Advertisement
E-Paper

পরনে গৌতম হালদারের দেওয়া শাড়ি, অতীত ভেবে চোখে জল! বিদ্যা বললেন, ‘ভাল থেকো কলকাতা’

বাংলা গান গাইলেন। বাংলায় কথাও বললেন। হাসতে হাসতে দাবি করলেন বিদ্যা, “আমি বাংলার, বাঙালির। নানা কাজে নানা ভাবে তাই বাংলা যোগ।”

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৫
‘নমস্কার কলকাতা, কেমন আছ?’ প্রশ্ন বিদ্যা বালনের।

‘নমস্কার কলকাতা, কেমন আছ?’ প্রশ্ন বিদ্যা বালনের। —নিজস্ব চিত্র।

সাল ২০০৩। প্রয়াত পরিচালক গৌতম হালদারের ছবি ‘ভাল থেকো’র নায়িকা বিদ্যা বালন। তার আগে একগুচ্ছ দক্ষিণী ছবিতে ডাক পেয়েও বাতিল। সেই নায়িকা বিনোদন দুনিয়ায় রাজপাট চালাচ্ছেন। বিদ্যা বালন। কলকাতা তাঁর প্রিয়। তিনিও কলকাতাকে মন থেকে ভালবাসেন। কোনও শিকড়ের টান ছাড়াই। শুক্রবার তিনি শহরে পা রেখেছিলেন। পরনে লাল-কালো বোমকাই শাড়ি। প্রায় কাঁধছোঁয়া লম্বা ঝুমকো দুল। হাতখোঁপায় ফুল। ছোট্ট টিপ, হালকা লিপস্টিক, আর কাজলে বিদ্যা সত্যিই বাঙালিনী। সে কথা তাঁকে জানাতেই আরও একপ্রস্ত ঝলমলিয়ে উঠলেন। বললেন, “আমি বাংলার, বাঙালির। আমার নানা কাজে নানা ভাবে তাই বাংলা-যোগ।” এখানেই থামেননি। বাংলায় কথা বলেছেন। গানও গেয়েছেন উপস্থিত সাংবাদিকদের অনুরোধে, “তোমাতে আমাতে দেখা হয়েছিল।” রাহুল দেব বর্মনের গাওয়া গানটি তাঁর গলায় যেন আলাদা মাত্রা পেয়েছিল।

তার পরেই মুখ মেঘলা তাঁর। জানালেন, তাঁর পরনের শাড়িটি প্রথম পরিচালক প্রয়াত গৌতম হালদারের দেওয়া। সংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত প্রয়াত পরিচালকের কন্যা রাইপূর্ণা হালদার। বিদ্যা তাঁর দিকে ইশারায় দেখিয়ে যেন ছুঁয়ে যেতে চাইলেন ফেলে আসা সেই মুহূর্ত। “দাদার এই শাড়িটা আমার খুব পছন্দের। আমার প্রথম ছবির পরিচালকের দেওয়া উপহার। যত্ন করে রেখে দিয়েছি। কলকাতায় আসছি। গৌতমদাকে নিয়ে কথা বলব। তাই শাড়িটা পরে এলাম।” শুধুই শাড়ি পরা নয়, তাঁকে স্মরণ করে দু’মিনিটের নীরবতাও পালন করেছেন। প্রিয় পরিচালককে নিয়ে কথা বলতে বলতে চোখ ভিজেছে তাঁর।

বিদ্যা জানিয়েছেন, একের পর এক দক্ষিণী ছবি বাতিল হচ্ছে। তাঁর হাতে কাজ বলতে কয়েকটি বিজ্ঞাপনী ছবি। অনেকেই তাঁকে দেখে বলতেন, ছবিতে নেবেন। কিন্তু কথা রাখতেন না। সেই সময় গৌতম হালদার তাঁকে ‘ভাল থেকো’ ছবির জন্য বেছেছিলেন। প্রথম দিনের শুটিংয়ে বিপরীতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়! না, ভয় পাননি। কারণ, পরিচালক তাঁকে খুব সুন্দর করে ‘আনন্দী’ চরিত্রটি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। তবে ‘জ্যাঠামশাই’ উচ্চারণ করতে গিয়ে বার কয়েক হোঁচট খেয়েছিলেন। দেখে প্রয়াত অভিনেতার পরামর্শ, অভিনেত্রী চাইলে ‘জেঠু’ বলতে পারেন। বিদ্যা হাসতে হাসতে বললেন, “আমি অবশ্য ‘জ্যাঠামশাই’-ই বলেছিলাম। তবে সৌমিত্র জেঠুর সহযোগিতার মনোভাব খুব ভাল লেগেছিল।”

বিদ্যার দ্বিতীয় ছবি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পরিণীতা’। পরিচালক প্রদীপ সরকার। তার পরে সুজয় ঘোষের ‘কহানি’। সেখানে পরিচালক থেকে সহ-অভিনেতারা বা‌ঙালি। কলকাতায় লম্বা শুটিং। আবার তাঁর সাম্প্রতিক ব্লকবাস্টার ‘ভুলভুলাইয়া ৩’-এ তিনি ‘মঞ্জুলিকা’। বিদ্যার মা অবাক হয়ে বলেন, “কেন এত বাংলা যোগ! কী ভাবে ঘটে তোমার সঙ্গে? কেনই বা ঘটে?” জবাব নেই বিদ্যার কাছে। তিনি কেবল বোঝেন, বাংলার সঙ্গে কিছু তো সম্পর্ক আছে তাঁর! হয়তো ‘পূর্বজন্মের টান’। বিজ্ঞাপনী ছবি করার সময়েই শুনেছিলেন, তাঁকে মাধবী মুখোপাধ্যায়ের মতো দেখতে। বিদ্যা অবশ্য ভাবেননি, তিনি অভিনয়ে আসবেন। কোনও প্রশিক্ষণ নেননি। চিত্রনাট্য খুঁটিয়ে পড়া অভ্যেস তাঁর। আর পরিচালকের নির্দেশ পালন করেন। তবে শাবানা আজ়মি, শ্রীদেবী আর মাধুরী দীক্ষিতকে দেখতে দেখতে এক এক সময় অভিনয়ের ইচ্ছা জাগত।

বিদ্যা বালনের সঙ্গে পরিচালক গৌতম ঘোষ।

বিদ্যা বালনের সঙ্গে পরিচালক গৌতম ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।

বাংলা ছবি দিয়ে অভিনয় দুনিয়ায় হাতেখড়ি। অথচ গৌতম হালদারের পরে আর কোনও বাংলা ছবিতে নেই বিদ্যা!

এই আফসোস অবশ্য অভিনেত্রীরও। হতাশা, “আমি তো করতেই চাই। কিন্তু কেউ আমাকে আর ডাকেন না! কৌতুক ছবি করার খুব শখ। সেটাও পাচ্ছি না।” যদিও সাম্প্রতিক কোনও বাংলা ছবি তাঁর দেখা হয়নি। তবে পেশার তাগিদে তাঁকে প্রায়ই সফর করতে হয়। সেই সময় মুঠোফোনে যা পান, তা-ই দেখেন তিনি। তাঁর প্রথম পছন্দ যদিও প্রেক্ষাগৃহে বসে ছবি দেখা। “একসঙ্গে অনেকের সঙ্গে বসে যদি ছবি না-ই দেখলাম, তা হলে মজা কোথায়?” প্রশ্ন তাঁর।

রুপোলি পর্দা যাঁর শ্বাসে-প্রশ্বাসে, সেই বিদ্যা কি কোনও দিন পরিচালনায় আসবেন? জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকেরা। শাড়ি সামলে মঞ্চ ছাড়ার আগে এক গাল হেসে বললেন, “আমার মধ্যে অত প্রতিভা নেই। সবাই সব পারে না। আমি কেবল অভিনয়টাই পারি। পরিচালনা, প্রযোজনা— কিছু করব না। আজীবন অভিনয় করে যেতে চাই।”

Goutam Halder Valo Theko Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy