Advertisement
E-Paper

দুই নারী

ঠিক ছিল আড্ডা হবে তাঁদের নতুন ছবি নিয়ে। রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও ঋতাভরী চক্রবর্তীর কথায় এসে গেল বিজেপি। গোমাংস খাওয়া। ‘হোক কলরব’। বিকিনি। শুনলেন দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়।ঠিক ছিল আড্ডা হবে তাঁদের নতুন ছবি নিয়ে। রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও ঋতাভরী চক্রবর্তীর কথায় এসে গেল বিজেপি। গোমাংস খাওয়া। ‘হোক কলরব’। বিকিনি। শুনলেন দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৫ ০০:১২
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

মাঝ বিকেল। গল্ফ গ্রিনে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটের ছোট্ট ঘর। সোফায় বসে ঋতাভরী চক্রবর্তী। সেমি-ফর্ম্যাল

সাদা শার্ট। ফর্ম্যাল ব্লু ট্রাউজার্স। আনন্দplus-এর সঙ্গে আলতো আড্ডায় উঠে আসছে পাকিস্তানের নতুন ছবি ‘মান্টো’, ইরানের পরিচালক জাফর পানাহি, বলিউডের আমির খান, শাহরুখ খান…।

একটু বাদেই দরজা ঠেলে রূপা। আশমানি রঙা পাড়ের গোলাপি শাড়ি। সদ্য স্নানসারা খোলা চুল।

রূপা: হ্যাল্লো!

চা এল। পিছু পিছু বাদামের বরফি। আর শিঙাড়া।

ভেবেছিলাম ঝালমুড়ি আসবে!

রূপা (ভ্রু তুলে): কী আশ্চর্য! এটা তো আমার বাড়ি। বিবেকানন্দ পার্ক নয়।

বা রে, বাঙালি বাড়িতে ঝালমুড়ি থাকতে পারে না! ঝালমুড়ি বিতর্কের পরে ওটা তো আপনার সিগনেচার!

রূপা (ঠোঁটের হাসি চওড়া করে): ওফ্! আপনারা না, পারেনও!

এখন নেতানেত্রীদের খাবারে, পোশাকে আম আদমি-মার্কা একটা ট্রেন্ড। আপনি কিন্তু দামি শাড়ি পরেন। অতিথিকে বাদামের বরফি!

রূপা (কপট রাগ দেখিয়ে): এই শুনুন, প্রথম থেকেই না, লোককে আসল চেহারাটা দেখিয়ে দেওয়া ভাল। আর দেখুন, যখন কেউ কান ফেস্টিভ্যালের নাম পর্যন্ত শোনেনি, তখন আমি কান-এ ঘুরে এসেছি। ভারত কেন পৃথিবীর যে কোনও দেশে যান, বিশেষ করে অবাঙালি গোষ্ঠীটা বাঙালি অভিনেত্রী বলতে কিন্তু আমাকেই চেনে। সে দ্রৌপদী হোক বা অন্য কোনও কারণে। পঁচিশ-তিরিশ বছর খোলামেলা এমন একটা প্রফেশনাল লাইফে থাকলাম। সেটা খামোকা…। আমি রাগী, মেজাজি, মিথ্যে সহ্য করতে পারি না। আমি একটা খোলা বইয়ের মতো। দামি শাড়ি বলছেন? খোঁচ লাগা শাড়ি পরেও মিটিং-মিছিলে গেছি। ইচ্ছে করে নয়। হঠাৎ খেয়াল করেছি খোঁচটা। মানুষের সঙ্গে মিশতে গেলে আড়াল রাখাতে আমি বিশ্বাসী নই।

(ঋতাভরী এতক্ষণ কখনও জোরে, কখনও মিচকি হাসিতে ভরিয়ে দিচ্ছিলেন)

ঋতাভরী! ঝালমুড়ি না হয় না’ই হল। আড্ডায় বিফস্টেক চলতে পারে?

ঋতাভরী: আমি বিফ-ভক্ত নই। কোনও মাংসই ঠিক নিতে পারি না। রাজনীতি বা ধর্মের জন্য নয়। আমার দিদি (অভিনেত্রী চিত্রাঙ্গদা চক্রবর্তী) বিফ খেতে বা রান্না করতে খুব ভালবাসে। আমি বড়জোর টেস্ট করি।

রূপা, আপনি?

রূপা: আমার বিফ ভাল্লাগে না।

পলিটিক্যালি কারেক্ট উত্তর দিচ্ছেন?

রূপা (হা হা হা): এক বারই খেয়েছি। বিদেশে। মুখে দিয়েই বমি।

পর্ক চলে?

রূপা: তাও না। আমায় এক বাটি ডিমের ডালনা দিলে দারুণ লাগে।

ঋতাভরী: ওম্মা! আমিও তাই।

রূপা: বা ছানার ডালনা। পনির নয় কিন্তু।

ঋতাভরী: এক্স্যাক্টলি।

যখন গোমাংসের কারণে তিন জন বিশিষ্ট মানুষের প্রাণ গেল, তখন রূপা গঙ্গোপাধ্যায় কোনও স্টেটমেন্ট দিলেন না কিন্তু!

রূপা (মুহূর্তে গম্ভীর): যে কোনও ঘটনাই, যেখানে একজন অন্য জনকে আঘাত করে, তখন সেটা একটা ল’ অ্যান্ড অর্ডার-এর ইস্যু। যিনি মারা গেলেন, যারা তাঁকে মারল, অবস্থানটা বদলে গেলেও তাই-ই বলব।

ঋতাভরী: আচ্ছা, কথা তো ছিল, ‘অন্য অপালা’ নিয়ে আড্ডা…

আড্ডার আবার নিয়মটিয়ম হয় নাকি!

ঋতাভরী: তা’ও।

ছবি নিয়ে পরিচালক শতরূপা সান্যাল বলেছেন, এটা জেন্ডার পলিটিক্সের গল্প। সমাজ মেয়েদের কাছে এই এই এই চায়, কিন্তু মেয়েরা কী কী চায় কেউ ভাবে না!

রূপা: নারী মানেই আহারে-বাছারে, স্নেহশীলা, মমতাময়ী। ধৈর্যশীল, সহনশীল হবে। অভিমান হলে, কষ্ট পেলে ছিটকে বেরোবার উপায় নেই। অন্য কিছু তো হতে পারত। সিনেমাটা এই জায়গাটা অ্যাড্রেস করে।

অন্য রকম! বোল্ড? ঋতাভরী, ‘বোল্ড’ নারীর, যদি বলি পাঁচটা দিক…

ঋতাভরী (পড়া বলার মতো তর তর করে): এক, যে মহিলা যা মনে করেন, সেটা করার বা বলার সাহস রাখেন। দুই, সমাজের চাপানো নিয়মকে যিনি মানেন না। তিন, মেয়ে হয়ে যদি বলেন, আমার বাবা-মায়ের দায়িত্ব আমি নেব। অন্য বাড়ি গিয়ে সংসার করব না। চার, যিনি বিশ্বাস করেন, ছেলেমেয়ে মানুষ করতে কোনও পুরুষ অভিভাবকের দরকার নেই। এটা আমার মায়ের (শতরূপা সান্যাল) কথা ভেবেই বললাম। আর পাঁচ, মালালা যেটা আমাদের শেখালেন, আমি শিক্ষিত হব, সেটা আমার চয়েস।

শুনেছি, আনন্দplus-এ আপনার বিকিনি পরা ছবি বেরনোর পরে ফেসবুক, ফোন ইত্যাদিতে সমালোচনার যে ঝড় উঠেছিল, তাতে আপনি বিধ্বস্ত হয়ে যান।

ঋতাভরী: না, তা ঠিক নয়। বিকিনি পরা যে একটা বিগ ডিল এটা আমার জানা ছিল না। আমি হলিউড-বলিউড, জিনাত আমন, করিনা কপূর থেকে আলিয়া ভট্টদের দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। আর, এই ব্যাপারটা আমার পার্ট অব প্রফেশান…

রূপা (এতক্ষণ অবাক হয়ে শুনছিলেন): কী হয়েছে? কাগজে একটা ছবি বেরিয়েছে বলে এত কিছু!

ঋতাভরী: উল্টোটাও আছে। প্রজিটিভ রেসপন্সই বেশি। সিনিয়র আর্টিস্টরাও আমার কাছে ফিগার মেনটেন করা নিয়ে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করেছেন।

রূপা: কী স্টুপিড ব্যাপার! বিদেশিরা বিকিনি পরলে আপত্তি নেই। পাশের বাড়ির কেউ পরলেই ‘গেল গেল’! এরাই বালিশের তলায় ম্যাগাজিন রেখে লুকিয়ে দেখে।

রূপা, বিজেপি-র সাংসদ সাক্ষী মহারাজ কিন্তু বলেছেন, হিন্দু মহিলাদের চারটি করে সন্তান থাকা উচিত। তখন গা জ্বলে না?

ঋতাভরী: আবার শুরু হল।

রূপা (হেসে): মহা মুশকিল। উনি কী বলেছেন, সেটা পুরোটা আমায় মনে করে বলতে হবে।

গুলাম আলির কনসার্ট যে ভাবে বন্ধ হয়ে গেল, কষ্ট লাগে না?

রূপা: (হাস্কি সুরেলা গলাটা নামিয়ে মৃদু স্বরে) আমি শুধু বিতর্কিত কথা বলতে বসিনি। তবে বলি, কনসার্টটা যে ভাবে বন্ধ হল সেটা নিশ্চয়ই আমার খারাপ লেগেছে। এটা যে কোনও মানুষের সঙ্গে হলেও একই রকম খারাপ লাগত।

ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখা যাচ্ছে না তো আপনাকে!

রূপা: মুম্বই থেকে আসার পর আর যাইনি।

শেষ বাংলা ছবি কী দেখেছেন?

রূপা: অনেক দিন ভাল ছবি দেখা হয় না।

সময়ের অভাব?

রূপা: কিছুটা। ন’মাসে এগারো খানা ছবি ছেড়েছি।

আপনার গানবাজনাও শিকেয়?

রূপা: না, শিকেয় তুলব না। ওটা বাড়িতেই করা যায়। করব আবার।

খানাখন্দে ভরা ঝুঁকির নতুন জীবন। যে জীবনের ইতিহাস কিন্তু বলে, এখনও অবধি বেশির ভাগ চিত্রতারকাই রাজনীতিতে এসে ঝামেলাতেই পড়েছেন।

রূপা: জীবনে একটা মাপের পর শুধু ইতিহাসের মধ্যে ঢুকে পড়লে সেটা আর জীবন থাকে না। কে বলতে পারে আগামীতে কী হবে!

এই যে বাংলা ছবিও দেখা হচ্ছে না। রাজনৈতিক টানাপড়েনে পড়ছেন। কোনও মন্তব্য করতে গিয়ে দলের লোকের কাছেও অপ্রিয় হচ্ছেন। অ্যাডাপ্ট করতে অসুবিধে লাগছে না?

রূপা: দেখুন, নানারকম রোলে দিনে দিনে নিজেদের পাল্টানোই আমাদের কাজ। একটা মাস এক চরিত্র, তো পরের মাসে অন্য। নানা ইউনিট-এ কাজ করতে হয়। সবার কাজের প্যাটার্ন আলাদা। তাই এই যুঝে নেওয়াটা আমাদের মজ্জায়।

ঋতাভরী, যদি বলি ‘অন্য অপালা’র ইউএসপি কী?

ঋতাভরী: দেখুন, ঘটনাটি বিশ বছর আগের হলেও এখনও প্রাসঙ্গিক। কিশোরী অপালার বিয়ে হয় রায়রায়ান পরিবারে। বিয়ের রাতেই অপালার স্বামী (ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়) তাকে জানায় তাঁর রাধাভাব চলছে। তাঁর পক্ষে স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্ক পালন করা কোনও দিন সম্ভব নয়। পরে অপালা জানতে পারে, কুলগুরু অনন্ত বাবাজির কাছে (নাইজেল আকারা) তাঁর স্বামী নিবেদিত। শুধু মানসিক ভাবে নয়, শারীরিক দিক থেকেও। এ ধরনের কাহিনি এখনও অবধি বাংলা ছবিতে আসেনি।

এ আর নতুন কী! সমকামিতা।

ঋতাভরী: হিন্দি ‘দোস্তানা’ বা হলিউড বলছি না, বাংলা ছবি বলছি কিন্তু।

কেন ঋতুপর্ণ ঘোষের অভিনয়, ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’?
ঋতাভরী: আমি বলছি, এ ছবি স্বামীর সমকামিতার কথা বলবে। সেখান থেকেই কাহিনির জটিলতা। বাঁক।

ঋতাভরী, কোনও দিন রাজনীতিতে আসবেন? ধরুন, নতুন কোনও লেফ্ট অ্যালায়েন্স হল, প্রচারে ডাকল।

রূপা (চোখ বড় করে): এ বার ওকেও?

ঋতাভরী (হেসে): এঁরা কাউকে ছাড়েন না। শুনুন, আমি যাদবপুরের ছাত্রী। ‘হোক কলরব’-এর মিছিলে ছিলাম। আমার পরিবারে বামপন্থী ভাবনার চল দেখতে দেখতে আমার বড় হওয়া, তার মানেই ধরে নেবেন না, আমি নতুন কোনও বামদলের জোটের প্রচারে ডাক পেলেই যাব। আমি ওই ধারায় বিশ্বাসী নই। ঈশ্বরে বিশ্বাসী।

তা’হলে কি রাইট অ্যালায়েন্সের প্রচারে যাবেন?

রূপা: আরে-এ-এ। এ তো মহা বিপদ!

ঋতাভরী (হেসে): দেখুন আমার তো একটা ফেস-ভ্যালু আছে। আমাকে লোকে বিশ্বাস করে। আমি যেমন যাদবপুরের কনভোকেশনে ডিগ্রি নিতে যাইনি। অসম্ভব সম্মানজনক একটা অনুষ্ঠান, তবু। প্রতিবাদে যাইনি। মিছিলে হেঁটেছি।

রাজনীতির যদি কেউ প্রচারে ডাকে!

ঋতাভরী (হেসে): যদি আমি তাঁদের প্রতি বিশ্বাসী না হই, যাব না।

আপনার বিশ্বাসটা কোন দিকে?

রূপা: অ্যাই, অ্যাই বলবি না তো! (তোড়ে হাসি দু’জনের)

২৫ নভেম্বর কিছু হচ্ছে, রূপা?

রূপা (হেসে ফেলে): মানে? পার্টি? আমার জন্মদিনের? নাহ্।

ঋতাভরী (প্রচণ্ড হেসে): আরে অ্যাত্তো ঘুরিয়ে বলার কী আছে? ওঁরা জানতে চাইছেন, তুমি স্পেশাল কোনও মানুষ, বিশেষ কারও সঙ্গে…

রূপা (কপট উত্তেজনায়): আরে আরে, অন্য অপালা-রই প্রোমো অনুষ্ঠান আছে-এ-এ।

ঋতাভরী (হা হা হা): প্রোমো অনুষ্ঠানেই কেক কাটা হবে।

রূপা (লজ্জা পেয়ে): এম্মা। যাতা। প্লিজ করিস না এ সব।

rupa ganguly ritabhari chakraborty debshankar mukhopadhyay interview ঋতাভরী চক্রবর্তী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy