প্রশ্ন: কত বছর পরে পুজোয় মুক্তি পাবে আপনার ছবি?
শ্রাবন্তী: ১০ বছর পর। ২০১৫ সালের পুজোয় মুক্তি পেয়েছিল ‘শুধু তোমারই জন্য’। সেই ছবিও অনেক ভালবাসা পেয়েছিল দর্শকের।
প্রশ্ন: ১০ বছর আগে আপনি আর দেব ছিলেন পাশাপাশি। আর এ বার মুখোমুখি, তাই তো?
শ্রাবন্তী: আমরা মোটেই এই ভাবে ভাবি না। সবটাই দর্শক, আর সংবাদমাধ্যমের সৃষ্টি। সবাই চান, তাঁদের ছবি যেন হিট হয়। আমিও চাই। এখানে কেউ কারও মুখোমুখি নয়। যুদ্ধ হচ্ছে না।
প্রশ্ন: বাংলা ছবির ব্যবসা নিয়ে সারা বছর ধরে প্রচুর আলোচনা চলে। ছবির নায়কেরা তো সারাক্ষণই হিসেব-নিকেশ কষছেন। এই লাভ-লোকসানের অঙ্ক নিয়ে আপনি কী ভাবেন?
শ্রাবন্তী: ভবিষ্যতের কথা বলতে পারব না। এখনও প্রযোজক হইনি। তাই লাভ-ক্ষতির হিসাব রাখি না। তবে আমাদের ছবি কতজন দেখছেন, ভাল লাগল কি না সেগুলো জানতে খুবই আগ্রহী।
প্রশ্ন: বলিউডে অনেক নায়িকাই এখন প্রযোজক। আপনার কখনও ইচ্ছা হয়নি?
শ্রাবন্তী: এত বছর হয়ে গেল এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। পরিকল্পনা তো আছে ভবিষ্যতে একটা প্রযোজনা সংস্থা তৈরি করার। কোনও তাড়াহুড়ো নেই আমার। আপাতত আমি শুধুই অভিনেত্রী। আর এখন তো আমি ‘দেবী চৌধুরাণী’।
প্রশ্ন: বাস্তবেও কি ‘দেবী চৌধুরাণী’র কোনও গুণ আছে শ্রাবন্তীর মধ্যে?
শ্রাবন্তী: কম-বেশি সবার মধ্যে আছে ‘দেবী চৌধুরাণী’র গুণ। পরিস্থিতিতে পড়লে যে কেউ এই রূপ নিতে পারে। জন্মানোর পরেই কি আমরা লড়াই শিখে যাই? পরিস্থিতি আমাদের শেখায়।
প্রশ্ন: বাস্তবের লড়াই তা হলে এ ক্ষেত্রে অনেকটাই সাহায্য করেছে আপনাকে?
শ্রাবন্তী: একদমই তাই। আর এমনিতেও আমি মারপিট করতে ভালবাসি। ছোট থেকে শিখেছি, লড়াই করেই বড় হতে হবে। বাবা যেহেতু সেনাবাহিনীতে ছিলেন, এই ভাবেই আমাকে এবং দিদিকে বড় করেছেন। অস্ত্র চালাতে শেখা আমার বাড়তি প্রাপ্তি।
শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: ছেলে কি উৎসাহ দেখায় আপনার কাজ নিয়ে?
শ্রাবন্তী: ও খুব আগ্রহী। ও নিজে আলাদা করে ছবির প্রচার করবে বলেছে। ছেলেই আমার ‘চিয়ারলিডার’। আসলে ও হওয়ার পরেই তো আমি নায়িকা হয়েছি।
প্রশ্ন: কিন্তু ছোট থেকেই তো ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন। জিতের নায়িকা হয়েছিলেন প্রথম।
শ্রাবন্তী: হ্যাঁ, তখন আমি দশম শ্রেণি। ‘চ্যাম্পিয়ন’ মুক্তি পেয়েছিল। তার পরের বছর, মানে ক্লাস ইলেভেনে আমার ছেলে হয়। অনেকে এটা শুনে আমায় বলবে ‘এঁচোড়ে পাকা’!
প্রশ্ন: এত বছর পরে কি আর কিছু যায়-আসে আপনার?
শ্রাবন্তী: না, এখন আর গায়ে মাখি না। আর আমার মনে হয়, ছোট বয়সে মা হওয়ার অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমন ঝিনুক হওয়ার পাঁচ বছর পরে আবার আমি কাজে ফিরি। তখন আমার মাত্র ২১ বছর বয়স। তবে এটা সত্যি, ১৬ বছরটা মা হওয়ার জন্য খুবই কম বয়স। ওটা বাড়াবাড়ি।
প্রশ্ন: আপনারা প্রায় একসঙ্গেই বড় হয়েছেন। এখন কি ছবির চিত্রনাট্য বাছেন ছেলের কথা মাথায় রেখে?
শ্রাবন্তী: এখন আমি আলোচনা করি। ‘দেবী চৌধুরাণী’র চিত্রনাট্য যখন এসেছিল, সবার প্রথমে ওকে আমি শুনিয়েছিলাম। বাংলা ছবি এই ভাবে তৈরি হয় কী ভাবে, দেখেশুনে বেশ অবাকই হয়েছিল। আসলে আমরা মা-ছেলের থেকে বেশি বন্ধু। মাত্র তো ১৬ বছরের পার্থক্য!
প্রশ্ন: আর অভিমন্যুর বন্ধুরা, তারা কি ‘শ্রাবন্তী আন্টি’ বলে ডাকে?
শ্রাবন্তী: ছেলের বন্ধুরা তো আমারই বন্ধু! দু’একজন ছাড়া আর কেউ ‘আন্টি’ বলে না। আমি ওদের সবার দিদি।
প্রশ্ন: এত কাছ থেকে ‘জেন জ়ি’-এর সঙ্গে মিশছেন। ইন্ডাস্ট্রিতেও অনেকে হয়তো আপনার ছেলের বয়সি, তাঁরা কাজ শুরু করছেন। কী পার্থক্য লক্ষ করেন?
শ্রাবন্তী: ছেলে এবং ওর বন্ধুদের সঙ্গে মিশি তো। তাই লিঙ্গসাম্য নিয়ে ওদের সচেতনতা, ওদের ভাষা সহজেই বুঝতে পারি। আগে সমাজমাধ্যমের এত বাড়বাড়ন্ত তো ছিল না। কত ‘গোস্ট পোর্টাল’ তৈরি হয়েছে। যা পারে তাই লিখে দেয়। তাই নতুনদের বলতে চাই, প্রথম কাজ ভাল না হলে পরেরটা যাতে ভাল হয়, সেই দিকে মনোযোগ দিতে হবে। অন্য কোনও কিছু নিয়ে মনখারাপ যেন না করে।
প্রশ্ন: আপনার আগের ছবির প্রিমিয়ারে প্রাক্তন স্বামী রাজীব বিশ্বাস এসেছিলেন। সেই ভিডিয়ো নিয়েও তো খুব আলোচনা হয়েছিল।
শ্রাবন্তী: উফ! সে আর বলতে। আামি আর ঝিনুক খুব হেসেছি। ঝিনুক ওর বাবাকেও (রাজীব বিশ্বাস) বলেছে। ওর বাবা বলেছে ‘আমি যে কোথায় যাব!’
শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: বিরক্ত হয় না ঝিনুক?
শ্রাবন্তী: তর্ক-বিতর্ক, ট্রোল, সমালোচনা— সব কিছু থেকে শতহাত দূরে আমার ছেলে। ফেসবুকে নেই, শুধু ইনস্টাগ্রামে রয়েছে। মজার রিল ভিডিয়ো দেখে. ব্যস, এটুকুই।
প্রশ্ন: আচ্ছা, ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে ছিলেন। ২০২৬ সালের নির্বাচনে কি শ্রাবন্তীকে লড়তে দেখা যাবে?
শ্রাবন্তী: না। শুনছি অনেকেই এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছেন। আগের বছরেও আমি ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে গিয়েছিলাম। মাননীয়াকে (মুখ্যমন্ত্রী) আমি সম্মান করি। দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজে যদি আমন্ত্রণ জানান তা হলে যাব না? আপাতত সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই।
প্রশ্ন: ‘রঘু ডাকাত’, ‘রক্তবীজ ২’, ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’— বাকি এই তিনটি ছবি দেখতে যাবেন?
শ্রাবন্তী: স্পেশ্যাল স্ক্রিনিং হবে নিশ্চয়ই। আমার ছবির প্রচারের কোনও কিছু না থাকলে অবশ্যই যাব। বাংলা ইন্ডাস্ট্রি একটা গোটা পরিবার। এখানে সবাই নিজের মতো করে কাজ করার চেষ্টা করছি, গোটা ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সুতরাং আমি চেষ্টা করব সব ছবি দেখতে যাওয়ার।