Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘এখন ধারাবাহিকের মান পড়ে গিয়েছে’

সেই ’৯৬ সাল থেকে অভিনয় করছেন। প্রথম কাজ টেলিকাস্ট না হলেও ভাল অভিনেতার কদর সব সময়ই। ‘সীমারেখা’, ‘আকাশছোঁয়া’, ‘প্রবাহ’...পরপর কাজ করে গিয়েছেন। ‘সাতকাহন’ তার পর ‘এক আকাশের নীচে’ তাঁকে জনপ্রিয়তার চুড়োয় পৌঁছে দিয়েছিল। স্বামী তথাগত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মিলে প্রযোজনা সংস্থা খুলেছেন এখন। গল্ফ ক্লাব রোডের ফ্ল্যাটে দেবলীনার সঙ্গে সান্ধ্য আড্ডার সাক্ষী রইল তাঁর তিন পোষ্য চেরি, মোগলি, বাঘিরা...সেই ’৯৬ সাল থেকে অভিনয় করছেন। প্রথম কাজ টেলিকাস্ট না হলেও ভাল অভিনেতার কদর সব সময়ই। ‘সীমারেখা’, ‘আকাশছোঁয়া’, ‘প্রবাহ’...পরপর কাজ করে গিয়েছেন। ‘সাতকাহন’ তার পর ‘এক আকাশের নীচে’ তাঁকে জনপ্রিয়তার চুড়োয় পৌঁছে দিয়েছিল। স্বামী তথাগত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মিলে প্রযোজনা সংস্থা খুলেছেন এখন। গল্ফ ক্লাব রোডের ফ্ল্যাটে দেবলীনার সঙ্গে সান্ধ্য আড্ডার সাক্ষী রইল তাঁর তিন পোষ্য চেরি, মোগলি, বাঘিরা...

মালয়েশিয়ার লঙ্কাভিতে দেবলীনা

মালয়েশিয়ার লঙ্কাভিতে দেবলীনা

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০০:১৭
Share: Save:

প্র: এত বছর ধরে আপনাকে একই রকম দেখতে রয়ে গিয়েছে কী করে!

উ: (জোর হাসি) এটা সকলেই বলে। তবে বিয়ের পর একটু (হাতের মুদ্রায় দেখালেন) মোটা হয়েছি। যে সময়ে কাজ শুরু করেছিলাম, তখন রোগা হওয়ার চল ছিল না। প্রচুর চেষ্টা করেও মোটা হতে পারিনি। ধাতটাই এমন।

প্র: আপনি বেশ রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে। তাতে সমস্যা হয়নি?

উ: আপত্তি এসেছিল আমার দাদুর তরফ থেকে। মধ্য কলকাতায় আমাদের একান্নবর্তী পরিবার। ন’বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছি। তবে মা আগাগোড়া আমাকে সমর্থন করে গিয়েছেন। জনপ্রিয় হওয়ার পর দাদুও আর আপত্তি করেননি। বিয়ের আগে পর্যন্ত আমি পুরনো বাড়ি থেকেই কাজ করে গিয়েছি।

প্র: অভিনয় করতে করতেই পড়াশোনা?

উ: হ্যাঁ। তাতে কোনও সমস্যা হয়নি। তখন পরিস্থিতি আলাদা ছিল। এখনকার মতো নয় যে, টেলিভিশনে কাজ করলে আর কোনও কিছুই করা যাবে না।

প্র: ছোট পরদার নানা পর্যায় দেখেছেন। কতটা তফাত বুঝছেন?

উ: প্রায় পুরোটাই বদলে গিয়েছে। আমি বাংলা টেলিভিশনের স্বর্ণযুগে কাজ করা শুরু করেছি। বাজেট, গ্র্যাঞ্জার যতই বাড়ুক, এখন ধারাবাহিকগুলোর মান পড়ে গিয়েছে।

সবটাই টিআরপি নির্ভর। কোনও ধারাবাহিকের অভিনয় খুব নিম্ন মানের অথচ তার টিআরপি বেশি, এমনটাও হচ্ছে। তাতে সকলে মিলে ওই অভিনয়টাই ফলো করতে থাকে। এই চাপটা আমার মতো সিনিয়রদের না থাকলেও নতুনদের ক্ষেত্রে সত্যিই বড় সমস্যা। জানি না এখন কেরিয়ার শুরু করলে কী করতাম!

প্র: এতটা বদলেছে পরিস্থিতি!

উ: হ্যাঁ। এগুলো বলতে আমার কোনও আপত্তি নেই। দিন-রাত কাজ হচ্ছে। শ্যুট করতে করতে অ়জ্ঞান হয়ে যাচ্ছে, ফের এসে কাজ করছে! তাই বলছি, এই পরিস্থিতিতে মানাতে পারতাম কি না সন্দেহ রয়েছে!

আরও পড়ুন: ‘রণবীরের সঙ্গে সিগারেট খাওয়ার ছবি পরিবারও পছন্দ করেনি’

প্র: অন্যান্য ধারাবাহিক দেখেন?

উ: দেখতে ভাল লাগে না কিন্তু কী ট্রেন্ড চলছে তা বোঝার জন্য দেখি। দেখে ভীষণ হাস্যকর লাগে যদিও। শ্যুটিং করতে গিয়ে কানে আসে, অমুক ধারবাহিকের ট্র্যাকটা দারুণ চলছে। হাই টিআরপি। তখন সেটা দেখি। তবে কেন যে সেগুলোর টিআরপি বেশি, তা আমার কাছে রহস্য! এখন কোনও চরিত্রের জন্য একটা নির্দিষ্ট লুক সেট করে দেওয়া হয়। ইউনিফর্মের মতো। ‘এক আকাশের নীচে’ করার সময় এগুলো ছিল না। বাড়িতে থাকলে এক রকম সাজ। রাস্তায় বেরোলে আর এক রকম। তারতম্য থাকত। তবে এগুলো যখন টিআরপি দিচ্ছে, তখন আমি এ সব নিয়ে বলার কেউ নই।

প্র: এখন অভিনেতারা চরিত্রের নামেই পরিচিত। আপনাদের ক্ষেত্রে তা হয়নি।

উ: এটাও একটা বদল। নন্দিনীর চরিত্র অবশ্যই জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু দর্শক আমাকে দেবলীনা বলেই চেনেন। মনামী, কনীনিকা তাদের নামেই পরিচিত। বাহা, রাসমণিদের আসল নাম লোকে জানতেও পারে না। ইমেজ তৈরি হয়ে গেলে ভেঙে বেরিয়ে আসা মুশকিল। অভিনেতারাও বলে না, চ্যানেলও ঝুঁকি নেয় না।

প্র: ধারাবাহিকের বিষয়বস্তু নিশ্চয়ই সব সময় পছন্দ হয় না। সরব হয়েছেন কখনও?

উ: পছন্দ না হওয়া সত্ত্বেও বহু কাজ করেছি। স্ক্রিপ্ট ছিঁড়ে ফেলে নিজের মতো সংলাপ বলেছি। সিনিয়র হওয়ার সুবাদে এই সুবিধেটা হয়তো আমরা পাই। তবে একটা কথা না বলে পারছি না, অনেক দিন পর লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা সংলাপে অদ্ভুত স্যাটিসফ্যাকশন পাচ্ছি। ‘কুন্দ ফুলের মালা’ আর ‘অন্দরমহল’ করতে যে কারণে আমার ভাল লাগছে। মাঝের কিছু দিন কাজ থেকে এই পরিতৃপ্তিটা পাচ্ছিলাম না। আমার কথায় যদি অন্য প্রযোজকেরা অসন্তুষ্ট হন, তাতেও কিছু বলার নেই।

প্র: এ বার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। এত কাজের চাপের মধ্যে আপনি আর তথাগত একে অপরের জন্য সময় পান?

উ: সময় বেরিয়ে যায়। কার কী প্রায়োরিটি সেটা বুঝে নেওয়াই আসল। যে যখন সময় পাই, বাড়ির কাজ করে রাখি। বিয়ের তিন বছরে আমরা ১৪ বার বেড়াতে গিয়েছি। বলতে পারেন, বেড়াতে যাওয়ার টাকা জমানোর জন্যই সিরিয়াল করি (হাসি)! পাহাড়, জল, জঙ্গল কিচ্ছু বাদ দিই না। তবে জঙ্গল আমাদের দু’জনেরই বেশি পছন্দ।

প্র: তিন বছরের বিবাহিত জীবন দেবলীনাকে কতটা বদলে দিল?

উ: ওই যে শুরুতে বললাম, একটুখানি মোটা হয়েছি (হাসি)। আমি আর তথা তো আসলে বন্ধু ছিলাম। সেই বন্ধুত্বটা এখনও রয়ে গিয়েছে। মাঝখানে শুধু একটা সই হয়েছে।

প্র: সেই বন্ধুত্ব থাকাকালীন ভেবেছিলেন, কোনও দিন সম্পর্ক হতে পারে?

উ: একবারের জন্যও না। আমি ওর বিয়েতে গিয়ে কবজি ডুবিয়ে খেয়ে এসেছি। কিন্তু ঝড়টা আমাদের দু’জনের জীবনে একসঙ্গে উঠেছিল। ওর বিবাহিত জীবন যখন টালমাটাল, তখন আমি যে সম্পর্কে ছিলাম সেখানেও ডিজাস্টার। যদিও দুটো সম্পূর্ণ আলাদা কারণে, আলাদা পরিস্থিতিতে। তার পর একটা সময় দু’জনেই একা হয়ে গেলাম। তখন আমাদের অন্য বন্ধুরাই বলল, তোরা একে অপরের কথা ভাবতে পারিস। আমাদের মাথাতে সেটা একবারও আসেনি। অথচ খারাপ সময়ে দু’জনে কিন্তু দু’জনের পাশে ছিলাম। তার পর কিছু দিন লিভ ইন করলাম। কী জানেন তো, বিয়ে সম্পর্ক এগুলো সব কিছুই টিকে থাকে বন্ধুত্বের উপর। যেটা আমাদের দু’জনেরই আগের সম্পর্কে ছিল না। আমি আর তথা বেস্টফ্রেন্ড, এটাই আমাদের সম্পর্কের ভিত।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE