Advertisement
E-Paper

‘অনেক দিন হল! আয় এ বার... মৃত্যুর হাতছানি দেয় মহুয়া!’ বন্ধুর প্রয়াণ দিবসে রত্না ঘোষাল

“ভীষণ অনুভূতিপ্রবণ, স্পর্শকাতর মেয়ে ছিল মৌ। কী যে ভাল ছিল। রাগ হলে কাণ্ডজ্ঞান থাকত না। নিজের উপর তখন প্রচণ্ড অত্যাচার করত।”

রত্না ঘোষাল

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৫ ১২:০৫
মহুয়া রায়চৌধুরীকে নিয়ে বললেন রত্না ঘোষাল।

মহুয়া রায়চৌধুরীকে নিয়ে বললেন রত্না ঘোষাল। ফাইল চিত্র।

২২ জুলাই ঘুম ভাঙলেই মন খারাপ। ৪০ বছর হয়ে গেল, আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু মহুয়া রায়চৌধুরী নেই। মাত্র ২৬ বছরে এক প্রতিভাময় জীবন শেষ। কী করে ফুরিয়ে গেল একটি তরতাজা প্রাণ! ভাবলেই যেন দম আটকে আসে। ওকে নিয়ে প্রচুর গুঞ্জন, অনেক রহস্য। জন্ম থেকে মৃত্যু— মৌ দুর্ভাগা। নাম, যশ, খ্যাতি, অর্থ— কী পায়নি? তিলক চক্রবর্তীর সঙ্গে সুখে সংসার করছিল। একমাত্র ছেলে গোলার জন্ম হল। ভীষণ প্রাণচঞ্চল একটা মেয়ে। কোথাও কারও বিপদ শুনলেই আমায় ডেকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ত। তখন আমাদের ইন্ডাস্ট্রি এমনই ছিল। অথচ ওর নিজের কী করুণ পরিণতি!

মহুয়া রায়চৌধুরী, তিলক চক্রবর্তীর বিয়েতে উত্তমকুমার।

মহুয়া রায়চৌধুরী, তিলক চক্রবর্তীর বিয়েতে উত্তমকুমার। ফাইল চিত্র।

শুনে খারাপ লাগে, গোলা নাকি মায়ের পরিচয় কোথাও দিতে চায় না! কেন চায় না? জানি না। মৌ চলে যাওয়ার পর তিলক, গোলার সঙ্গে যোগাযোগ কমে গিয়েছিল। মৌ কিন্তু ছেলে অন্তপ্রাণ ছিল।

মৌয়ের কথা মনে পড়লেই ওর খুনসুটি, ওর দুষ্টুমি, ওর অভিনয়, ওর রাগ-অভিমান-জেদ— চোখের সামনে ভিড় করে। অভিনেতা মাত্রই স্পর্শকাতর, সংবেদনশীল। আমাদের প্রত্যেকটা দিন একরকম যায় না। কোনও দিন সকালে উঠেই মন ফুরফুরে। কোনও দিন কারণ ছাড়াই বিষাদে আচ্ছন্ন। মৌ-ও তাই ছিল। ওর সব ভালর মধ্যে একটাই খারাপ দিক, চণ্ডাল রাগ। রাগলে হিতাহিত জ্ঞান খোয়াত। নিজের উপরে অত্যাচার শুরু করত। ছেলেবেলায় যেমন, একবার প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিল। রাগের চোটে গলায় দড়ি দিচ্ছিল মৌ। ভাগ্যিস ওর দিদি দেখতে পেয়ে দৌড়ে গিয়েছিল। বাঁচিয়েছিল ওকে। আর একবার, কার সঙ্গে যেন ঝগড়া করে ক্ষুর দিয়ে নিজের হাত ফালাফালা করে ফেলেছিল। রেগে গেলেই কেবল আত্মহত্যা করার চেষ্টা করত। নিজের উপর কী যে অভিমান ওর!

অভিমানী মহুয়া রায়চৌধুরী।

অভিমানী মহুয়া রায়চৌধুরী। ফাইল চিত্র।

বরং হাতে যখন কাজ থাকত তখন মৌ ঠান্ডা। অভিনয়ে ডুব দিয়ে যেন শান্তি পেত। আর রাতে কাজের শেষে একটু আড্ডা। তখন আমরা পানাহার করতাম। এখন তো এই রীতি প্রত্যেক বাঙালি বাড়িতে! কিন্তু সেটে কোনও দিন মহুয়া রায়চৌধুরী নেশা করে আসেনি। আমাদের ও ভাবে কাজে আসার অনুমতি ছিল না।

আসলে মৌ-এর হয়ে কেউ বলার ছিল না। তাই ওকে নিয়ে এত অহেতুক চর্চা, যার সিংহভাগ মিথ্যা রটনা। মৌয়ের মতো ঘরোয়া অভিনেত্রী কম দেখেছি। যে দিন শুটিং থাকত না, নিজেই রান্নাবান্না করত। বাড়িতে লোকজন এলে খুশি হত।

আর একটা মারাত্মক ‘মিথ’ ওকে ঘিরে, মৌ নাকি বাংলাদেশে নীল ছবির নায়িকা হওয়ার ডাক পেয়েছিল!

অনেক সাংবাদিক আমায় প্রশ্ন করেছেন। শুনে প্রচণ্ড বিরক্ত হয়েছি। অভিনেত্রী বলে কি আমাদের নামে যা খুশি তাই রটিয়ে দেওয়া যায়? হ্যাঁ, মৌ বাংলাদেশে অভিনয়ের ডাক পেয়েছিল। প্রথম সারির এক পরিচালকের থেকে। খুব মেতে উঠেছিল, বাংলাদেশ যাবে। অভিনয় করবে। ভিসাও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কলকাতার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আমায় যে দিন ফোনে জানানো হল ভিসা তৈরি, তার আগের দিন সব শেষ!

মৃত্যুর ৪০ বছর পরেও মহুয়া রায়চৌধুরী প্রাসঙ্গিক।

মৃত্যুর ৪০ বছর পরেও মহুয়া রায়চৌধুরী প্রাসঙ্গিক। ফাইল চিত্র।

মৌ এখনও আমার স্বপ্নে আসে। স্বপ্নেই আমরা আগের মতো একসঙ্গে বসে খাই, আড্ডা দিই, হইহই করি। কোনও দিন দেখি, মৌ আমায় ডাকছে। যেন বলছে, ‘অনেক দিন তো হল। এ বার আয়...!’

২২ জুলাইয়ের সকাল ঈশ্বরের কাছে মৌয়ের জন্য আমার প্রার্থনার দিন। প্রতি বছর ভগবানকে বলি, সারা জীবন বড্ড জ্বলেছে। ওকে শান্তিতে রেখো।

Mahua Roychoudhury Death Anniversary Ratna Ghoshal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy