় পর্দায় দেখানো হয়েছে। রেডিয়োতে নাটক আকারে প্রচারিত। সেই সূত্রে গল্পের নায়ক অতীন দেবীর ছোঁয়ায় কী ভাবে বদলে যাবে, সেটাই গল্প। পর্দায় নায়কের জীবন বদলে দিয়েছেন আপনি। বাস্তবে চরিত্র হয়ে উঠতে গিয়ে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হল? প্রশ্নের জবাবে পার্নো আগে তাঁর বন্ধু সহ-অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানালেন। বললেন, “পরম এই ছবিতে শুধুই পরিচালক। ও যে আমাকে এত অন্য রকম ভাবতে পেরেছে, সেটাই আমার কাছে অনেকটা।” তাই ছকভাঙা চরিত্র পেয়েই বিস্তর পড়াশোনা করেছেন। ‘ভোগ’ গল্পটি তিনি নাটকের আকারে রেডিয়োতে শুনেছিলেন। এ বার খুঁটিয়ে পড়েছেন।
“জানেনই তো, বাস্তবে তো পিশাচিনীর দেখা মেলে না। বাংলাতেও এই ধরনের চরিত্রের খুবই অভাব। ফলে, বইয়ের বর্ণনা, পরিচালকের বিবৃতি আর নিজের অনুভূতি মিশিয়ে ‘ডামরী’ হওয়ার চেষ্টা করেছি।” পিশাচিনীর কথা বলতে বলতে পার্নোর নতুন উপলব্ধি, “পিশাচিনীকে যেমন দেখা যায় না, তেমনই অনেক সুপ্ত অনুভূতি মনের কোণে লুকিয়ে থাকে। আমরা চট করে প্রকাশ করতে চাই না। যেমন, রাগ, হিংসা, লোভ, ঘৃণা— আরও অনেক কিছু। এই অনুভূতিগুলোকেই চরিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আনার চেষ্টা করেছি।” এই চেষ্টা করে কিন্তু ভারী তৃপ্ত তিনি। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, কখনও পিশাচিনী, কখনও দেবী হতে গিয়ে পরিশ্রম করতে হয়েছে তাঁকে। দর্শকের ভাল লাগলে তাঁর খাটনি সার্থক।

‘ভোগ’ সিরিজ় পরিচালনায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
ঈশ্বর, পিশাচিনী, তন্ত্রসাধনা, কালোজাদু— এই প্রজন্মের মনে কতটা প্রভাব ফেলে?
“তন্ত্রসাধনা, কালোজাদুকে এক পংক্তিতে না ফেলাই ভাল। দুই মত সম্পূর্ণ ভিন্ন। একই ভাবে ভিন্ন ঈশ্বর আর পিশাচ। তার পরেও বলব, এই বিষয়গুলোতে মানুষের আগ্রহ অনন্ত, অদম্য। ঈশ্বর কেমন?আজও মানুষ খুঁজে চলেছে”, বক্তব্য পার্নোর। তিনি নিজেও ঈশ্বরবিশ্বাসী।