Advertisement
E-Paper

হ্যামলেটওয়ালা

আর নিজের গল্প নয়। এ বার শেক্সপিয়র থেকে ছবি করতে নামলেন অঞ্জন দত্ত। বললেন ইন্দ্রনীল রায়-কে।আর নিজের গল্প নয়। এ বার শেক্সপিয়র থেকে ছবি করতে নামলেন অঞ্জন দত্ত। বললেন ইন্দ্রনীল রায়-কে।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০০:৪৫
Share
Save

ফ্লুরিজে আবার। আনন্দplus অঞ্জন দত্তের রিইউনিয়ন।

হ্যাঁ, অনেক দিন পর বসলাম। আবার যে ছবি করতে চলেছি, সেই খবরটা আনন্দplus-য়েই ব্রেক করছি...

এ বার তো বেনিয়াটোলা মিটস স্ট্র্যাটফোর্ড-অন-অ্যাভন?

হ্যাঁ, শেক্সপিয়রের ‘হ্যামলেট’‌য়ের অ্যাডপ্টেশন আমার নতুন ছবি। ‘হেমন্ত’।

সেটাতে পরে আসছি। পরপর ফ্লপ হওয়ার পর শেক্সপিয়রে ফেরা মানে তো নিজের চেনা টেরিটরিতে ঢুকলেন?

হ্যাঁ, স্টেজে শেক্সপিয়র করেছি কিন্তু ফিল্মে এই প্রথম। আপনাকে কয়েকটা কথা বলি। আমি জীবনের শেষ ইনিংস খেলছি। বয়স ৬১ হল। নিজের গল্প অনেক বললাম। সেটা বলতে বলতে মিডিওক্রিটি চলে আসছিল। বুঝতে পারছিলাম, আমি আমার গল্পে যে মেসেজ দিতে চাই সেগুলো ক্লাসিক লিটারেচারে আগেই বলা হয়ে গিয়েছে...

তার মানে এ বার থেকে ক্লাসিক?

তাই মনে হচ্ছে। শেক্সপিয়র করছি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প নিয়ে কাজ করব। ব্রেখট করব। সাঁত্রে করব। প্রেমেন্দ্র মিত্র করব। আমার নিজের গল্প আর না। দু’টো ছবি করার খুব ইচ্ছে, সমরেশ মজুমদারের ‘কালপুরুষ’। আর শঙ্করের ‘চৌরঙ্গী’। আমার ধারণা, ‘চৌরঙ্গী’তে যে কলোনিয়াল কলকাতাটা রয়েছে সেটা আমার থেকে ভাল কেউ ধরতে পারবে না। স্যাটা বোস, মার্কো পোলো — কী সব চরিত্র। প্রোডিউসর পেলেই ‘চৌরঙ্গী’ করতে চাই। ‘ঝিন্দের বন্দী’ পারব না, কিন্তু ‘চৌরঙ্গী’ ফাটিয়ে দেব।

এ বার ‘হেমন্ত’‌য় ফিরি। হিন্দিতে তো গত বছর ‘হ্যামলেট’‌য়ের অ্যাডাপ্টেশন হল। ‘হায়দার’।

হ্যাঁ, সেটা আমার ভাল লাগেনি। ওটা দেখেই আমার মাথায় আসে যে, আমি এর থেকে বেটার অ্যাডাপ্টেশন করতে পারব। বিশালের ‘মকবুল’ আমার অসাধারণ লেগেছিল। আমার মতে ওঁর ‘ম্যাকবেথ’ কুরোসাওয়া, পোলানস্কি লেভেলের। তাই কোনও দিন ভুলেও ‘ম্যাকবেথ’ অ্যাডাপ্ট করতে যাব না। ‘ওমকারা’ও মোটামুটি লেগেছিল। কিন্তু ‘হায়দার’ ভাল লাগেনি।

বিশালের ‘হায়দার’‌য়ের প্রেক্ষাপট ছিল কাশ্মীর। আপনার ‘হ্যামলেট’‌য়ের প্রেমাইসটা কী?

আমার প্রেমাইস বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। সঙ্গে এন্টারটেনমেন্ট মিডিয়া। এখানে হ্যামলেটের বাবা ষাটের দশকের এক বিখ্যাত প্রোডিউসর, বিরাট প্রতিপত্তি। কিন্তু আশির দশক থেকে ব্যবসা নিম্নমুখী। এ রকম কিছু বছর চলার পর বাবার মৃত্যু। ধীরে ধীরে কাকা সিনেমা ব্যবসাটা নিজের হাতে নেয় আর তামিল-তেলুগু ছবির রিমেক বানিয়ে আবার তারা ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর প্রযোজক।

এটা কি বর্তমান কোনও প্রোডাকশন হাউজের প্রতি অঞ্জন দত্তর কটাক্ষ?

না, না, একেবারেই না। ব্যবসা যখন মধ্যগগনে তখন হ্যামলেটের প্রবেশ।

হ্যামলেট তো পরমব্রত?

হ্যাঁ, হ্যামলেট পরমব্রত। ছবিতে ওর চরিত্র নিউ ইয়র্কের ফিল্ম স্কুলে পড়াশোনা করে কলকাতা ফেরে। ফিরে এসে বুঝতে পারে, ‘সামথিং ইজ রটেন ইন দ্য স্টেট অব ডেনমার্ক’। এর মধ্যে কাকাকে বিয়ে করেছে মা, সব মিলিয়ে গা গুলিয়ে ওঠা পরিবেশ।

পরম-ই কি প্রথম পছন্দ ছিল?

হ্যাঁ, ও ছাড়া কলকাতায় কোনও হিরো নেই যে হ্যামলেট করতে পারে। ওর মধ্যে একটা অদ্ভুত ইন্টেলেকচুয়াল কনফিউশন আছে। একটা পাগলামি আছে। একটা অনিশ্চয়তা আছে। তাই পরমই ছিল আমার ফার্স্ট চয়েস। আর শেক্সপিয়র করতে হলে পোড় খাওয়া ফিনিশ্ড অভিনেতা দরকার হয়।

সাপোর্টিং কাস্টও খুব ইন্টারেস্টিং...

হ্যাঁ, যিশু হোরেশিও। এখানে নাম হীরক। এন্টারটেনমেন্ট জার্নালিস্ট। নিজের জীবনে এত ঘা খেয়েছে যিশু যে ওর মধ্যে একটা অদ্ভুত ম্যাচিওরিটি এসে গেছে। এই ম্যাচিওরিটিটা দরকার ছিল এই রোলটায়।

আর শাশ্বত?

কিছু কিছু কাস্টিং হয় যা দেখে মানুষ চমকে যায়। এই সিনেমায় ক্লডিয়াসের কাস্টিংটা সে রকম। ক্লডিয়াসের বাংলা নাম কল্যাণ। প্রথমে ভেবেছিলাম ক্লডিয়াসের চরিত্রে কৌশিক সেনকে নেব। কিন্তু সেটা প্রেডিক্টেবল হত।

ক্লডিয়াস তো হ্যামলেটের কাকা। পরমের কাকা হিসেবে মানাবে শাশ্বত কে?

শাশ্বত এদের সবার থেকে বড়। একটু মেকআপ করালে ওকে পঞ্চাশ-বাহান্ন করে দেওয়া যাবে।

আর হ্যামলেটের বাবা? ভূত?

(হেসে) ওটা সারপ্রাইজ থাকুক না।

আর বাকি গারথ্রুড, হ্যামলেটের মা...

হ্যাঁ, এখানে গায়ত্রী। সে একজন অভিনেত্রী, লাস্যময়ী। সেই সময়কার অভিনেত্রী যাকে নিয়ে প্রচুর গসিপ। অপর্ণা সেন, সুপ্রিয়া চৌধুরী মডেল।

যে রোলটার জন্য আপনি রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে অ্যাপ্রোচ করেন?

হ্যাঁ, রূপা ওয়াজ পারফেক্ট। ও করতেও চেয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে রাজনীতিতে ঢুকে গেল। তারপর আমাকে খোলাখুলি বললও যে ওর কাছে ফার্স্ট প্রায়োরিটি এখন পলিটিক্স। শি ওয়াজ অনেস্ট এনাফ টু টেল মি দ্যাট। ওটা শোনার পর আর রিস্ক নিতে চাইনি। তারপর নন্দিতা দাস, অর্পিতা, অ়ঞ্জনা বসু, শ্রীলেখা— সবার সঙ্গে কথা হয়।

চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়কে তো প্রায় ফাইনাল করে ফেলেছিলেন?

হ্যাঁ, চূর্ণীর সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছিল প্রায়। শেক্সপিয়রটা জানে, বোঝে। অভিনয়টা ব্রিলিয়ান্ট। এবং ওর মধ্যে একটা অদ্ভুত সততা আছে। একটা ইন্টিগ্রিটি আছে, একটা সফটনেস আছে। ও ঠিক বেপরোয়া নয়। প্রবলেমটা হল সেখানেই। আমি এমন কাউকে চাইছিলাম যে একটু রাফ। মা হলেও ঠিক ‘মা-মা’ নয়। তখন গার্গীকে অ্যাপ্রোচ করলাম। গার্গীই করছে রোলটা। লাল লিপস্টিক, বুফন্ট হেয়ারস্টাইলে বেশ মানিয়েছে গার্গীকে।

শ্যুটিং কলকাতায়?

হ্যাঁ, শ্যুটিং পুরোটাই কলকাতায়। পয়লা অক্টোবর থেকে শুরু। ছবির প্রযোজক গ্রিনটাচ এন্টারটেনমেন্টের শ্যামসুন্দর দে। এ ছাড়া ওফেলিয়ার চরিত্রে রয়েছে পায়েল সরকার। শ্রদ্ধা কপূর যে রোলটা করেছিল ‘হায়দার’‌য়ে।

অনেক ‘হ্যামলেট’ হল। এ বার বলুন এই ক’মাসে কী করলেন অঞ্জন দত্ত?

হিন্দি ছবি দেখলাম অনেকগুলো।

বাংলা ছবি দেখেননি কিছু? ‘বেলাশেষে’, ‘আসা যাওয়ার মাঝে’?

এ সবের মধ্যে কেন ঢোকাচ্ছেন?

আপনার নিজস্ব একটা মত আছে...

‘বেলাশেষে’ দেখলাম। হোয়াট আ সাকসেস। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে ‘ইচ্ছে’ অনেক বেটার লেগেছিল।

আর ‘আসা যাওয়ার মাঝে’?

ভীষণ আশা নিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম ছবিটা। কিন্তু অসম্ভব ডিসাপয়েন্টেড হয়েছি। পুরো ছবিতে একটা পুরনো আর্ট ফিল্মের তকমা রয়েছে। আ ডেটেড আর্ট ফিল্ম। আর কেন যে চরিত্রগুলো কথা বলে না কে জানে! এটার পিছনে কি কোনও এজেন্ডা আছে, না সত্যি প্রয়োজন ছিল?

চরিত্রগুলো একে অপরকে মিসড কল দেয়, কথা বলে না! কেন? বলতেই তো পারত মাছটা বাইরে আছে, ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখো। কিন্তু বলল না। পুরোটাই অসম্ভব প্রিটেনশাস লেগেছে আমার। আর শেষটা? না ছাড়ুন...

শেষটা কী হল?

শেষে যেখানে ওদের দেখা হল, সেটা তো পুরো অশোক বিশ্বনাথনের ছবি হয়ে গেল। মাঠের মধ্যে খাট। আমি বলছি না অশোক খারাপ ছবি বানায় কিন্তু ব্যাপারটা ক্লিশে। আর আমরা সবাই সত্যজিৎ, মৃণাল, বার্গম্যানের থেকে ইন্সপায়ার্ড। কিন্তু প্রত্যেকটা ফ্রেমে ইনফ্লুয়েন্সকে অ্যাডভার্টাইজ করার কী দরকার? এটা ‘মহানগর’, এটা বুদ্ধবাবু, এটা মৃণাল সেন— এ রকম করে সিনেমা হয় নাকি।

আপনার ছবিতেও পরম, যিশু, শাশ্বত। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ‘ক্যাফে কিনারা’তেও ওরা তিনজন।

হ্যাঁ, কী কাণ্ড! চুপিচুপি কাস্টিংটা করলাম। হঠাৎ করে আনন্দplus-এ দেখলাম টোনিরও একই কাস্টিং।

আপনার ‘ব্যোমকেশ’ কবে রিলিজ হচ্ছে? যিশুর ‘ব্যোমকেশ’?

পুজো। এই পুজোতে সৃজিতের ‘রাজকাহিনী’ আর ‘ব্যোমকেশ’। আমি অরিন্দমের ‘ব্যোমকেশ’‌য়ের আগে রিলিজ করতে চাইছি।

আবীরকে মাফ করে দিয়েছেন?

যিশুকে পেয়ে আবীর-সুবীর সবাইকে মাফ করে দিয়েছি। হি ইজ এক্সট্রাঅর্ডিনারি। বিয়ে ভাঙাটা খুব ডিফিকাল্ট। মানুষ সুইসাইড করার কথাও ভাবে। কিন্তু যখন আবার প্রেমে পড়ে, তখন জীবনকে মাফ করে দেয়।

আবীরের সঙ্গে বিচ্ছেদটা বিয়ে ভাঙার মতো দুঃখের ছিল।

হ্যাঁ। আই ওয়াজ ডিভাস্টেটেড।

অনেক দিন পর কথা হল। অঞ্জন দত্তর ইন্টারভিউতে ঝাঁঝ কমেছে একটু, কিন্তু চলে যায়নি।

আর ঝাঁঝের দরকার নেই। এ বার ঝাঁঝটা অন্য ফিল্মমেকাররা দেখাক। মন খুলে একটু কথা বলুক, আমি তো অনেক বললাম। এ বার মন দিয়ে ‘হেমন্ত’টা বানাই।

বেস্ট অব লাক।

থ্যাঙ্ক ইউ। চলুন বাইরে গিয়ে একটা সিগারেট ধরাই...

hamlet hemanta anjan dutta shakespear indranil roy anjan dutta new film ananda plus latest news anjan dutta interview abpnewsletters

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}