এত অল্প বয়সে অবসাদ! —এমনটাই শুনতে হয়েছিল তাকে। কেউ বলেছিল, ‘এটা সামান্য মুহূর্তের মন খারাপ’। সে নিজেও মানতে পারছিল না। শেষমেশ সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই দীর্ঘ পোস্ট করে অবসাদের কথা স্বীকার করল ১৭ বছরের ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ জ়ায়রা ওয়াসিম।
এর আগে অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনও জানিয়েছিলেন, তিনি অবসাদের শিকার। জ়ায়রা এ দিন ইনস্টাগ্রামে লিখেছে, ‘‘শেষমেশ এটা মেনে নিচ্ছি আমি, স্বীকারোক্তি হিসেবেই লিখছি, দীর্ঘদিন ধরে অবসাদে ভুগছি।’’ খোলা চিঠিতে জ়ায়রা অকপটে লিখেছে, ‘‘চার বছর হয়ে গেল। আমি সব সময়ে বিব্রত হতাম, ভয় পেতাম বিষয়টা মেনে নিতে। শুধু এই কারণে নয় যে, ‘ডিপ্রেশন’ শব্দটা নিয়ে চারপাশে একটা আতঙ্ক কাজ করে। আমাকে সব সময় বলা হত, ‘এত অল্প বয়সে অবসাদ হয় না।’ কিংবা ‘এটা স্রেফ জীবনের একটা পর্ব’।’’
আরও লিখেছে জ়ায়রা, ‘‘হতে পারে এটা একটা পর্ব, কিন্তু ভয়ঙ্কর পর্ব। আমি কোনও দিন এই পরিস্থিতিতে পড়তে চাইনি, চাইও না।’’ সে জানিয়েছে, প্রতি দিন পাঁচ বার করে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট খেতে হত তাকে। মাঝেমধ্যেই ‘অ্যাংজাইটি অ্যাটাক’ হত। মধ্যরাতেও হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। লিখেছেন, ‘‘খুব ফাঁকা লাগত, অস্থির লাগত, হ্যালুসিনেশন হত। কখনও সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঘুম হত না। কখনও আবার এত ঘুমোতাম যে গায়ে-হাতে-পায়ে ব্যথা হয়ে যেত। কখনও খুব খেতাম, কখনও না খেয়েই কাটিয়ে দিতাম। এই ‘পর্বেই’ কখনও নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়েছে তো কখনও আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় এসেছে।’’
‘সিক্রেট সুপারস্টার’ জানিয়েছে, তার প্রথম প্যানিক অ্যাটাক হয়েছিল ১২ বছর বয়সে। তার পর ১৪-য়। তার পর অগুনতি বার। ‘‘কত ওষুধ যে খেয়েছি, এখনও খাচ্ছি, গুণে শেষ করতে পারব না। এটাও মনে করে বলতে পারব না, কত বার আমাকে বলা হয়েছে, কিচ্ছু হয়নি। এত অল্প বয়সে অবসাদ আসে না।’’ জ়ায়রা জানিয়েছে, তাকে বলা হয়েছিল, ২৫ বছরের আগে অবসাদ আসে না। ‘‘বাস্তবটাকে স্বীকার করতে না দিয়ে আমাকে বোঝানো হত, কিচ্ছু হয়নি। আমিও নিজেকে মিথ্যে স্তুতি দিতাম। ওদের কথাতে ঘাড় নাড়তাম আর পাগল বলতাম চিকিৎসকদের,’’ লিখেছেন দঙ্গলের গীতা।
মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের কথায়, ‘‘যে কোনও বয়সে অবসাদ আসতে পারে। একটি শিশুও যদি কোনও কারণে মায়ের স্পর্শ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, মন খারাপ তাকে গ্রাস করবে, এটাই স্বাভাবিক।’’ তবে জ়ায়রার মতো অভিনেত্রীর ক্ষেত্রে এত অল্প বয়সে খ্যাতি, প্রত্যাশার বোঝাও অবসাদের কারণ হতে পারে।
অভিনয় জগতে খুব চেনা ছবি হয়ে উঠছে অবসাদ। কিছু দিন পরেই মুক্তি পেতে চলেছে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ফিল্ম ‘গুডনাইট সিটি’। এই ছবিতে অবসাদের একটি দিক (সাইকোটিক ডিপ্রেশন) তুলে ধরেছেন তিনি। স্বচক্ষেও টলিউডের অনেকের অবসাদের বিষয়টি দেখেছেন কমলেশ্বর। বলছেন, ‘‘চাহিদা পূরণ না হওয়া থেকেই শুরু হয় অবসাদের।’’ রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন তথা চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আজ হয়তো সিরিয়ালে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করছেন, প্রচুর শো করছেন, আগামী দিনে সেই জায়গাটা ধরে রাখতে না পারলেই অবসাদ তৈরি হচ্ছে। এ দিকে তত দিনে জীবনযাত্রা বদলে গিয়েছে।’’
অবসাদের মুহূর্তগুলোকে পিছনে ফেলে এখন এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে জ়ায়রা। জানিয়েছে, সামাজিক জীবন, স্কুল, কাজের জগৎ, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ছুটি নিতে চায় সে। আর তাতেই হয়তো মানসিক অবসাদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে, আশায় অভিনেত্রী। নীলাঞ্জনাও বলেন, ‘‘কাজের চাপ থেকে কিছু দিনের ছুটি হয়তো ওকে অনেকটাই সাহায্য করবে অবসাদ কাটিয়ে উঠতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy